শিশু তারেক রহমানের চোখে পিতা জিয়াউর রহমান

রাসেল আহমদ
প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪১ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
প্রতিটি সন্তানের কাছেই তার পিতামাতা গর্বের বিষয়। বিশেষ করে যদি সেই পিতামাতার দেশের কল্যাণে অবদান থাকে এবং কোটি কোটি মানুষের সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা তাদের ঘিরে থাকে। তাহলে সেই সন্তানের জীবন হয়ে ওঠে স্বার্থক। তারেক রহমান তেমনি এক সৌভাগ্যবান সন্তান। তাঁর পিতা ছিলেন এদেশের জননন্দিত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। দিনের অধিকাংশ সময় রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকতে হতো সেজন্য তারেক রহমান ও তার ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকো পিতার সান্নিধ্য খুব কমই পেয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন শহীদ হন তখন তারেক রহমান ক্লাস নাইনে পড়েন। এ নিয়ে তাঁর এক স্মৃতিচারণ মূলক লেখায় উল্লেখ করেছেন 'বাবার মৃত্যু বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু ঘটনা স্মৃতির ক্যানভাসে জ্বলজ্বল করে।'
তারেক রহমান যখন ক্লাস নাইনে ওঠেন তখন কাকতালীয়ভাবে ক্লাসে নবম স্থান অধিকার করেন। সে বছরই বাবা-মা নেপাল যাবেন রাষ্ট্রীয় সফরে। এর আগে নেপালের রাজা স্বপরিবারে বাংলাদেশ সফরে আসেন। এরই পাল্টা সফরে তাঁরা সেখানে যাচ্ছেন। দেশটির রাজার ছেলেকে তারেক রহমান টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছে। কারণ বাবা কোনো রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতেন না। বাবা-মায়ের সফরে যাবার প্রস্তুতি চলছে।
তারেক রহমানের মাথায় চট করে একটা বুদ্ধি এলো। রাজার ছেলে যদি বেড়াতে আসতে পারে তবে আমরা কেন যেতে পারবো না। একদিন সন্ধ্যায় বাবাকে কাছে পেয়ে মায়ের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে বেশ জোরালো স্বরে বললো, 'রাজার ছেলে যদি রাজার সাথে বেড়াতে আসতে পারে তবে আমরা কেন তোমাদের সাথে যেতে পারবো না?' সঙ্গে সঙ্গে বাবা ঝট করে প্রচন্ড রাগের সঙ্গে বলে উঠলেন, 'তোমরা কোনো রাজার ছেলে নও। যাও পড়তে বসোগে।'
এরপর আর তারেক রহমানের ওখানে দাঁড়িয়ে থাকার সাহস হলো না। কারণ এর পরে দাঁড়িয়ে থাকলে উত্তম মধ্যমের ব্যবস্থা হতো। পড়ার টেবিলে গিয়ে বসে শুধু বইয়ের পাতা উল্টাতে থাকলেন, কিন্তু দুঃখে আর কষ্টে পড়ায় মন বসাতে পারলেন না। রাতে খাবার টেবিলে মা বললেন, বিদেশ তো যেতে পারলে না, দেখি তোমার বাবাকে বলে দেশের ভিতরে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাবো। কি এবার খুশি তো? মায়ের কাছে বেড়াবার আশ্বাস পেয়ে তারেক রহমান আর কোকো দু'ভাই মহাখুশি।
সময়টা ছিলো ১৯৮১ সালের জানুয়ারির শেষ দিক। স্কুল খুলে গেছে। দু'ভাই স্কুলে যাবার জন্য তৈরী হচ্ছিল। হঠাৎ মা এসে বললেন, আজ স্কুলে যেতে হবে না। আমরা সবাই বেড়াতে যাবো। তাড়াতাড়ি সুটকেস গুছিয়ে তৈরী হয়ে নাও। তারেক রহমানতো অবাক। কোকো আনন্দে চিৎকার দিয়ে বললো কি মজা! বেড়াতে যাবো। কিছুক্ষণের মধ্যেই দ'ভাই তৈরী হয়ে নিলেন। দৌড়ে গিয়ে গাড়ীতে উঠলেন দু'ভাই। বাবা মাও উঠলেন। বাড়ি থেকে সোজা এয়ারপোর্টে। গাড়ি থেকে নেমে হেলিকপ্টারে। হেলিকপ্টার ঢাকা থেকে সোজা মংলা বন্দরে এসে থামলো।
তারেক রহমান দেখলেন বাবা তার দিকে তাকিয়ে দেখি মুচকি মুচকি হাসছেন। তারপর কাছে ডেকে বললেন চলো জাহাজে উঠি। সবাই এক সঙ্গে চারতলা একটি জাহাজে উঠলেন। আহাজ ছাড়লো। কিছুক্ষণ পর তারেক রহমানকে ডেকে বাবা জিজ্ঞেস করলেন বলতো পিনু (তারেক রহমানের ডাক নাম) এই বন্দরটার নাম কি? তারেক রহমান কিছু চিন্তা না করেই জবাব দিলেন কি জানি! একটা নাম ফলকের দিকে দেখিয়ে বাবা বললেন ওই দেখ কি নাম।
তারপর জাহাজের মধ্যেই সরকারি লোকজনের সঙ্গে ফাইলপত্র নিয়ে মিটিং-এ বসলেন বাবা। আর দু'ভাই চারতলায় মায়ের কাছে গিয়ে বসলেন। সেদিন বিকেল বেলায় তারা সুন্দর বনের হিরণ পয়েন্টে গিয়েছিলেন। জাহাজ থেকেই দেখা যায় হরিণগুলো নদীর ধারে এসে পানি খাচ্ছে। বাবা এসে কখন যে পিছনে দাঁড়িয়েছেন তারেক রহমান টেরই পাননি।
পেছন থেকে বাবা বলে উঠলেন, কে কয়টা হরিণ গুণতে পারবে? তাড়াতাড়ি দু'ভাই হরিণ শুণে পাঁচ-ছটা পর্যন্ত গুণতে পারলেন। বাবাও তাদের সাথে সাথে গুণে পাঁচ-ছয়টাই হরিণ গুণতে পারলেন। তখন তিনি বললেন, তোমাদের দৃষ্টিশক্তি তো খুব ভালো। এই বলে নিচে নেমে গেলেন। হিরণ পয়েন্টের আরো এক জায়গায় বাবার মিটিং ছিল। তিনি যাবার পরেই মাকে নিয়ে দু'ভাই নীচে নেমে নদীর ধারে বেড়াতে লাগলেন। সন্ধ্যায় বাবা ফিরে এলেন। রাতে জাহাজের মধ্যে খাবার টেবিলে সবাই মিলে নানা রকম গল্প হলো। সেদিন বেশ রাত করে তারেক রহমান ঘুমাতে গেলো।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে জাহাজের জানালা দিয়ে দেখলো পরিচিত দৃশ্য, তাড়াতাড়ি দু'ভাই মুখ ধুয়ে কাপড় পরে বের হয়ে দেখলেন মা তাদেরকে ডাকতে আসছেন। তারেক রহমানকে দেখে তিনি বললেন, তাড়াতাড়ি এসো নাস্তা শেষ করো। নাস্তা শেষ করে দৌড়ে বাইরে এসে দেখলো বাবা বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের দেখে বাবা বললেন, বলতো এই নদীর নাম কি? সাথে সাথে তারেক বললেন বুড়িগঙ্গা। বাবা তখন বললেন, 'মাথায় তাহলে কিছু আছে, সাব্বাস'। জাহাজ এসে ঘাটে ভিড়ল, সবাই গিয়ে গাড়িতে উঠলো। বাসায় আসার পর বাবা অফিসে চলে গেলেন, রাতে যখন অফিস থেকে ফিরলেন তখনো তারেক রহমান জেগে। তারেক রহমানকে ডেকে বললেন খুশিতো? তারেক রহমান বললেন,হ্যাঁ।
এই ছিলেন তারেক রহমানের বাবা । তার ছিল সমুদ্রের মত বিশাল হৃদয়, আকাশের মত উদার মন। বিশাল সরকারী দায়দায়িত্ব সত্ত্বেও সারা দিনে সামান্য হলেও কিন্তু পরিবারকে সময় দিতেন। বাবার অনেক স্মৃতি তারেক রহমানের মনের পর্দায় গেঁথে আছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে স্মৃতিগুলিও গভীর থেকে গভীরতর হয়ে মনে গেঁথে যাচ্ছে।
লেখক: সংবাদকর্মী