আক্রান্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর
দোষীদের ছাড় নয়

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য ও আগুন-সন্ত্রাস দেশে নতুন কিছু নয়। আগে থেকেই একদল দুর্বৃত্ত সব সময়ই এ ধরনের ধ্বংসযজ্ঞে বিশ্বাসী। ওতপেতে থাকা এই দুর্বৃত্তের দল সুযোগ পেলেই দেশকে পঙ্গু করার জন্য আদাজল খেয়ে লাগে। তারা দেশ ও দেশের মানুষকে কেমন শান্তিতে রাখতে চায়, তা খুব স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে তাদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে। এবার তারা সুযোগ পেয়েছে ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিত।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিয়ে গত ১৪ জুলাই রাত থেকে রাজধানী ঢাকায় সহিংসতা শুরু করে পক্ষটি। ক্রমেই তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে। সড়ক-রেলপথ অবরোধ করে সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিসংযোগসহ নাশকতা চালানো হয়। তবে আন্দোলন ঘিরে তাদের নৃশংসতার প্রধান টার্গেট ছিল রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো। গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকালের আগেও অন্য সব ভবনের মাঝে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ছিল মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ৯ তলা ভবনটি। কিন্তু ওই দিন বিকাল ৪টায় দুর্বৃত্তের দেয়া আগুন সব ধ্বংস করে দেয়। দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে পুড়ে এখন নিকষকালো ভবনটি। আশপাশের রং করা ভবনগুলোর মাঝে জৌলুস হারানো পোড়া ভবনটিকে একেবারেই বেমানান লাগছে।
এখন ভবনের সামনে, ভেতরে, বেজমেন্টে কেবল পোড়া গাড়ি, পোড়া গন্ধ, আর চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে নাশকতার চিহ্ন, ধ্বংসস্তূপ। ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরের টাইলসগুলোও ভেঙে চৌচির। দেয়ালে টেরাকোটায় ভাস্কর্যটিও এখন বিদঘুটে হয়ে আছে। বিদ্যুৎহীন ভবনটির ভেতরে যেন গা ছমছম ভূতুড়ে পরিবেশ। কারফিউর মধ্যেও যারা এই পথে চলাচল করছেন, তারা খানিক থমকে তাকিয়ে দেখছেন পোড়া ‘শরীরে’ দাঁড়িয়ে থাকা ভবনটিকে। অধিদপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেই ধ্বংসস্তূপের সামনে এসে অপলক তাকিয়ে ফেলছেন দীর্ঘশ্বাস।
গতকাল ভোরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার দিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গেটে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুন দেয়ার আগে তারা পাউডার জাতীয় কিছু একটা ছিটিয়ে দেয়। আগুন দেয়ার পর তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যারা আগুন দিয়েছে, তাদের বয়স ২০ বছরের ওপরে নয়। আগুনে ভবনের সামনে থাকা কয়েকটি গাড়ি পুড়ে যায়। একপর্যায়ে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। ভবনের নিচতলায় সার্ভার রুম, কম্পিউটার ল্যাব ও ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমের অফিস ছিল।
এই ভবনে আগুনের ঘটনায় পাশে থাকা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সঞ্চালন তার বা অপটিক্যাল ফাইবার পুড়ে যায়। এই অপটিক্যাল ফাইবার থেকেই দেশজুড়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে যায়। এই ব্যাপারে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, দুর্বৃত্তরা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে; যা অবর্ণনীয়। পুরো ভবনজুড়েই সেই ক্ষত। দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে অধিদপ্তরের ৫৩টি গাড়ি ও ১৪টি মোটরসাইকেল পুড়ে যায়। এগুলো মেরামত অযোগ্য।
তিনি আরো বলেন, দুর্বৃত্তরা যখন আগুন দেয়, তখন আমি অফিসেই ছিলাম। ছড়িয়ে পড়া আগুনের তাপে সেখানে থাকা যাচ্ছিল না। মই দিয়ে টপকে পাশের ভবনে গিয়ে আমি ও আমার কয়েকজন সহকর্মী আত্মরক্ষা করি। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সারাদেশে বিছিন্ন হয়ে পড়ে ইন্টারনেট সংযোগ। যা পুনরায় ফিরিয়ে আনতে ব্যাপক বেগ পেতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। যেখানে সরকার দেশকে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে, সেখানে দেশকে পুনরায় অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে কারা! তাদের এখনই চিহ্নিত করা জরুরি। এদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হোক এই দুর্বৃত্তদের।