বিটিভি ভবনে হামলা
হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা হোক

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) সেন্টারে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) সেন্টারে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে টিভি সেন্টারের ভেতরের রিসিপশন, ক্যান্টিন ও একটি বাস পুড়ে যায়। দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিভিশনে হামলার ঘটনা নিন্দনীয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। স্বাধীন বাংলাদেশে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ছাড়া আর কখনোই বিটিভি এতটা আক্রান্ত হওয়ার তথ্য আমাদের জানা নাই। এ দীর্ঘ সময় পর হামলার ঘটনা সচেতন মহলে ভাবাচ্ছে।
বিটিভি ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনার পেছনে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতাদের যোগসাজশ রয়েছে। তারা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পরিকল্পনা, প্ররোচনা ও অর্থ জোগানের মাধ্যমে এই কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে। রাজধানীর রামপুরা থানায় দায়ের করা মামলায় এমন অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা চাই, মামলার সূত্রধরে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচিত হোক।
জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই সকাল সাড়ে ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির পক্ষে ছাত্রছাত্রীরা রামপুরা ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও বিটিভি ভবনের সামনে অবস্থান করে। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। এর পরই বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চার হাজার নেতাকর্মী সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। তারা পুলিশ ও আনসারের বাধা উপেক্ষা করে বিটিভি ভবনের চারটি গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। ভেতরে প্রবেশ করে ভবনে থাকা গাড়িসহ স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে রিসিপশন এবং ক্যান্টিনে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে।
সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এলেও বিক্ষোভকারীরা তাদের ঢুকতে দেয়নি। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও তারা আটকে রাখে। এতে সন্ধ্যায় সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। রাতে বিজিবি ভবনের নিয়ন্ত্রণ নিতে সমর্থ হয়। বিটিভির কয়েকজন সাংবাদিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভবনের ভেতরে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে আন্দোলনকারীরা ভবনটি দখলে নিতে চেষ্টা করে। বিটিভির সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকলেও তারা নিজেদের রক্ষায় ব্যস্ত ছিলেন। হামলায় বিটিভিতে নেমে আসে বিভীষিকা, যার চিহ্ন এখন এর পুরো প্রাঙ্গণে।
গতকাল ভোরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিটি ভবনের নিচতলায় মিউজিয়াম। ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন ছিল সেখানে। সাজানো-গোছানো কক্ষটি এখন চেনার কোনো উপায় নেই। পুরো কক্ষ এখনো ধ্বংসস্তূপ। মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভাঙা কাচ, দেয়াল থেকে খসে পড়েছে ঐতিহাসিক সব ছবি। ঘটনার বেশ কয়েক দিন কেটে গেছে। এখনো পোড়া গন্ধ ভেসে আসছে। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অগ্নিতাণ্ডবের ক্ষত।
পরিকল্পিতভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো ও বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য বিটিভিকে আক্রমণ চালিয়েছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্পদগুলোতে আক্রমণ চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এমন ঘটনা দেশের জন্য অশুভ। এ অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। বিশেষ করে বিটিভি ভবনে যারা আক্রমণ করেছে, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। কোনোভাবই এদের ছাড় দেয়া যাবে না।