×

পুরনো খবর

ভ্রমণে জীবন ও মৃত্যু নিয়ে রোমাঞ্চকর খেলার মুখোমুখি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৫২ পিএম

ভ্রমণে জীবন ও মৃত্যু নিয়ে রোমাঞ্চকর খেলার মুখোমুখি
   
এবার বসনিয়া বেড়াতে গিয়েছিলাম। শীত শুরু হবার আগে আগে ৯/১০ দিন থাকার জন্য ভাবলাম বসনিয়া-হেরজেগোভিনা যাই। কোন কাজ না, শুধুই বেড়াতে। নভেম্বর আর ডিসেম্বর নিয়ে এই সময়টাতে টুরিস্ট তেমন থাকে না। শূন্যের কাছাকাছি তাপমাত্রায় পাঁচটা বাজতে না বাজতেই ঝুপ কোরে সন্ধ্যা নেমে আসে। আমাদের প্লেন যখন সারায়েভো নামলো তখন মাত্র আটটা, কিন্তু দেখে মনে হয় মাঝ রাত। যে দেশেই যাই আমি খুব পছন্দ করি ল্যান্ডিংটা দুপুরের আগে নিতে। এবার হলো না। শান্ত এয়ারপোর্ট, ট্যাক্সির দাপাদাপি নেই, চুপচাপ লাইন করে দাঁড়িয়ে আছে। ১৫/২০ মিনিটের ড্রাইভেই হোটেলে পৌঁছে গেলাম। শহরের মাঝে আমাদের হোটেল, রাস্তায় অনেক গাড়ি। তবে খুব সুশৃঙ্খল আর পরিষ্কার। বড় দম নিয়ে নিঃশ্বাস নিলে নিমিষেই বুক ভরে যায়। হোটেলের রিসিপশনে মেয়েটা বলল ওরা সবাই ট্যাপের পানি খায়। অভয় পেয়ে আমরা দুজন একদিন ট্যাপের পানি খেয়েছি। খুব সুস্বাদু পানি। প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে ধোঁয়া ওঠা গরম কফি নিয়ে সিটিং রুমে বসে ঢাকার সাথে একঘণ্টা মিটিং করতাম। হোটেলের বুফে ব্রেকফাস্ট সেরে প্রতিদিনই কোন না কোন শহরে গেছি। ল্যান্ডস্কেপ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বসনিয়া হেরজেগভিনা তুলনাহীন। মাটি নদী আর পাহাড়- পুরোটাই খাঁটি, মনে হয় এখনো অনেকের স্পর্শ পড়েনি। গাড়ি চালাতে কি যে আনন্দ। তিনদিনের দিন ভিসেগ্রাদ নামে একটা শহরে গিয়েছিলাম। দুই ঘণ্টা দূরের শহর কিন্তু আমার প্রায় চার ঘণ্টা লেগেছিল। গাড়ি চালাতে চালাতে হয়তো পাহাড়ের অনেক উপর থেকে নিচে ছোট শহর দেখে ওখানে নেমে এসেছি। ছবির মতন সাজানো এক রাস্তার ছোট্ট শহরের কফিশপে বসে অযথা সময় কাটিয়ে আবার চলতে শুরু করেছি। ভিসেগ্রাদ শহরটা সার্বিয়ার সাথেই। একদিকে টলটলে পানির দ্রিনা নদী আর অন্যদিকে খাড়া উঠে যাওয়া কঠিন পাথরের উঁচু পাহাড়, মাঝ দিয়ে যাওয়া মসৃণ রাস্তা ধরে শহরে এসে পৌঁছেছি বিকাল সাড়ে তিনটায়। খুব বড় শহর না, শান্ত। খুব সাজানো না, কিন্তু খুবই অরিজিনাল, নিজের মতন কোরে বেড়ে উঠা একটা শহর। এখানে অটোমানদের বানানো একটা ব্রিজ আছে, খুব বিখ্যাত, ওটাও দেখতে গিয়েছিলাম। ১৬৭০ সালের দিকে বানানো ব্রিজটার নাম মেহমেত পাশা ব্রিজ। এটাকে কেন্দ্র করে বিখ্যাত বই দ্যা ব্রিজ অন দ্যা দ্রিনা লিখা হয়েছিল। ১৯৪৫ সালে লেখা বইটার জন্য বসনিয়ান লেখক ইভো আন্দ্রিস নোবেল পেয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে পুরস্কার দেয়ার সময় পেশায় ডিপ্লোমেট লেখক ইভো আন্দ্রিস যুগোস্লাভিয়ার লেখক হিসাবে পরিচিত ছিলেন, কারণ বসনিয়া তখন যুগোস্লাভিয়ার অংশ। বইটার ইংরেজি সংস্করণ সারায়েভো ফিরে কিনে নিয়েছি। খুব ইচ্ছা ছিল ভিসেগ্রাদে আরও সময় থাকতে। সন্ধ্যার আগেই হোটেলে ফেরা দরকার বলে বেশি একটা দেরি করলাম না। সারায়েভো ফেরার জন্য সাড়ে চারটায় রওনা দিয়ে দিলাম। দিনের আলোয় যত সহজে এসেছি ফেরাটা যে খুব সোজা হবে না তা আঁচ করতে পারছিলাম। আবার সেই দ্রিনা নদী পাশে রেখে ফিরছি, তবে এবার সূর্য ডুবে যাবার ছবি সামনে। অসাধারণ। গাড়ি চালাতে চালাতে কখন অন্ধকার হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। ওদিকে কয়েক ঘণ্টার পথ এখনো সামনে। সমতল রাস্তা যখন শেষ হয়ে গেল তখন আবার পাহাড়ে উঠছি, আবার নামছি। এক সময় স্নো শুরু হয়ে গেলো। মনে হয় পাহাড়ের অনেক উঁচুতে উঠে এসেছি তাই খুব ঠাণ্ডার সাথে স্নো পড়ছিল। রাস্তায় কোন আলো নাই। রাস্তা মোটেই প্রশস্ত না, দুটোর বেশি গাড়ি চলতে পারে না। ওভারটেকিংতো একেবারেই অসম্ভব। মাঝে মাঝে আচমকা বাঁক অথচ আমি ৫/৬ ফুটের দূরের কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। সামনে একটা আউডি গাড়িকে ফলো করে চলছিলাম। এর বাইরে কোন কিছু বোঝার কোন উপায় ছিল না। সামনের গাড়িটাও খুব সাবধানে ধীরে ধীরে চলছিল বলে আমার জন্য সুবিধা হচ্ছিল। হঠাৎ যা আশংকা করছিলাম তাই হলো। সামনের গাড়িটা অন্ধকারে যেন মিশে গিয়ে আমার সামনে থেকে হারিয়ে গেল। তখন প্রবল বাতাস শুরু হয়ে গেছে। সাথে স্নো আমার উইন্ডস্ক্রিন ঢেকে দিচ্ছিল। কিছুক্ষণের মাঝে আমার ভিতরটা যেন একেবারে শূন্য হয়ে গেল। আমার সামনে কেউ নাই, একটা বাঁকে এসে মিরর দিয়ে দেখলাম পিছনে লম্বা গাড়ির বহর। সবাই আমার পিছনে আর সামনে ঘুটঘুটে অন্ধকার। পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম দুই পাশে কয়েক হাজার ফুটের খাঁদ। আমি আমার স্পিড ২০/২৫ এ নামিয়ে আনলাম এই আশায় যদি কেউ ওভারটেক করে আমার সামনে আসতো। দেখলাম পিছনে প্রায় ৩০টার মতন গাড়ি, বোঝা যাচ্ছে সবাই লোকাল, কেউ এলো না, সবাই স্পিড কমিয়ে আমাকে সামনে রেখে চলছে। আমার ভোক্সওয়াগন পাসাত ৭ সিরিজের বিশাল দেহী গাড়িটি ঘোঘো কোরে পাহাড় বেয়ে উপড়ে উঠছে, উঠছে তো উঠছেই। বাইরে স্নো আর ভিতরে আমাদের দুজনের ঘন নিঃশ্বাসে উইন্ডস্ক্রিন ঘোলা হয়ে উঠছিল। আমি শক্ত হাতে স্টিয়ারিঙয়ে শরীর ঘেঁষে জেদ ধরে গাড়ি চালাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম পারতেই হবে। জীবন ও মৃত্যু নিয়ে কী রোমাঞ্চের খেলা। কতক্ষণ পরে জানি না, অনেক হাজার ফুট উঁচু, আঁকাবাঁকা নিচু এমন কয়েকটা পাহাড় পেরিয়ে কখন হঠাৎ শহরের আলো ঝলমলে সমতল চওড়া রাস্তা ধরে ফেললাম খেয়াল নাই। গাড়ি থামিয়ে দিশা ঠিক করে আনার জন্য কিছুক্ষণ শান্ত হয়ে বসে রইলাম। আমাদের বহরের পিছনের গাড়িগুলো পাড় হচ্ছিল আর আমাদেরকে থাম্বস আপ দিচ্ছিল, কেউ হাত নাড়ছিল, হর্ন দিচ্ছিল। তারা জানলো না তাদের সামনে ছিল দুদিন আগে জীবনের প্রথম বেড়াতে আসা সাধারণ এক বাংলাদেশি। যে অভিযাত্রী না, কিছুই না। ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ লেখক: আহমেদ হাসান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, রায়ান্স কম্পিউটার

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App