বিয়ের কাগজপত্র নেই, চার বছর জেল হতে পারে মামুনুল হকের

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২১, ০৮:২০ পিএম
প্রথম বিয়ে ছাড়া দুই জান্নাতকেই কন্ট্রাকচ্যুয়াল (চুক্তিভিত্তিক) বিয়ে করেছিলেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা দিতেই দুই ডিভোর্সি নারীকে বিয়ে করেছিলেন বলে রিমান্ডে তদন্তসংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি করেন মামুনুল। রিসোর্টকাণ্ডের ঘটনায় শুরুতেই বিয়ের কথা স্বীকার করলে প্রথম স্ত্রী আমেনা তৈয়বা বড় ধরনের কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলতেন বলে তার ধারণা ছিল। এ কারণে তৎক্ষণাৎ স্বীকার করেননি। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিনই অন্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্যের সঙ্গে এসব কথা বলেছেন মামুনুল। তবে এখন পর্যন্ত মামুনুল প্রথম বিয়ে ছাড়া বাকি দুই বিয়ের সপক্ষে কোনো আইনী প্রমাণ দেখাতে পারেননি বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ অবস্থায় তার দুই বিয়ের বৈধতা-অবৈধতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্রেশন আইন অনুযায়ী, কাবিন হলো বিয়ের আইনী দলিল। মুসলিম পারিবারিক আইনে বিয়ের নিবন্ধন একটি প্রামাণ্য দলিল হিসেবে কাজ করে। নিবন্ধন ছাড়া স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক প্রমাণ করা কঠিন। বিয়ের নিবন্ধন না থাকা দেশের আইনে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধে দুবছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও তিন হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। [caption id="attachment_279191" align="aligncenter" width="602"]
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিবাহ রেজিস্ট্রি আইন অনুযায়ী মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে তার ‘চুক্তিভিত্তিক’ দুই স্ত্রী অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রথম শ্রেণীর মেজিস্ট্রেট কোর্টে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যদি বৈধ কাগজপত্র (কাবিননামা) দেখাতে না পারেন, তাহলে মুসলিম বিবাহ আইন অনুযায়ী তিনি দুই বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা তিন হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এক্ষেত্রে কাগজপত্রহীন দুই বিয়ের জন্য ৪র বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড হতে পারে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রিমান্ডের প্রথম দিনে গোয়েন্দাদের মামুনুল জানিয়েছেন, যে দুটি বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ওই দুই নারীর সঙ্গে অনেক দিন ধরে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করে আসছেন তিনি। তবে বিয়ে সংক্রান্ত কোনো বৈধ কাগজপত্র তার কাছে নেই। কাবিনও নেই। ওই দুই নারীর ডিভোর্স হওয়ায় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই তাদের দিকে এগিয়ে যান তিনি। একজনকে মোহাম্মদপুরের একটি মাদরাসায় চাকরিও দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে শর্ত ছিল বিয়ে প্রকাশ করা যাবে না। আত্মীয়স্বজন ও সমাজের কাছে তাদের প্রতিষ্ঠিত করা হবে না। তবে ভরণপোষণ দেওয়া হবে। কাগজপত্র ও কাবিন না থাকা সত্ত্বেও বিয়ে কিভাবে বৈধ হলো, এমন প্রশ্নের উত্তরে অসংলগ্ন কথা বলেছেন মামুনুল হক।
সংশ্নিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, এরই মধ্যে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ভেতরে-বাইরে তিনি দ্বৈত চরিত্রের অধিকারী- এটি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর থেকে তার মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে কথিত বিয়ের কাহিনি ফাঁস হওয়ার পর থেকে ঘরে-বাইরে চাপে আছেন তিনি। হেফাজতের ভেতরেও একটি অংশ তার কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষুব্ধ।
জানা যায়, রিসোর্টকাণ্ডের পর এসব বিয়ে প্রকাশ পেলে এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথম স্ত্রী তিন সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান। আর এ ঘটনায় প্রথম স্ত্রীসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে বিরাগভাজন হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে বাসায়ও যাননি তিনি।