ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে নৃশংস পদক্ষেপ নিয়েছিল আ. লী সরকার: ফলকার টুর্ক

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:০১ পিএম

ফলকার টুর্ক
বাংলাদেশের জনগণের বিরোধিতা উপেক্ষা করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছিল সাবেক সরকার। সেই লক্ষ্যে তারা বিক্ষোভ দমনের কৌশল নেয়, যার অংশ হিসেবে শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচার গ্রেপ্তার-আটক ও নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক মনে করেন।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের সময় আওয়ামী লীগের সহিংস কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিল। ক্ষমতা ধরে রাখতে সাবেক সরকার সহিংস পথ বেছে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেছিল বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক বলেন, জনবিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার কৌশল হিসেবে সাবেক সরকার একটি সুসমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে নৃশংস দমন-পীড়ন চালায়। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে এবং নির্দেশনায় শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচার গ্রেপ্তার-আটক ও নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা যে সাক্ষ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করেছি, তা রাষ্ট্রীয় সহিংসতা ও নিশানা করে হত্যার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। এটি সবচেয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধের শামিল হতে পারে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয় ক্ষত সারাতে এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। প্রাণহানির ঘটনাগুলো নিয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় গত সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধিদল পাঠায়।
ওই প্রতিনিধিদলে ছিলেন মানবাধিকারবিষয়ক তদন্তকারী, একজন ফরেনসিক চিকিৎসক ও একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার তদন্তকাজে ব্যাপক সহযোগিতা করেছে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য ও নথিপত্র সরবরাহ করেছে।
বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত মৃত্যুর তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হয়েছেন।
যখন সাবেক সরকার দেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করেছিল, তখন সংঘটিত প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড এবং আওয়ামী লীগ কর্মী ও সমর্থক, পুলিশ, গণমাধ্যম কর্মীদের লক্ষ্য করে অন্যান্য গুরুতর প্রতিশোধমূলক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সেগুলোও এ প্রতিবেদনে নথিভুক্ত করা হয়েছে। হিন্দু, আহমদিয়া মুসলিম এবং চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোর আদিবাসী জনগণও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে।
যদিও বিভিন্ন ধর্মীয় ও আদিবাসী গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রায় ১০০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। তবে অনেক প্রতিশোধমূলক সহিংসতা এবং এসব গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণের পরও অপরাধীরা এখনো দায়মুক্তি উপভোগ করছে—এমন কথা উঠে আসে প্রতিবেদনটিতে। প্রতিবেদন অনুযায়ী নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ ছিল শিশু। বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, তাদের ৪৪ জন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।