বিকেল পর্যন্ত ধানমন্ডিতে যা যা ঘটলো

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৩১ পিএম

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটির অনেক অংশই গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। সেদিন গণভবনের পাশাপাশি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিলেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এর পর থেকে বাড়িটি অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। গণঅভ্যুত্থানের ছয় মাস পূর্তি ছিল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি)।
বুধবার শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে ক্রেন ও এক্সকাভেটর এনে বাড়ি ভাঙা শুরু হয়। বুধবার থেকে আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর পর্যন্ত ধানমন্ডিতে কী কী ঘটল, তা একনজরে দেখে নেয়া যাক।
১. হাসিনার বক্তৃতা প্রচারের ঘোষণা
বুধবার রাত ৯টায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচার করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বুধবার দিনভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তেজনা চলে। বিকেলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য শরিফ ওসমান হাদি। সন্ধ্যা সাতটার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আজ (বুধবার) রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমিমুক্ত হবে।’
২. ‘বুলডোজার’ মিছিলের ডাক
হাসিনার বক্তৃতা প্রচারের ঘোষণার প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া অনেক ছাত্র-জনতাসহ অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফেসবুকে ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিল’ ও ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ কর্মসূচির ডাক দেন। তারা ঘোষণা দেন, বুধবার রাত ৯টায় শাহবাগে জড়ো হয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে যাত্রা শুরু করবেন।
৩. ৩২ নম্বরে বিক্ষোভ-ভাঙচুর
বুধবার রাত আটটার আগেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা জড়ো হতে থাকেন। তারা সেখানে বিক্ষোভ করতে থাকেন। রাত আটটার দিকে বিক্ষোভকারীরা শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করেন। তারা বাড়ির সামনে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালও ভাঙচুর করেন।
৪. ভবনে আগুন
বুধবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ভবনের তৃতীয় তলার একটি জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়। পরে আগুনের মাত্রা আরো বাড়ে। রাত ৯টার দিকে লাঠিসোঁটা ও শাবল দিয়ে বাড়ির সীমানাপ্রাচীর ভাঙা শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনীর একটি দল ৩২ নম্বর বাড়িটির সামনে যায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেয়া শুরু করেন। একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর দলটি সেখান থেকে মিরপুর রোডের দিকে চলে যায়।
৫. বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দেয়ার দাবি
বুধবার রাত ১০টার দিকে বিক্ষোভকারীরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটির বিভিন্ন অংশ ভাঙার চেষ্টা করেন। আর তখন বাড়িটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে সামনের সড়কে বিক্ষোভ চলছিল। অন্যদিকে বাড়িটির কাছেই ধানমন্ডি লেকের পাশে খোলা জায়গায় প্রজেক্টর বসিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে প্রামাণ্যচিত্রের প্রদর্শনী করা হচ্ছিল।
৬. সুধা সদনে আগুন
বুধবার রাত সাড়ে ১০টার পর ধানমন্ডি ৫-এ অবস্থিত শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে আগুন দেয়া হয়। পরে আগুন ভবনটিতে ছড়িয়ে পড়ে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে আগুনের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। তবে ‘নিরাপত্তা না থাকায়’ তারা আগুন নেভাতে যায়নি।
৭. ভারী যন্ত্রে ভবন ভাঙা শুরু
বুধবার রাত ১১টার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে একটি ক্রেন নিয়ে আসেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। পরে আনা হয় একটি এক্সকাভেটর। মধ্যরাতে এই ভারী যন্ত্র দিয়ে ভবন ভাঙা শুরু হয়। রাত দুইটা নাগাদ বাড়িটির বড় অংশ ভাঙা শেষ হয়। ভবন ভাঙার কাজ চলার মধ্যে বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারী স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ, মুজিববাদ ও আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। রাতভর ভবন ভাঙার কাজ চলে।
৮. সকালেও ভাঙার কাজ
আজ ফজরের নামাজের পর অনেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যান। সকাল থেকে দেখা যায়, ভারী যন্ত্র দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ভবনটি ভাঙা হচ্ছে। তখনো বাড়ির সামনে মানুষের ভিড় দেখা যায়। আজ (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১টার দিকে দেখা যায়, বাড়িটির অনেক অংশই গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
৯. আরেকটি ভবন ভাঙা হচ্ছে
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের পেছনের উত্তর দিকের ছয়তলা ভবনটিও ভাঙা হচ্ছে। আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টার দিকে দেখা যায়, পেছনের ছয়তলা ভবনে শত শত মানুষ ঢুকছেন। ভবনটির ভেতর থেকে বই, স্টিল, লোহা, টিন, কাঠসহ বিভিন্ন জিনিস ভেঙে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। তখন ভবনটির ভেতর থেকে হাতুড়ির আঘাতে নানা কিছু ভাঙার শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
১০. আজও সুধা সদনে আগুন জ্বলছিল
আজ (বৃহস্পতিবার) বেলা পৌনে ১১টার দিকে সুধা সদনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের দোতলায় আগুন জ্বলছে। বাড়িটির সামনে পড়ে আছে ফ্রিজ, খাট, ওয়ারড্রব, সোফাসহ নানা সামগ্রী। ভবনের নিচতলা থেকে চারতলার বিভিন্ন কক্ষে আগুন ও ভাঙচুরের চিহ্ন দেখা যায়। কোথাও কোথাও টাইলস খুলে ফেলা হয়েছে। পোড়া গন্ধ চারদিকে। বাড়িটির সামনে উৎসুক কয়েক শ মানুষের ভিড় দেখা যায়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ যেসব অক্ষত জিনিসপত্র আছে, সেগুলো নিয়ে যাচ্ছিলেন।
১১. বিকেলে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি সমতল করা হচ্ছে
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে প্রথমে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। পরে আগুন দেয়া হয়। এরপর ক্রেন ও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া। বৃহস্পতিবারও (৬ ফেব্রুয়ারি) সেটি ভাঙা হয়। এতে অংশ নেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই ধ্বংসযজ্ঞ হলে। বিকেলে সমতল করার কাজ চলছে।