ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠনে প্রস্তুত, ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে ড. ইউনূস

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৪ এএম

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত
ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করতে প্রস্তুত। ছাত্ররা দল গঠন করবে। এ লক্ষ্যে তারা দেশজুড়ে লোকজনকে সংগঠিত করছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের দাভোস সফরে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে এ কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রধান বৈদেশিক বিষয়ক ভাষ্যকার গিডেয়েন র্যাচম্যানের পডকাস্টে দেয়া সাক্ষাৎকারটি লিখিত আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
পডকাস্টে ড. ইউনূস বলেন, ছাত্ররা দল গঠন করবে। শুরুতে যখন আমি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করছিলাম, আমার উপদেষ্টা পরিষদে তখন তিন ছাত্রকে নিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, যদি তারা দেশের জন্য জীবন দিতে পারে, তারা উপদেষ্টা পরিষদে বসতেও পারে এবং যেটির জন্য জীবন দেয়া হলো, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্তও নিতে পারে। তারা এখন ভালো কাজ করছে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা এখন বলছে, কেন আমরা আমাদের নিজেদের দল গঠন করছি না। আমরা একটি সুযোগ নেব।তবে ছাত্রদের দল গঠনের বিষয়টিকে অনেকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। ছাত্ররা দল গঠন করলে একটি আসনও পাবে না এমন কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু তিনি তাদের উৎসাহ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস।
তিনি বলেন, তারা বলছে, ছাত্রদের কোনো সুযোগ নেই। এবং ছাত্ররা সংসদে একটি আসনও পাবে না। কারণ কী? কারণ কেউ তাদের চেনে না। আমি বলেছি, পুরো দেশ তাদের চেনে। তাদের একটি সুযোগ নিতে দাও। তারা যাই করতে চায়, তাই করবে।
আরো পড়ুন : রাজনৈতিক দল গঠন বা পদত্যাগের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি: নাহিদ
তবে দল গঠন করলে দেশের নষ্ট রাজনীতি এবং রাজনীতিবিদদের কবলে পড়ে ছাত্ররা বিভক্ত হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি চান, ছাত্ররা দল গঠন করুক। তিনি বলেন, সম্ভবত দল গঠনের প্রক্রিয়ার সময় তারা বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। এটি একটি বিপদ। কারণ এতে রাজনীতি যুক্ত হবে। সব রাজনীতিবিদরা তাদের মধ্যে ঢুকবে। তাই আমরা জানি না, বাংলাদেশে যে রাজনীতি রয়েছে সেখান থেকে তারা তাদের মুক্ত করতে পারবে কি না। তবে এটি একটি ঝুঁকি, যা আমাদের নিতে হবে। ছাত্ররা দল গঠনে তৈরি আছে। তারা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করছে, এটা দরকার। কারণ তারা রক্ত দিয়ে যেগুলো অর্জন করেছে, সেগুলো রক্ষা করতে হবে। নয়ত সুযোগ সন্ধানীরা সেগুলো নিয়ে যাবে। যারা আগের মতো সবকিছুর পুনরাবৃত্তির সুযোগ খুঁজছে।
পডকাস্টে বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ার বিষয়েও কথা বলেছেন ড. ইউনূস। তিনি বলেছেন, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ছাত্ররা। আমি তাদের চিনতাম না। তাদের সম্পর্কে আগে কিছু শুনিনি। আমি তাদের বোঝাতে থাকি, তোমরা অন্য কাউকে দায়িত্ব নেয়ার জন্য খুঁজে বের কর। কিন্তু তারা আমাকে বলে, ‘না, না, আপনাকে এখানে থাকতে হবে। আমরা অন্য কাউকে খুঁজে পাব না।’ আমি তাদের বলি ‘চেষ্টা করে দেখো’। কিন্তু তারা বলে, না আমাদের সময় নেই। তারা নাছোড়াবান্দা ছিল। আমি তাদের অন্তত একদিন চেষ্টা করতে বলি। কিন্তু তারা রাজি হয়নি। এরপর তারা আমাকে আবারো ফোন করে। তখন আমি বলি, ঠিক আছে তোমরা জীবন দিয়েছ। এবং অনেক রক্তপাত হয়েছে। তোমরা যেহেতু এতকিছু করতে পেরেছো, ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও আমার কিছু করা উচিত।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ছাত্ররা আমাকে জানায়, সরকার গঠন করতে হবে, আপনি কী রাজি। আমি বলি হ্যাঁ, রাজি।
পডকাস্টে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তিনি নির্বাচনের সম্ভাব্য যে দুটি সময়ের কথা বলেছেন, তা ভালো সময়। কারণ, তিনি জাতীয় ঐক্য ধরে রাখছেন। তিনি এটা থেকে বিচ্যুত হতে চান না।
সেখানে ইসলামিস্টরা রয়েছে, যারা দেশের নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছে–ভারতের এমন অভিযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা এমন লক্ষণ দেখি না। অন্তত আমি এখন কোনো লক্ষণ দেখি না। তরুণেরা সত্যিই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের খারাপ কোনো কিছুর সঙ্গে সংস্পর্শ নেই বা নিজেদের রাজনৈতিক আখের গোছানোর ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা নেই। তারা এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দল গঠন করছে বা রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছে। এটা দরকার। কারণ, রক্ত দিয়ে তারা যেগুলো অর্জন করেছে, সেগুলো তাদেরকে রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় সেগুলো সেই সব ব্যক্তি নিয়ে যাবে, যারা বিগত প্রশাসন ও অন্যান্যের মতো সব কিছুর পুনরাবৃত্তি করার সুযোগ খুঁজছে। এটাই বাংলাদেশে আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ। সুতরাং তারা এটা রক্ষা করার চেষ্টা করছে। তাই আমি বলব, ছাত্রদের স্বচ্ছ অভিপ্রায় থাকবে।