×

জাতীয়

এ বছর শৈত্যপ্রবাহ কম হওয়ার কারণ

Icon

বিবিসি

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:১১ পিএম

এ বছর শৈত্যপ্রবাহ কম হওয়ার কারণ

রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডু, রাঙ্গামাটি শৈত্যপ্রবাহপ্রবণ অঞ্চল। ছবি: সংগৃহীত

   

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, শীতকালে কনকনে ঠান্ডা বলতে যা বোঝায়, তা এখন শুধু বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষই টের পায়। তবে ওই দুই অঞ্চলের কোনো কোনো স্থানে ঠান্ডার অনুভবটা বেশি হলেও তার পেছনের কারণ কোনো শৈত্যপ্রবাহ না। আবহাওয়াবিদদের মতে, উত্তরাঞ্চলে ঠান্ডা পড়ছে কুয়াশার কারণে।

তারা আরো বলেন, এবছর দেশে শৈত্যপ্রবাহের সংখ্যা কম। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মিলিয়ে এখন অবধি বাংলাদেশ তিনটি শৈত্যপ্রবাহ দেখেছে। যদিও সেগুলোর সবগুলোই ছিল মৃদু ও মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ এবং তার প্রভাব পড়েছে কেবল ওই উত্তর-পূর্বাঞ্চলেই।

উত্তরের জেলা লালমনিরহাটের বাসিন্দা তবে রাজধানী ঢাকায় চাকরির সুবাদে থাকছেন হোসাইন রাব্বির ভাষ্য মতে, ‘অনেকদিন পর বাড়িতে এসেছি। এখানে যে পরিমাণ শীত, সেই তুলনায় ঢাকায় কোনো শীতই নাই।’

আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদ বলেছেন, এ বছর মূলত রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে এবং সেইসঙ্গে যশোর ও কুষ্টিয়ায় শৈত্যপ্রবাহ দেখা গেছে।

আবহাওয়া মিলছে না পূর্বাভাসের সঙ্গে

গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তিন মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে আবহাওয়া অফিস বলেছিলো, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে মোট ১২টি শৈত্যপ্রবাহ ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে।

সেসময় বলা হয়, এই সময়ের মধ্যে অন্তত তিনটি, সর্বোচ্চ আটটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে তিন-চারটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বইতে পারে।

কিন্তু আবহাওয়ার পূর্বাভাসের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

আবহাওবিদরা জানিয়েছেন, এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরের শেষদিকে একটি এবং এখন পর্যন্ত জানুয়ারিতে দুইটি মৃদু ও মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ হয়েছে। তবে আগামী দুই একদিনের মধ্যে দেশের কোনো কোনো স্থানে আরেকটি শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে।

এদিকে, তখন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ১২টি শৈত্যপ্রবাহের কথা বললেও সেই সংখ্যাটা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন অধিদপ্তরের সাবেক আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল মান্নান।

তিনি তখন বলেছিলেন, সাধারণত একেকটি শৈত্যপ্রবাহের স্থায়িত্ব হয় তিন থেকে পাঁচ দিন। সে হিসাবে জানুয়ারি মাসে তিন থেকে চারটি শৈত্যপ্রবাহ হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে দুইটি হয়।

‘আর ডিসেম্বরের অর্ধেক চলে গেছে। ডিসেম্বরে যদি একটি শৈত্যপ্রবাহ হয়, তাহলেও হয় সাতটি,’ এই তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, এ বছরের শৈত্যপ্রবাহের সংখ্যা সর্বোচ্চ আটটি হতে পারে। এর বেশি কিন্তু হবে না। তবে তিন দিনের হিসাব ধরলে সেটি ভিন্ন,’ যোগ করে বলেছিলেন এই আবহাওয়াবিদ।

শীতের অনুভূতির ভিন্নতা ও কুয়াশা

গত বছরের ডিসেম্বরে বলা হয়েছিলো যে কুয়াশার কারণে শীতের অনুভূতি বেশি হবে।

তবে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ আজ (শনিবার) বলেন, শৈত্যপ্রবাহের সংখ্যা কমে গেলেও সামগ্রিকভাবে শীত কম। কুয়াশার কারণে কোথাও কোথাও শীতের তীব্রতা আছে।

আরেক আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘কাছাকাছি সময়ে এরকম আবহাওয়া দেখিনি।’

তার মতে, এ বছর সারা দেশের কোথাওই সেভাবে শীত পড়েনি। ‘উত্তরবঙ্গে যে ঠান্ডা লাগছে, তা শৈত্যপ্রবাহের কারণে না। ওখানে শৈত্যপ্রবাহ ছিলই না কয়েকদিনে। ওখানে দিনেরবেলা সূর্য নাই, তাই সেখানে তাপমাত্রা কম এবং মানুষের শীতের অনুভূতি বেশি।’

তিনি আরো বলেন, ‘রাতের তাপমাত্রা ১০-এর ওপরে থাকুক বা যা-ই থাকুক, আর দিনেরবেলা যদি সূর্য না ওঠে, তাপমাত্রা ১৫ এর কাছাকাছি থাকে। এর মানে শীতের অনুভূতি তীব্র আকারের।’

আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, ‘তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর কুয়াশার পরিমাণও বেশি ছিল না। অন্যান্য বছর টানা কয়েকদিন কুয়াশা থাকে, সূর্যের আলো দেখা যায় না। এ বছর শুধু রংপুরেই দুই একদিন ধরে কুয়াশা দেখা গেছে। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ জায়গায় রোদ বেশি পাওয়া গেছে।’

তার মতে, কুয়াশার প্রভাব কম থাকার কারণেও মানুষের শীতের অনুভূতি কম।

আবহাওয়াবিদরা জানান, কুয়াশা কেটে গেলে শীতের তীব্রতাও কমে আসবে।

মূলত, লম্বা সময় ধরে ঘনকুয়াশা পড়লে সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠে পড়ার সুযোগ পায় না। ফলে তা ভূমিকে উত্তপ্ত করতে পারে না এবং শীত বেশি লাগে।

এর সঙ্গে সূর্যের দক্ষিণায়ন বা সূর্যের আলোর প্রাপ্যতা কমে যাওয়াও শীত বাড়ার একটি কারণ। সাধারণত সূর্যের আলোর প্রাপ্যতা সাধারণত আট থেকে ১০ ঘণ্টা হবার কথা। কিন্তু কুয়াশা বেশি হলে এবং বেশিক্ষণ থাকলে ভূপৃষ্ঠ সূর্যের আলো পায় পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা।

শৈত্যপ্রবাহ কমার কারণ

দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে গেলে শীত বেশি অনুভূত হয়। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, রাতের তাপমাত্রা কমতে পারছে না। গতবারও ঘন কুয়াশার কারণে দুই সপ্তাহের মতো দিনের তাপমাত্রা কমে গেছে।

বাংলাদেশে গত কয়েকবছরে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ আসেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বছর এই সময়ে ওপর থেকে যে হিমেল হাওয়া নিচে নেমে আসার কথা। তার জন্য পশ্চিমা লঘুচাপ থাকতে হয়। পশ্চিমা লঘুচাপ তৈরি হয় ভূমধ্যসাগরে। ওখান থেকে কাশ্মীর হয়ে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। কিন্তু ওদিক থেকে এবার বাতাস ঢুকতে পারে নাই।’

শৈত্যপ্রবাহ কম হওয়ার হওয়ার আরেকটি কারণ, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের বিচরণ।

আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, ‘এবার ডিসেম্বরের পুরোটা সময় জুড়েই দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের বিচরণ ছিল। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ থাকার কারণে এই পুরো অঞ্চলটায় তাপ বেশি ছিল। সে কারণে শীতের মাত্রা জোরালোভাবে আসতে পারে নাই।’

এর পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা কতটা জানতে চাইলে ওমর ফারুক বলেন, ‘কোনোকিছু দীর্ঘমেয়াদে হলে জলবায়ু পরিবর্তন বলা যায়। এক দুই বছরের পরিবর্তন জলবায়ু পরিবর্তন না। আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে।

তবে আবহাওয়া অফিস বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল, এই ৩০ বছরে বাংলাদেশের যে তাপমাত্রা এবং ১৯৯১ থেকে ২০২০ সাল, ৩০ বছরের যে তাপমাত্রা, তা তুলনা করলে দেখা যায় যে সাম্প্রতিক সময়ে সারা বছরের তাপমাত্রাই বেড়েছে ও বৃষ্টিপাত কমেছে।

শৈত্যপ্রবাহ কী?

বাংলাদেশে সাধারণত শীত পড়ে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে। এ সময় হিমালয়ের পাদদেশ থেকে ঠান্ডা বাতাস উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এসময় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়। ফলে শীত অনুভূত হয়। যদি এই তাপমাত্রা কমতে কমতে নির্দিষ্ট মাত্রায় পৌঁছায় তখন শৈত্যপ্রবাহ চলছে বলে ধরে নেয়া হয়।

তাপমাত্রা যদি ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় তবে সেটাকে ধরা হয় ‘মৃদু শৈত্যপ্রবাহ’।

তাপমাত্রা এরচেয়ে কমে ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে হয় ‘মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ’। ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটাকে ‘তীব্র শৈত্যপ্রবাহ’ ধরা হয়।

আর তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে সেটি হয় ‘অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ’।

তবে শৈত্যপ্রবাহ হিসাবে ধরতে হলে এই তাপমাত্রার স্থায়িত্বকাল অন্তত তিনদিন হতে হবে। অর্থাৎ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেও তাকে কমপক্ষে তিনদিন থাকতে হবে।

বাংলাদেশের মূলত উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এলাকা শৈত্যপ্রবাহ প্রবণ।

শীতকালে বাংলাদেশে যে ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হয় তা ভারতের দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App