শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবাসীদের ভিআইপি মর্যাদা প্রশ্নের মুখে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫৮ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনায় দেশে ও বিদেশে প্রশ্নের মুখে পড়েছে প্রবাসীদের ভিআইপি মর্যাদা। প্রবাসীদের ভিআইপি মর্যাদা দেয়ার কথা বলা হলেও উল্টো পিটিয়ে রক্তাক্ত করার ঘটনা যাত্রীদের বিশেষ করে প্রবাসীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, বিমানবন্দরের সার্বিক পরিচালনার দায়িত্বে থাকা নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম, এভিয়েশন সিকিউরিটির প্রধান (এভসেক) উইং কমান্ডার জাহাঙ্গীর হোসেনসহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া সুবিধাবাদীদের বিতর্কিত কর্মতকাণ্ডে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে বিমানবন্দরের কর্মকাণ্ড।
গত ৫ আগষ্টের পর এই দুই কর্মকর্তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণেও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের অনেকেই তাদের ওপর নাখোশ। তাদের খামখেয়ালিপনায় মূলত বিমানবন্দরের ভিআইপি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রবাসীরা। এছাড়াও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলার অন্যতম অসামীদের শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তাকারী হিসেবে এই দু’জনকেও সন্দেহ করা হয়।
এছাড়াও দেশের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রভাবশালী আসামিরা এই বিমানবন্দর দিয়ে পালাতে পারে। আর তাদের এই দুইজন কর্মকর্তা পালাতে সহায়তা করছে বলে আশঙ্কা রয়েছে। আওয়ামী লীগের এমপি মন্ত্রিদের পালাতে সহায়তা ছাড়াও বিগত ৫ আগষ্টের পর বিমানবন্দরের যাত্রীদের সঙ্গে কয়েকটি ঘটনা আলোচিত হয়।
আরো পড়ুন: ভোটার তালিকা হালনাগাদে কারিগরি সহায়তা দেবে ইউএনডিপি
এর মধ্যে বিমানবন্দরের টার্মিনাল ১ এর অ্যারাইভাল ক্যানোপিতে এক সিএনজি ড্রাইভারকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এক যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আহত করা, যাত্রীর নারী স্বজনকে ধাক্কা দেয়া, যাত্রীর এক পুরুষ স্বজনকে ক্যানোপির মধ্যেই প্রকাশ্য মারধর করা।
সর্বশেষ গত ৮ জাুনয়ারি নরওয়ে প্রবাসী সাঈদ খানকে ব্যাপক মারধর করে মুখ ও মাথা ফাটিয়ে ফেলা হয়। একই সময় সাঈদ খানের পিতা গিয়াস উদ্দিনসহ তার পরিবারের ৫ সদস্যদের হেনস্থার শিকার হন। উল্টো এই ঘটনায় সাঈদকে জরিমানা পর্যন্ত করা হয়েছে। এছাড়া মানবপাচারকারীকে ধরে ছেড়ে দেয়াসহ প্রায় প্রতিদিন নানা ধরণের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিরও অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি বিমানবন্দর ঘিরে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলার আসামি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ বেশ কিছু মন্ত্রী ও এমপি এই বিমানবন্দর ব্যবহার করেই দেশত্যাগ করেছেন এমন প্রমাণও পেয়েছে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। বিমানবন্দরের সার্বিক বিষয় দেখাশুনার দায়িত্ব নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল এবং নিরাপত্তার প্রধান উইং কমান্ডার জাহাঙ্গীর হোসেন তত্ত্বাবধান করেন এভসেক। সেহেতু তাদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টির সম্পূর্ণ দায়ভার এই দুই কর্মকর্তার ওপর বর্তায়।
আরো পড়ুন: পাঠ্যপুস্তক থেকে আদিবাসী শব্দ তুলে নেয়ায় ৫০০ নাগরিকের বিবৃতি
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, অতি সম্প্রতি এই বিষয়গুলো নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় গুরুতর অভিযোগগুলো উঠে আসে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম। আর ২০২৪ সালের মে মাসে এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্সের (এভসেক) প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান উইং কমান্ডার জাহাঙ্গীর হোসেন। বিগত সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন তারা।
এছাড়া ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট বেবিচকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া। তিনি যোগদানের পর বিগত সরকারের আস্থাভাজন ও সুবিধাবাদী বেশ কিছু কর্মকর্তাকে বদলিসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এমনকি থার্ড টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালককেও অপসারণ করা হয়। কিন্তু কামরুল ও জাহাঙ্গীর সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং সংবাদ সম্মেলনে তাদের প্রশংসা করেছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান।