বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা আগে থেকেই জানতেন শেখ হাসিনা!

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:৪৬ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর ম্যাসাকারের পরিকল্পনা আগে থেকেই জানতেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর তত্ত্বাবধানে। হত্যাকাণ্ডের জন্য ভারতের প্রশিক্ষিত একটি কিলার গ্রুপকে ঢাকায় আনা হয়।
এরা ভাড়া করা বিপথগামী বিডিআর সদস্যদের সঙ্গে মিলে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিক, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম, শেখ ফজলে নূর তাপস, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম এবং সেনাবাহিনী ও পুলিশের কিছু কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন।
রাজধানী পিলখানার সদর দপ্তরে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঘটেছিল দেশের ইতিহাসে নৃশংসতম এই বিডিআর হত্যাকাণ্ড। দেশের একটি স্বনামধন্য পত্রিকার অনুসন্ধানে এ সম্পর্কে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।
এতে জানা যায়, ভারতীয় কিলার গ্রুপের একটি অংশকে খেলোয়াড় বেশে বিডিআরের একটি পিকআপে করে এবং আরেকটি অংশকে রোগী সাজিয়ে নম্বরবিহীন অ্যাম্বুলেন্সে করে পিলখানায় ঢোকানো হয়। রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে তারা পিলখানা ত্যাগও করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের ধারণা ভারতীয় কিলার গ্রুপটিকে ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে বিমানের দুবাইগামী ফ্লাইটে তুলে দেয়া হয়।
এজন্য ফ্লাইটটি দুই ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়ে। আরো জানা গেছে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর লোকজন ও কিলার গ্রুপের সদস্যরা ফার্মগেটে অবস্থিত তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের হোটেল ইম্পেরিয়াল ব্যবহার করেছে। নাম-পরিচয় গোপন রেখে ইম্পেরিয়াল হোটেলে তারা অবস্থান নিয়েছিলেন। পিলখানায় সংঘটিত ঘটনা ‘বিডিআর বিদ্রোহ’ হিসেবে চালানো হলেও এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সেনাপ্রধান হিসেবে বিডিআর হত্যা মোকাবেলা তথা সেনা কর্মকর্তাদের বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছেন জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ। হত্যাকাণ্ডের দায় তিনি এড়াতে পারেন না।
আরো পড়ুন: সীমান্তে বেড়া নির্মাণে বাংলাদেশের সহযোগিতা আশা করে ভারত: প্রণয় ভার্মা
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পিলখানার সিসি টিভি ফুটেজসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত ধ্বংস করে দেন ঘটনার পরপর দায়িত্ব পাওয়া বিডিআর ডিজি লে. জেনারেল মইনুল ইসলাম। বিডিআর হত্যাকাণ্ডে সেনাবাহিনীর তদন্ত কমিটি ও জাতীয় তদন্ত কমিটির তদন্ত অসম্পূর্ণ রাখা হয়। ওই তদন্ত কমিটিতে আওয়ামী লীগ নেতাদের সংশ্লিষ্টতার নাম এলেও শেখ হাসিনা তাদের রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করতে দেননি এবং কমিটিতে এদের জিজ্ঞাসাবাদও করতে দেয়া হয়নি।
সেনা তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বর্তমানে তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল ওই তদন্ত সম্পর্কে। তিনি বলেন, তার নেতৃত্বাধীন তদন্ত সম্পর্কে এ মুহূর্তে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ইতোমধ্যে তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন এবং সরকার বিডিআরের সাবেক ডিজি মো. জেনারেল আ ল ম ফজলুল রহমানের নেতৃত্বে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করেছেন। তিনি এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে রয়েছেন। তিনি বলেন, তারা আশা করছেন বর্তমান কমিশন বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উন্মোচন করবে।
আগে জাতীয় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল সচিব আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে। তার মন্তব্যের জন্য ফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। সূত্র জানিয়েছে, তিনি সম্ভবত দেশে নেই।
বিডিআর হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে অনুসন্ধানে আগের দুটি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পর্যালোচনা করেছে। তদন্ত কমিটি দুটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে আলাপ হয়। অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন। ঘটনার সঙ্গে ওয়াকিবহাল এমন কয়েক ব্যক্তি ও সাবেক কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। বিষয়গুলো স্পর্শকাতর হওয়ায় নাম প্রকাশ করা হয়নি।
সেনা তদন্ত কমিটি এবং জাতীয় তদন্ত কমিটি দুটিতে বাহিনী প্রধান, সেনাবাহিনী ও পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা, আওয়ামী লীগ নেতা অনেককেই বক্তব্য দেয়ার জন্য ডাকা হয়। তাদের অনেকেই তদন্ত কমিটির সামনে আসেননি। কেউ কেউ এলেও তাদেরকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়া হয়নি। তদন্ত কমিটির সামনে আসা ও প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য করার ক্ষমতাও দেয়া হয়নি তদন্ত কমিটিকে। ফলে বিডিআর হত্যা তদন্ত কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে দুই কমিটিতেই।
আরো পড়ুন: ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, বিডিআর হত্যাকাণ্ড ভারতীয় পরিকল্পনায় হয়েছে। শেখ হাসিনা যাতে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী হতে পারেন সেটা পাকাপোক্ত করার জন্য তার সঙ্গে বোঝাপড়া করেই পরিকল্পনা করা হয়।
ভারত দেখেছে তারা বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যখনই কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে, তখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর জন্য তারা অনেক কিছুই করতে পারেনি। বিডিআরে সেনাবাহিনীর অফিসাররা কমান্ডে থাকায় সেখানে ভারতীয় বিএসএফের ভূমিকা ম্লান ছিল। তাই তাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় এনে এমন শক্তিশালী করবে যাতে সবকিছু তার হাতের মুঠোয় থাকে।
সেনাবাহিনী যাতে দুর্বল হয়ে যায়, বিডিআর নামে যাতে শক্তিশালী বাহিনী না থাকে এ লক্ষ্যেই বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। এর আগে নীলনকশা অনুযায়ী বিডিআর সদস্যদের হাত করা হয়। তারা যাতে সেনা অফিসারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সে জন্য তথাকথিত ডাল-ভাত কর্মসূচি ও দুর্নীতির বিষয় এনে প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়।
চৌকস সেনা অফিসারদের হত্যার জন্য বিডিআরে বদলি করে এনে এক জায়গায় তাদের জড়ো করা হয়। এরপর তাদের হত্যা করা হয়। পদোয়া এবং রৌমারীর যুদ্ধে বিএসএফ হত্যার পর থেকেই বিডিআর ধ্বংসে নিয়োজিত হয় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। রৌমারীর ঘটনার নেতৃত্ব দেন রংপুরের তৎকালীন সেক্টর কমান্ডার পরবর্তী সময়ে বিডিআর ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ। এরই ফল ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তাকেসহ ৫৭ সেনাকর্মকর্তা হত্যা।