পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম জানিয়েছেন, আগামী ২০ থেকে ২৪ জানুয়ারি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের আসন্ন দ্বিপক্ষীয় চীন সফরকালে আলোচ্যসূচিতে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা মোকাবেলা, বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং রোহিঙ্গা সমস্যা প্রধান্য পাবে। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা জানান। 

রফিকুল আলম বলেন, চলতি বছর বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী। তাই উপদেষ্টার চীন সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী ২১ জানুয়ারি বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ির সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলবেন তিনি। সফরের অংশ হিসেবে তার সাংহাই যাওয়ারও কথা রয়েছে।

তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কৃষি, শিক্ষা, বাণিজ্য এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের অগ্রগতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। সফরের অর্থনৈতিক দিক তুলে ধরে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বর্তমানে বাণিজ্যের পরিমাণ ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বাণিজ্য ভারসাম্য চীনের দিকে বেশ ভারী।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরের লক্ষ্য বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা দূর করা এবং বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথ অন্বেষণ করা। সফরের পূর্ণাঙ্গ এজেন্ডা চূড়ান্ত করা হচ্ছে।

পররাষ্ট্র মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যেকার সম্পর্ক একটি ‘ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিতে’ রূপ লাভ করেছে, যা এর বহুমুখী বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত করে। আগস্টে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর উপদেষ্টার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর হিসেবে আসন্ন এটি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার ও গভীর করার মূল্যবান সুযোগ নিয়ে আসছে।

বাংলাদেশ ও চীন ২০২৫ সালে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে এবং উভয় দেশ এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রফিকুল আলম বলেন, এ সফর তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করবে। এটি বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভবিষ্যৎ রোডম্যাপের রূপরেখা তৈরির সুযোগও প্রদান করবে। যার মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং চলমান সহযোগিতার অগ্রগতি পর্যালোচনার ওপর দৃষ্টি দেয়া হবে। 

জুলাইয়ে বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে চীনই প্রথম ‘জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন অব চায়না’ থেকে ১০ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের চিকিৎসা প্রতিনিধি দল পাঠায়। তারা হাসপাতাল পরিদর্শন ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করেছে। আহত শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের উন্নত চিকিৎসার জন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দিয়েছে দলটি।

পররাষ্ট্র মুখপাত্র বলেন, সফরকালে বাংলাদেশ এ বিষয় নিয়ে আরো আলোচনা করতে আগ্রহী। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ‘চায়না ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’ এবং ‘সাংহাই ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’-এ বক্তৃতা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধি উৎসাহিত করার জন্য সাংহাইয়ে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি।