মানি লন্ডারিং মামলা
মিথ্যা তথ্য দিয়ে হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেন ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৭ পিএম

ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন
বহুল আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের মানি লন্ডারিং মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক সোনিয়া মেহজাবিন। তবে অনুসন্ধানে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। গুলশান থানার মামলা নং ০৬(১০)২১ ধারা: মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় গত বছর ৫ ডিসেম্বর বিচারপতি এএসএম আব্দুল মবিন ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের দ্বৈত বেঞ্চ সোনিয়া মেহজাবিনকে জামিন দিয়েছেন।
হাইকোর্টে জামিন আবেদন করার সময় তথ্য গোপন করে আদালতকে জানানো হয় মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির তদন্তাধীন রয়েছে। দুই পেজের লিখিত জাজমেন্টেও সেই তথ্য উঠে এসেছে। এমন প্রেক্ষাপটে সোনিয়া মেহজাবিন জামিন পেয়েছেন। অথচ মানি লন্ডারিং মামলাটি বর্তমানে মহানগর দায়রা জজ আদালত-১ এ বিচারাধীন রয়েছে। এদিকে সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ২৮ আগস্ট গুলশান থানার এই মানি লন্ডারিং মামলাটির চার্জশিট দেয়া হয়েছে। চার্জশিটের একটি কপি ভোরের কাগজের হাতে রয়েছে।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার শপ লিমিটেড (এসএসএল) এবং বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জসহ অন্তত পাঁচটি প্রতিষ্ঠান মিলে সাধারণ গ্রাহকের প্রায় ৩৫৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধারসহ শীর্ষ কর্তারা একে অন্যের যোগসাজশে এই অর্থ আত্মসাতে জড়িত ছিলেন। অবৈধ আর্থিক লেনদেন ‘রিপোর্ট’ না করে উল্টো ২২ কোটি টাকারও বেশি কমিশন নিয়েছে এসএসএল। এমন অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠান দুটির ১২ জনকে অভিযুক্ত করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি। জব্দের সুপারিশ করা হয়েছে সোহেল রানা এবং তার বোন সোনিয়া মেহজাবিনের ১৮ কোটি টাকার ফ্ল্যাট।
২০২১ সালের অক্টোবরে গুলশান থানায় ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে ২৩২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছিল সিআইডি। অভিযোগে বলা হয়, ই-কমার্স ব্যবসার নামে গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে ব্যবসায়িক লেনদেনের বাইরে নগদ উত্তোলন এবং ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে আসামিরা মানি লন্ডারিং করেছেন। গ্রাহকের টাকা পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে ব্যাংক হিসাবে গ্রহণ করার পরও পণ্য সরবরাহ না করে চক্রটি প্রতারণা করেছে।
প্রায় তিন বছর মামলাটি তদন্ত করে সিআইডি। তদন্তে ই-অরেঞ্জ, রেড অরেঞ্জ ইন্টারন্যাশনাল, অল জোন এবং এসএসএল কমার্সের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। অভিযুক্তরা ৩৫৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে গত বছর ১ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম শাখা থেকে সদ্য বদলি হওয়া মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জিল্লুর রহমান। প্রথমে মামলার আসামি ছিলেন পাঁচজন। তদন্তের ভিত্তিতে আরও সাতজনকে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অপরাধের মাত্রা এবং অভিযুক্তদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে পুলিশ পরিদর্শক জিল্লুর রহমান বলেন, একাধিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অর্থের লেনদেন করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। টাকাগুলো সাধারণ গ্রাহকদের ছিল। অর্ডারের বিপরীতে টাকা নিয়ে পণ্য সরবরাহ না করে সেই অর্থ নিজেরা আত্মসাৎ করেছে। যারা বিদেশ গিয়েছে, তারা কিছু টাকা বাইরে নিয়ে যেতে পারে। বেশিরভাগ টাকা দেশেই খরচ হয়েছে। যেমন সোহেল রানা ও সোনিয়া মেহজাবিনের ১৮ কোটি টাকার ফ্ল্যাট ক্রোক করেছি। আদালতের আদেশে বাজেয়াপ্ত হবে এবং রাষ্ট্রের অনুকূলে জমা হবে। এসএসএল কমার্সে ৩৪ কোটি টাকা ‘ফ্রিজ’ আছে।