ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে প্রতি বছর হাজারো অভিবাসনপ্রত্যাশী ইতালিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি। চলতি বছরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে প্রবেশ করেছেন ১২ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি। এই অনুপ্রবেশের হার বৃদ্ধিতে ইতালিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সচ্ছল জীবনের স্বপ্ন আর দালালদের মিথ্যে প্রতিশ্রুতিতে প্রলুব্ধ হয়ে, অনেকেই ভিটেমাটি বিক্রি করে বা চড়া সুদে ঋণ নিয়ে এ বিপজ্জনক যাত্রায় নামছেন। তবে ইতালিতে পৌঁছেও তারা প্রায়ই দিশাহীন পরিস্থিতিতে পড়েন।

জানা গেছে, সমুদ্রপথে লিবিয়া, তিউনিসিয়া, আলবেনিয়া এবং বসনিয়া থেকে ইতালিতে প্রবেশ করেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। আর দেশটিতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে অধিকাংশই শরীয়তপুর, মাদারীপুরের। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে প্রতি বছর অসংখ্য বাংলাদেশি প্রাণ হারাচ্ছেন। যারা বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে আশ্রয় পেয়েছেন তারাও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। একদিকে দেশে ঋণের চাপ, অন্যদিকে ইতালিতে এসে ভাষা জটিলতা এবং দক্ষতার অভাবে শুরুতেই কাজ পান না অনেকে। এতে বাড়ছে দুশ্চিন্তা আর হতাশা। হতাশাগ্রস্ত হয়ে এক বাংলাদেশি যুবকের আত্মহত্যা করার ঘটনাও ঘটেছে রোম শহরে।

কৃষি ভিসাসহ লিবিয়া, আলবেনিয়া, তিউনিসিয়া হয়ে সাগরপথে ইতালি এসেছেন এমন কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশির সঙ্গে কথা হয়। এরমধ্যে বছর দুয়েক আগে কৃষি ভিসায় ইতালিতে আসেন মাদারীপুরের ইমন (২৫)। কৃষিতে খুব একটা কাজ না থাকায় সুবিধা করতে পারেননি ইমন। তিনি বলেন, ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে জমিজমা বিক্রি করে, ধার করে টাকা নিয়ে এখানে এসেছি। কৃষি ভিসায় এসে তেমন কোনো কাজ না থাকায় এখন অন্য কাজ খুঁজতেছি।

ইমন আরো বলেন, দেশটিতে বৈধভাবে স্থায়ী হয়ে কাজের অনুমতির জন্য অ্যাসালাইম বা আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। তিনি আশা করছেন কমিশনের ডাক পেলে তার কাগজপত্র দেখে অনুমতি দেবে ইতালি সরকার। ইতালির পালেরমো ক্যাম্পে থাকেন সোহান। লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে তিনি এখন এই শহরের একটি ক্যাম্পে। কাজ না পাওয়ায় অর্থ সংকট দুশ্চিন্তায় ভুগছেন তিনি। নিজের খরচ চালানো ও দেশে টাকা পাঠানো এ নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।

বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা বলছেন, অবৈধ পথে ইউরোপে এসে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ পাওয়ার আশায় অবর্ণনীয় পরিস্থিতি ও নির্মম নির্যাতনের শিকারই ‍শুধু নয়, জীবন ঝুঁকিতে পড়ছেন বাংলাদেশি যুবকরা। বৈধভাবে প্রশিক্ষিত হয়ে ইতালি এসে যেমন সম্মানজনক ভালো বেতনের সুযোগ আছে, তেমনই নিজের জীবনেরও নিরাপত্তা থাকবে। এ বিষয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মাঝে আমাদের সতর্কতামূলক প্রচার-প্রচারণা চলমান। কেউ যেন অবৈধভাবে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ইতালিতে না আসে আহ্বান জানান তিনি।