সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১০ পিএম

আগুন লাগার পর সরকারের সর্বোচ্চ স্তরের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেন। ছবি: ভোরের কাগজ
সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসন ও শৃঙ্খলা শাখার এক অফিস আদেশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
অফিস আদেশে বলা হয়, কমিটি প্রয়োজনে এক বা একাধিক সদস্য যুক্ত (কো-অপ্ট) করতে পারবে। কমিটি আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ খালেদ রহীম। তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন)। সদস্যসচিব গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার নিচে নয়)।
কমিটির সদস্য জননিরাপত্তা বিভাগের প্রতিনিধি (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার নিচে নয়), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার নিচে নয়), স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিনিধি (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার নিচে নয়), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের প্রতিনিধি।
কমিটির কার্যপরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের উৎস ও কারণ উদ্ঘাটন, অগ্নিদুর্ঘটনার পেছনে কারো ব্যক্তিগত বা পেশাগত দায়দায়িত্ব আছে কি না, তা উদ্ঘাটন এবং এ জাতীয় দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ করা।
এর আগে বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্যরাত ১টা ৫২ মিনিটে আগুনের খবর পায় তারা। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় একের পর এক ১৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা ধরে কাজ করার পর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় তারা। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রশ্ন তুলে বলছেন, সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জায়গায় কীভাবে আগুন লাগল। কেউ কেউ আগুন লাগার ঘটনাকে নাশকতা বলে উল্লেখ করছেন।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহেদ কামালের ধারণা, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে ওই আগুন লাগতে পারে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল পৌনে ৭টায় সচিবালয়ের সামনে ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, সচিবালয়ের আগুন লাগার কারণ সম্ভবত ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন ছিল। এক জায়গা আগুন ধরলে বিদ্যুৎ লাইনের মাধ্যমে সব জায়গা ছড়িয়ে পড়ে। এটা হতে পারে। কিন্তু প্রাথমিক কারণ এখনো আমরা বের করতে পারি নাই। আগুন নেভানোর পর আমরা যখন সব জায়গা তল্লাশি করব, তখন আপনাদেরকে বলতে পারব।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহেদ কামাল বলেন, আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি- তিনটি জায়গায় একসঙ্গে আগুন দেখা গেছে। যখন স্পার্কিং হয়, যদি বিদ্যুৎ লাইনের শর্ট সার্কিট হয়- এটা হতে পারে। তবে আমরা এটা এখনও নিশ্চিত বলব না; যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা তদন্ত শেষ করছি। কিন্তু এটা হতে পারে। এটা হয়েছে- আমরা বলব না। যদি শর্ট সার্কিটের বিষয় থেকে থাকে, যদি একই লাইন হয়ে থাকে- তাহলে এটা হতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির ডিজি জাহেদ কামাল বলেন, ভবনের ভেতরে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কি না, তা এখন পর্যন্ত তারা জানতে পারেননি।
নৌ-বাহিনীর সিনিয়র চিফ পেটি অফিসার (পিও) আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, সচিবালয়ে লাগা আগুন পরিকল্পিত হতে পারে। কারণ আগুনটা লেগেছে ছয় তলা, নয় তলার পাশাপাশি মাঝেও। এভাবে বিভিন্ন স্থানে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন কখনো লাগে না। এটা পরিকল্পনা মাফিক হতে পারে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সচিবালয়ের ৭ নং ভবনে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তায় ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয় নৌ-বাহিনীর একটি টিমকে।
আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, যেখানে যেখানে আগুন লেগেছে সব পুড়ে গেছে। আমরা সব এখনো আইডেন্টিফাই করতে পারিনি, তবে করবো। আমাদের নৌ-বাহিনীর টিম এখানে আছে, কাজ করছে। কেন মনে হচ্ছে এটা পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড? জানতে চাইলে নৌ-বাহিনীর সিনিয়র চিফ পেডি অফিসার বলেন, শর্ট সার্কিটের আগুন লাগে এক জায়গা থেকে, সব জায়গায় একসঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে না। এই আগুন একসঙ্গে বিভিন্ন স্থানে লেগেছে।