অবৈধভাবে বারভিডার নির্বাচনের প্রস্তুতির অভিযোগ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩২ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) নির্বাচন অবৈধভাবে প্রস্তুতির অভিযোগ উঠেছে। পাতানো নির্বাচন দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্ধ করা না হলে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী রিটকারী ব্যবসায়ীদের পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মো. আমানউল্লাহ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, নিয়ম অনুসারে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)’র নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো ২০২৪ সালের শুরুতে। কিন্তু তৎকালীন সরকার তার অনুসারীদের সংগঠনের নেতৃত্বে রাখতে নানা অপতৎপরতা চালায়। নিয়মবর্হিভূতভাবে সময় বৃদ্ধি করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহভাজন আব্দুল হকের নেতৃত্বাধীন আজ্ঞাবহ কমিটি বহাল রাখা হয়। বাণিজ্য সংগঠনের আইন অনুসারে সংগঠনের নিয়মবর্হিভূতভাবে অন্য কোনো কারণে যথা সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হলে মহাপরিচালক স্বীয় কারণ উল্লেখ করে সময় বৃদ্ধি করতে পারবেন। অন্যথায় সরকারি প্রশাসক নিয়োগ বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তবে এ ধরণের কোনো দৈব দুর্বিপাক না ঘটলেও ওই কমিটিকে বহাল রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কতিপয়দুষ্কৃতিকারী কর্মকর্তা পরস্পর যোগসাজসে স্বৈরাচারের আর্শীবাদপুষ্ট কমিটিকে বহাল রাখার অপচেষ্টা করেন। এই অপকর্মে ভূমিকা রাখেন মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন এবং ওই পরিষদের উপদেষ্টা আব্দুল হক।
তিনি বলেন, এই আব্দুল হক আওয়ামী লীগ সরকারের আর্শীবাদ পুষ্ট হওয়ায় ওই সময়ে সহস্রাধিক গাড়ি আমদানি করে ৯০ পার্সেন্ট অবচয়ের সুযোগ নিয়ে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ২০২১ সালে বারভিডার সভাপতি থাকাকালে আব্দুল হকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ উত্থাপিত হলে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপ-সচিব ড. মো. আলম মোস্তফা একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেই প্রতিবেদনে আব্দুল হক গংদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হয়। তারপরও আব্দুল হক গংদের বিরুদ্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রহস্যজনকভাবে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
আইনজীবী মো. আমানউল্লাহ আরো বলেন, এরকম অহরহ অপকর্মের হোতা আব্দুল হকের নেতৃত্বে সম্প্রতি একটি প্যানেল গঠন করে বারভিটার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এর সভাপতিপ্রার্থী আব্দুল হক নিজেই। এই প্যানেলে তার সঙ্গে রয়েছেন জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় অভিযুক্ত রিয়াজ রহমান। যার বিরুদ্ধে ছাত্র হত্যার অভিযোগে মামলা রয়েছে। পুলিশের কাছে তিনি পলাতক থাকলেও বাস্তবে চালাচ্ছেন নির্বাচনী প্রক্রিয়া। এছাড়াও এই প্যানেলের অন্যান্যদের বিরুদ্ধেও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান, ছাত্র হত্যাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
তিনি জানান, এই প্যানেল বে-আইনীভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য পর্দার আড়ালে থেকে আজ্ঞাবহনির্বাচন কমিশন দিয়ে আগামী ২১ ডিসেম্বর বারভিডার পাতানো নির্বাচন সম্পন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে। এসব বিষয় উল্লেখ করে বারভিডায় অতি দ্রুত সরকারি প্রশাসক নিয়োগ, স্বাধীন নির্বাচনী বোর্ড ও নির্বাচন আপীল বোর্ড গঠনপূর্বক নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য বর্তমান আজ্ঞাবহ নির্বাচন বোর্ড বাতিল তথা নির্বাচনী তফসিল বাতিলের জন্য গত ১ ডিসেম্বর জরুরি ভিত্তিতে আবেদন করা হয়। বারভিডার কুচক্রি মহলের প্ররোচনায় আবেদনটি জরুরি ভিত্তিতে বিবেচনায় না নিলে বারভিডার একজন সদস্য বাদী হয়ে সুপ্রীম কোর্টে রিটপিটিশন দায়ের করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী আমান উল্লাহ বলেন, গত ৯ ডিসেম্বর এ বিষয়াদী বিবেচনায় নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করার জন্য বাণিজ্য সংগঠনের মহা-পরিচালককে এক নির্দেশনামূলক আদেশ প্রদান করেন উচ্চ আদালত। আদেশটি ৯ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ের আইনগত পদ্ধতিতে ই-মেইলের মাধ্যমে অবগত করা হয়। আদালতের এই আদেশকে অকার্যকর করার জন্য মন্ত্রণালয় আগামী ২৩ ডিসেম্বর বারভিডাকে শুনানির নোটিশ প্রদান করেন। যা তার আগে ২১ ডিসেম্বর বারভিডার পাতানো নির্বাচন সম্পন্নের চক্রান্ত।
এদিকে, কুচক্রী মহল মন্ত্রণালয় পরস্পর যোগসাজশে যখন দেখতে পায়, উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য হচ্ছে তখনই এক নোটিশের মাধ্যমে গত ১৫ ডিসেম্বর কোনো প্রশাসক নিয়োগ না করে নির্বাচন স্থগিত করেন। পরস্পর যোগসাজসে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে গত ১৭ ডিসেম্বর বিকেল ৫টায় মন্ত্রণালয় এক নোটিশের মাধ্যমে অভিযোগকারীকে জানান ১৮ ডিসেম্বর সকালে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী আমান উল্লাহ আরো বলেন, রিটকারী সদস্যকে কোনো ধরনের প্রস্তুতির সময় না দিয়ে এই নোটিশ প্রদান করে ১৯২৭ সালের পাবলিক ডিমান্ডরিকোভারি অ্যাক্টে বিধৃত বিধানের পরিপন্থী কাজ করেছে মন্ত্রণালয়। এ শুনানিতে চট্টগ্রামের অধিবাসী হিসেবে রিটকারী চট্টগ্রামে থাকায় ওই সময়ে শুনানিতে অংশ গ্রহণ করতে পারেননি। যদিও আদালত নির্দিষ্ট করে অভিযোগটি নিষ্পত্তি করার কথা বলেছেন তারপরও মন্ত্রণালয় তাড়াহুড়ো করে অভিযোগকারীর শুনানি গ্রহণ না করে তা গত ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় নিষ্পত্তি করেন।
তার আগে ১৯ ডিসেম্বর বেলা ১টা ৫৫ মিনিটে রিটকারীর আইনজীবী হিসেবে আমি নিজে মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত হয়ে রিটকারীর পক্ষে লিখিত নোটিশ প্রদান করে জানাই, আব্দুল হক গংদের পক্ষের আইনজীবীরা অন্যান্য রিটকারীদের ও রিটশুনানিতে আদালতকে অবহিত করেন, বর্তমানে বারভিডার নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। তখন আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে বলেন, যেহেতু নির্বাচন স্থগিত রয়েছে তাই আদালতের শীতকালীন ছুটির আগে বারভিডার নির্বাচন বিষয়ে শুনানির প্রয়োজন নেই।
পক্ষান্তরে দেখা যায়, আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করে আব্দুল হক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় অভিযোগ নিষ্পত্তি না করে নির্বাচনের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন এবং আদালতকে বিভ্রান্ত করেছেন। পাতানো নির্বাচন দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্ধ করা না হয় তাহলে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। পাশাপাশি আব্দুল হক গংদের বিরুদ্ধে প্রমাণিত অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে যদি মন্ত্রণালয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে উচ্চ আদালতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন ব্যবসায়ীরা।