খ্যাতির চূড়া স্পর্শ করা কবি হেলাল হাফিজের দেহ পড়েছিল ওয়াশরুমে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১২ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
দ্রোহ আর প্রেম যার কবিতার সারৎসার ছিল। সেই কবি হেলাল হাফিজ আর নেই। কবিতা প্রেমিদের অশ্রুসিক্ত করে তিনি চিরবিদায় নিয়েছেন। তার মৃত্যু কীভাবে হয়েছে, এ সম্পর্কে জানা গেল, ঢাকার শাহবাগের একটি হোস্টেলে তিনি মারা যান। ওই হোস্টেলের ওয়াশরুমে পড়েছিল কবির নিথর দেহ। তখন তার মাথা ফেটে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছিল। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) শাহবাগের সুপার হোম হোস্টেলে মারা যান কবি হেলাল হাফিজ। বর্তমানে তার মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে।
শাহবাগ থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দুপুরের দিকে হোস্টেলের একটি কমন ওয়াশরুমে যান কবি হেলাল হাফিজ। ওয়াশরুমে যাওয়ার বহুক্ষণ পরেও তার কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে হোস্টেলের অন্য রুমের বাসিন্দারা বাথরুমের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। তখন তারা দেখেন কবি ওয়াশরুমে পড়ে আছেন এবং তার মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছিল।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খলিল মনসুর বলেন, শাহবাগের ওই হোস্টেলের একটি কক্ষে থাকতেন কবি হেলাল হাফিজ। দুপুরে তিনি হোস্টেলের একটি কমন ওয়াশরুমে যান। বেশ সময় চলে গেলেও তিনি বের হচ্ছিলেন না। পরে হোস্টেলের অন্য রুমের সদস্যরা ওয়াশরুমের সামনে এসে ডাকাডাকি করলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে তারা বাধ্য হয়ে ওয়াশরুমের দরজা ভাঙেন। দরজা ভেঙে দেখতে পান ওয়াশরুমের ফ্লোরে কবির নিশ্চল দেহ পড়ে আছে এবং তার মাথা ফেটে অনেক রক্ত বের হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রাথমিক ধারণা স্ট্রোক বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার কারণে তিনি বাথরুমে পড়ে যান। বাথরুমের বেসিনটিও ভাঙা ছিল। আমাদের ধারণা– তিনি বেসিনের ওপর পড়ে যান। তখন বেসিন ভেঙে যায় এবং উনার মাথা ফেটে যায়। কবি হেলাল হাফিজ ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে জন্ম নেন। বাবা খোরশেদ আলী তালুকদার পেশায় ছিলেন স্কুলশিক্ষক আর মা কোকিলা বেগম গৃহিণী।
কবি হেলাল হাফিজ অনেকটা সময়জুড়ে সাংবাদিক পেশা যুক্ত ছিলেন। ছিলেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র। অকৃতদার হেলাল হাফিজ কবিজীবনের শুরুতেই খ্যাতির চূড়া স্পর্শ করেন। একটা সময় তিনি ক্রমশ ছন্নছাড়া জীবনে ঢুকে পড়েন। নির্মোহ কবি হেলাল হাফিজের লেখালেখির সূচনা ষাটের দশকের উত্তাল সময়ে। তবে প্রথম কবিতার বই যে জলে আগুন জ্বলে বের হয় দেশ স্বাধীন হওয়ারও বেশ কিছুকাল পরে ১৯৮৬ সালে। ২৬ বছর পর ২০১২ সালে বের হয় তার দ্বিতীয় কবিতার বই কবিতা একাত্তর। ২০১৯ সালে বের হয় কবির আরেকটি কবিতার বই বেদনাকে বলেছি কেঁদো না।
এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়-এই লাইনগুলো নতুন প্রজন্মের পাঠক ও কবিযশোপ্রার্থীরাও উচ্চারণ করেন। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় তার রচিত কবিতা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’র এ পঙ্ক্তি দুটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে যেমন, তেমনি এখনো প্রেরণার উৎস হয়ে রয়েছে।
কবি হেলাল হাফিজ কবিতায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। এ ছাড়াও যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬), আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), নেত্রকোণা সাহিত্য পরিষদের কবি খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।