তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে সংস্কার কমিশন

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৮ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আবার সংবিধানে ফিরবে এবং জাতীয় নির্বাচনের মত স্থানীয় সরকার নির্বাচনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মুজমদার। একই সঙ্গে স্থানীয় জন প্রতিনিধিরাও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চান বলে জানান তিনি। সেজন্য অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ আগের মত ৯০ দিনের চেয়ে বেশি সময় নির্ধারন করার পক্ষে ইসি সংস্কার কমিশন প্রধানের।
রবিবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে সংসদ সচিবালয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে স্থানীয় সরকারের সাবেক প্রতিনিধিদের মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সিটি করপোরেশন পৌর সভার সাবেক মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে মত জানান।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে করা দুটি রিট আবেদনের ওপর আগামী ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট যে রায় দেবে, সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরবে বলে আশা করছেন বদিউল। তিনি বলেন, মতবিনিময় সভায় অনেকেই বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনটা যেন বর্তমান যে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে করা হয় সে আশা করেন তারা। অনেকেই প্রথমে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন তার পরে জাতীয় সরকারের নির্বাচন করার কথা বলেছেন।
বদিউল আলম বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদটা একটু বাড়াতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকাকালীন যেন স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় এবং জাতীয় নির্বাচনও শেষ হয়। যাতে সত্যিকারে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। ১৭ ডিসেম্বর রায়ের পরে আবার বসবেন বলেও জানান নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের এত অবনতি কেন?
সংস্কার শেষে নির্বাচন নাকি আগেই নির্বাচন- এমন প্রশ্নে বদিউল বলেন, আমাদের কাজটা আমরা সততার সাথে নিষ্ঠার সাথে করে আসছি এবং আমরা এটা সময়মতই শেষ করতে চাই। তিনি বলেন, রিপোর্ট রেডি। আমরা এর মধ্যেও পরামর্শ নেব, আমরা আগের দিন (৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ আছে) পর্যন্ত নেব। ফেইসবুক, ই-মেইল, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে অনেক তথ্য পাচ্ছি এবং সরকারিভাবে অনেককে মেসেজ পাঠানো হয়েছে আমরা অনেক সাড়া পাচ্ছি।
মত বিনিময়ে স্থানীয় সরকারকে সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের ‘নিয়ন্ত্রণমুক্ত’ রাখার ওপর জোর দেয়া হয়েছে জানিয়ে বদিউল আলম বলেন, আমরা যাদের পরামর্শ পাচ্ছি, তারা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার কথা বলেছেন, কেউ কেউ বলেছেন আমাদের যে কর্তৃত্ববাদী সরকার সৃষ্টি হয়েছিল, আমাদের এককেন্দ্রিক যে শাসন ব্যবস্থা, ওখানে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা যদি শক্তিশালী হত, তাহলে হয়তবা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত।
বদিউল বলেন, তারা সুস্পষ্টভাবে আমাদেরকে বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনটা নির্দলীয় হওয়া উচিত। সংসদীয় পদ্ধতির কথা অনেকে বলেছেন, এটার বিরোধিতা অনেকেই করেছেন। তিনি বলেন, নারীদের বিষয়টা অনেকেই বলেছেন, কেউ কেউ বলেছেন নারীর প্রতিনিধিত্বটা অর্থবহ করতে হবে এবং সেটা যেন ভারতের পঞ্চায়েত যে রকম পদ্ধতি সেই রকম পদ্ধতিতে করার জন্য বলেছেন।
আরো পড়ুন: জুলাই বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে মানবিক ভূমিকায় বিজিবি
উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান না রাখার পরামর্শ এসেছে জানিয়ে বদিউল বলেন, কেউ কেউ বলেছেন অন্যভাবে নারীর প্রতিনিধিত্ব ও পুরুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য। তিনি বলেন, বৈঠকে সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদসহ সব স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি ছিলেন। তারা সবাই বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় হওয়া উচিত। যে পদ্ধতিতে আছে সেই পদ্ধতিতেই যেন হয়, সংসদীয় পদ্ধতিতে যেন না হয়। তারা নারী প্রতিনিধিত্ব অর্থবহ করতে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতির কথা বলেছেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অর্থবহ করতে সব স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি এবং সংসদ সদস্যদের ভোটে চেয়েছেন। সর্বজন গ্রাহ্য ব্যক্তি যেন এ পদে আসতে পারেন সেই কথাও তারা বলেছেন। প্রবাসীদের ভোটাধিকারে নিশ্চিতের দাবি উঠার কথা জানিয়ে বদিউল বলেন, সেটা নিয়ে আমাদের কথাবার্তা হচ্ছে। একইসঙ্গে ডিসি, ইউএনওদের পরিবর্তে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের তাগিদ দিয়েছেন স্থানীয় প্রতিনিধিরা। বদিউল আলম বলেন, যারা এসেছিলেন, তাদের পদ থেকে পদচ্যুত করায় মনক্ষুন্ন, সবাই প্রায় অসন্তুষ্ট। কিন্তু সবাই চান সত্যিকারের স্থানীয় সরকার যেন প্রতিষ্ঠিত হয়।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ চাই। কমিশন যেন কঠোর হয়। আমরা মতামত দিয়েছি, যেন অল্প সময়ের মধ্যে ভোট দিতে পারি। রিটার্নিং কর্মকর্তা ইসি কর্মকর্তা যেন হয়। ডিসি বা ইউএনওকে চাই না। বিচার বিভাগ ছাড়া সব ইসির নিয়ন্ত্রণে চাই।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বলেন, জনপ্রতিনিধি যেন নূন্যতম ডিগ্রি পাস হয়। স্থানীয় নির্বাচনে যেন দলীয় মার্কা না থাকে।
সাবেক এক ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউল ফেরদৌস বলেন, আগের সরকারের আমলের কেউ যেন পুনর্বহাল হতে না পারে। সঠিক সময়ে, সঠিক উপায়ে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করে দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন না করা হয়, সে প্রস্তাব আমরা করেছি।
সাবেক জনপ্রতিনিধি মো. বাবলু বলেন, দ্রুত সব নির্বাচন চাই। দিনের ভোট রাতে চাই না। নির্বাচন যাতে স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার দাবি জানান তিনি।।