বার্ডোর কর্মশালায় বক্তারা
প্রতিবন্ধী শিশুদের মূল ধারার শিক্ষায় একীভূত করণের তাগিদ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৩ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ শিশুদের (প্রতিবন্ধী) মূল ধারার শিক্ষায় একীভূত করে তাদের দক্ষতার উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির তাগিদ দিয়েছেন বক্তারা। শনিবার ৩৩তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২৬তম জাতীয় প্রতিবন্ধী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা এই তাগিদ দেন। ‘প্রতিবন্ধী শিশুদের মূল ধারার শিক্ষায় একীভূত করনের লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় মিরপুর রূপনগরে বার্ডোর (ব্লাইন্ড এডুকেশন এন্ড রিহেবিলিটেশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন) নিজস্ব কার্যালয়ে।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বার্ডো’র নির্বাহী পরিচালক মো. সাইদুল হক। অন্যদের মধ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আসফিয়া সিরাত, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) পরিচালক জেসমীন আক্তার (উপসচিব), সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (গবেষণা, মূল্যায়ন, প্রকাশনা ও জনসংযোগ শাখা) লাভলী খানম, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গবেষণা কর্মকর্তা মো. আজিম কবিরসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন- বার্ডো’র কোষাধ্যক্ষ জনাব হোসনে আরা বেগম। কর্মশালায় বার্ডো’র উপ পরিচালক মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ বার্ডো কার্যক্রম পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরেন।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ শিশুরা আমাদেরই সন্তান। তারা সমাজেরই অংশ। তাদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নয়নের মূল স্রোতে তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। তাদের মূল ধারার শিক্ষায় একীভূত করে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তাদের জীবন-জীবিকার পথ সম্প্রসারিত করতে হবে। এ জন্য দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে তাদের শিক্ষার সুযোগ তৈরি করতে হবে। তাহলে এসব শিশুদের সক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাসও বাড়বে। এসময় তারা শিশুদের প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত করাও তাগিদ দেন। এছাড়া কারিকুলাম পরিবর্তন সংশোধন ও সামগ্রিক বিষয়ে গবেষণার তাগিদ দেন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সরকারি রূপনগর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, শিক্ষা বিষয়ে আমার পক্ষে যা যা সহযোগীতা করা সম্ভব তা আমি করব। বিশেষ সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের প্রতিবন্ধকতার উন্নয়নে আমাদের কাজ করতে হবে। প্রত্যেক মানুষের ভেতরেই অন্তর্নিহিত শক্তি রয়েছে। প্রতিবন্ধীরাও তার বাইরে নয়। তাদের ভেতরের সেই শক্তিকে বের করে আনতে হবে। তাদের জন্য কর্মপরিবেশ তৈরি করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বিশেষ অতিথি বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের অতিরিক্ত পরিচালক (উপসচিব) মুখলেসুর রহমান বলেন, শিশু বা বয়স্ক সব মানুষের সার্বিক উন্নয়ন প্রয়োজন। আমার শিক্ষার কথা বলি কিন্তু কোয়ালিটি ইডুকেশনের কথা কেউ বলি না। স্কুলে যাওয়ার আগেই মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি নিতে হবে। কর্মশালায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের তুলে ধরা বিভিন্ন বিষয়ে তিনি বলেন, কর্মমুখী শিক্ষা, শ্রুতি লিখন, কর্মসংস্থান, শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষকদের ট্রেনিংসহ যেসব বিষয়ে কথা বলেছেন তা স্পষ্টভাবে লিখিতভাবে আমাদের জানান। আমরা সব ধরনের সহযোগিতার চেষ্টা করবো।
কর্মশালায় বার্ডোর নির্বাহী পরিচালক (একুশে পদক) প্রাপ্ত মো. সাইদুল হক বলেন, বার্ডো অত্যাধুনিক ব্রেইল প্রেস স্থাপন করা ও ৬টি ব্রেইল প্রিন্টার আছে। আবাসিক বিদ্যালয়ে ৬০ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্র আছে। বার্ডো চক্ষু হাসপাতাল আছে। বার্ডো মেয়েদের জন্য একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা রয়েছে।
তিনি বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ শিশুদের জন্য শিক্ষা উপকরণ ও খেলা উপকরণ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া প্রযুক্তিতে এখনো শিশুরা পিছিয়ে আছে। এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
কর্মশালায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের বেশ কিছু বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। চিত্রায়নের মাধ্যমে বর্ণনামূলক ভাবে যেসব সকল বিষয় শেখার সুযোগ আছে তা ব্রেইল পদ্ধতিতে শেখার ব্যবস্থা রাখা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ ধারা ৩ অনুসারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ধরন ও ধরনসমূহের নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা। প্রথম শ্রেণী হতে সকল পাঠ্যপুস্তকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে ইতিবাচক গল্প আন্তর্ভুক্ত করা, ব্রেইল পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষা -খেলাধুলার উপকরণ সরবরাহ করা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া ও শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা।