ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহতের সংখ্যা ১৫০০ জনের বেশি, আহত ২০ হাজারেরও বেশি। এই আহত-নিহতদের পূর্ণবাসন প্রক্রিয়া শুরু করেছে একদল বিপথগামী রাজনৈতিক নেতা। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁও জেলাধীন বিএনপির একটি কমিটিতে।

ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের সরাসরি ছাত্রদের উপর হামলাকারী একাধিকজনকে নিজের ছত্রছায়ায় রেখেছেন। তার মধ্যে ছাত্র হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত নিষিদ্ধ সংগঠন ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান ঢাকা পলিট্যাকনিক ইন্সটিটিউটের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহরিয়ার আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে একাধিক বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচী ও শোডাউন করেছে বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের।

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার আহমেদের নামে তেজগাঁও থানায় চাঁদাবাজির একাধিক অভিযোগ জুলাই বিপ্লবের আগেই ছিলো। জুলাই বিপ্লবের আগে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার শত শত ছবি ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেই দিয়েছিলো শাহরিয়ার।

জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্রদের প্রতিহত করতে একাধিক সশস্ত্র মিছিলের নেতৃত্বে ছিলো সে। তেজগাঁও এলাকায় ছাত্রদের দমনে নেতৃত্ব দিয়েছে সে। নিষিদ্ধ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আগে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি থাকাকালীন ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাদের মিছিলে হামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখায় তাকে উপহার স্বরূপ সাধারণ সম্পাদক বানানো হয় বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের একাধিক ছাত্র নেতা। 

আরো পড়ুন: বাংলাদেশিদের চিকিৎসা না দেয়ার ঘোষণা ভারতের হাসপাতালের

এই বিষয়ে তেজগাঁও থানাধীন ছাত্রদল নেতা মোশাররফ হোসেন বলেন, শাহরিয়ার আহমেদ তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার চিহ্নিত চাঁদাবাজি। ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন দোকান বসিয়ে সেখান থেকে চাঁদা নিতো শাহরিয়ার ও তার অনুসারীরা। ছাত্র হত্যার সঙ্গে জড়িত এই নেতার আটক ও বিএনপি সাধারণ সম্পাদকের বহিষ্কার দাবি করেন এই ছাত্রদল নেতা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের যে তালিকা করা হয়েছে, সেখানেও ছাত্র হত্যার সঙ্গে জড়িত এই নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠনের নেতাী নাম আছে, বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

সরকার পতনের পরে নিজের ভোল পাল্টে ফেলেছেন এই ছাত্র নেতা। তার উঠবস এখন বিএনপির জেলা উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে। স্থানীয় নেতারা বিষয়টি দীর্ঘদিন থেকে দৃষ্টিকটুর সঙ্গে দেখছিলো। যুবদল ও বিএনপির একাধিক সমাবেশে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহেরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে তার সঙ্গেই সমাবেশে উপস্থিত হতে দেখা গেছে এই ছাত্র নেতাকে। নিষিদ্ধ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও হামলাকারী এই বিষয়টি জানার পরেও উপজেলা বিএনপির এই সাধারণ সম্পাদক ব্যক্তি স্বার্থের জায়গা থেকে এই পূর্নবাসন চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি সাধারণ সম্পাদকের নিজ ভাই হরিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা এবং এখনো তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে আওয়ামী পন্থী মন্তব্য ও পোস্ট শেয়ার করেন। তিনি জুলাই গণহত্যার পক্ষে এখনো কথা বলেন।

আরো পড়ুন: আইনজীবী সাইফুল হত্যা: ৩ দিন পর বাবা-ভাইয়ের ২ মামলা

সেই সঙ্গে জেলার বিভিন্ন ইউনিটের ছাত্রলীগের নেতাদের আশ্রয় দিয়েছেন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। সরকার পতনের পরে স্থানীয় বাজারে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহেরের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। বিভিন্ন সড়ক, টেম্পু, অটো, বাস স্টান্ড থেকে নিয়মিত চাঁদার সঙ্গে জড়িত বিএনপির এই নেতা।

এই বিষয়ে স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, আমরা নৈতিক জ্ঞান কাণ্ডহীন এই সাধারণ সম্পাদকের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত এবং হতবিহ্বল। এমন আদর্শ বিবর্জিত নেতার কারনেই জনগণের কাছে দলের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে। যাদের হাতে ছাত্র-জনতার রক্ত লেগে আছে, তাদের পূর্ণবাসনের সঙ্গে জড়িত কারো বিএনপিতে থাকার অধিকার নেই। আমরা দলের হাইকমাণ্ডকে জানিয়েছি এই বিষয়ে, দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।