ন্যায্য আন্দোলনে দমন-নিপীড়ন মানুষের মনে শঙ্কার জন্ম দিয়েছে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৮ পিএম

ছবি : ভোরের কাগজ
দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি, শ্রমিকদের ন্যায্য আন্দোলন দমন ও নিপীড়ন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, মাজারসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা মানুষের মনে শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। তাই শ্রমজীবী জনতাকে এগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে, কথা বলতে হবে। শ্রমজীবী মানুষ চুপ হয়ে গেলে আবারো স্বৈরাচারের উত্থান হবে।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন আয়োজিত '২৪ এর গণঅভ্যুত্থান ও শ্রমিকের প্রত্যাশা' শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
সংগঠনের সভাপতি মানস নন্দীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, বাসদ (মার্কসবাদী)'র সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডাক্তার দলিলুর রহমান প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে সিন্ডিকেটের কারসাজি ও মূল্যবৃদ্ধিতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে শ্রমজীবীদের। ন্যায্য দাবি নিয়ে যখন লড়াই-সংগ্রাম করে তখন স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসী ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে গুলি, টিয়ারগ্যাস, মামলা, গ্রেপ্তার চালিয়ে সরকার নির্মমভাবে দমন করে। যে কোনো শ্রমিক আন্দোলনকে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে নিপীড়ন করা হয়েছে। তাজরীন, রানাপ্লাজা, বিএমডিপোসহ একের পর এক কারখানায় মালিকের অবহেলায় অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিকদের প্রাণহানি ঘটলেও, হত্যাকারী মালিকের বিচার হয়নি।
মানস নন্দী বলেন, রাষ্ট্র কাজের ব্যবস্থা করেনি, বরং কাজ না পেয়ে স্বল্পপুঁজি ব্যয় করে রিক্সা- ব্যাটারিরিক্সা চালিয়ে, হকারি করে যে লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষ বেঁচে থাকার চেষ্টা করছিল, তাদেরও উন্নয়নের নামে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ বন্দিদশা থেকে মানুষ পরিবর্তন চাইছিল, মুক্তি চাইছিল। তাই ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। মুক্তির প্রত্যাশায় শোষিত, অত্যাচারিত, নিপীড়িত মানুষ এই গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ দিয়েছে। এদের বড় অংশই শ্রমজীবী মানুষ।
আরো পড়ুন : বাজারে চড়া সবজির দাম, সংকট বোতলজাত সয়াবিন তেলের
মোশাহিদা সুলতানা বলেন, দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ন্যায্য মজুরি আন্দোলন দমন করা হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, মাজারসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা চলছে। এর ফলে মানুষের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। চুপ থাকা যাবে না। শ্রমজীবী মানুষ চুপ হয়ে গেলে আবারো স্বৈরাচারের উত্থান হবে।
মাসুদ রানা বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী শ্রমিকদের ন্যায্য আন্দোলনে গাজীপুরের আশুলিয়ায় ম্যাংগো টেক্স লিমিটেডের শ্রমিক কাউসার হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে যৌথবাহিনী। গুলিবিদ্ধ হন ন্যাচারাল ডেনিমসের নাজমুল হোসেন ও নয়ন। আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার জেনারেশন নেক্সট কোম্পানির শ্রমিকরা ৪ মাসের বকেয়া বেতন আদায় আন্দোলনে যৌথবাহিনী বেপরোয়া হামলা ও গুলি চালায়। গুলিতে আরো অনেকে আহত হয়। ৪ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে চম্পা খাতুন মারা যান। আবারো নিপীড়ন ধারা ফিরে আসতেছে।
তাই এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য বিপ্লবীধারার ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলা ও শক্তিশালী করা এবং ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য শ্রমজীবী জনগণকে আহবান জানান তিনি।