গ্রেপ্তার ইসকনের চিন্ময় প্রভু: ক্ষুব্ধ সনাতনীরা, উত্তাল চট্টগ্রাম, ঢাকায় হামলা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০১ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে উড়ানের অপেক্ষা করছিলেন। এর মধ্যেই আচমকা গ্রেপ্তার হলেন আলোচিত সন্ন্যাসী ও ধর্মীয় নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস (চিন্ময় প্রভু)। তিনি আলোচিত হিন্দু সংগঠন ইসকনের অন্যতম সংগঠক। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তিনি চিন্ময় প্রভু নামে পরিচিত। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা ডিবি তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের সময় তিনি শান্ত ছিলেন এবং ডিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের বিরোধ করেননি। তবে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম উত্তাল হয়েছে। আর রাতে ঢাকার শাহবাগে সনাতনীদের অবরোধ কর্মসূচিতে স্থানীয়রা হামলা করেছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় সাধারণ সনাতনীরা আন্দোলন শুরু করলেও ইসকন এখনো কোনো কর্মসূচি দেয়নি। ঢাকায় ইসকনের মুখপাত্র জয় মহাপ্রভু দাস ভোরের কাগজকে বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি দেয়া হবে কি না তা ইসকনের ঊর্ধ্বতনরা এখনো জানাননি।
এদিন রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে চিন্ময় দাসকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, জানতে চাইলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, চিন্ময় দাস আটক হয়েছেন বলে আমরা জানি। ওনার নামে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আপনাদের (সাংবাদিক) জানাবেন।
চিন্ময় প্রভুর গ্রেপ্তারের পর অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সনাতনী সম্প্রদায়ের মানুষরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ঢাকায় শাহবাগে তাৎক্ষণিক আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তাকে আগামী দু’ঘন্টার মধ্যে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু তাদের দাবি বাস্তবায়িত না হওয়ায় রাতেই তারা ডিবি অফিসের সামনে ও শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন বিক্ষোভ শুরু করেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে এই কর্মসূচির ওপর হামলার খবর পাওয়া যায়। এতে অনেকেই রক্তাক্ত হন। আহতদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্তীও রয়েছেন। শাহবাগ থানা পুলিশের ওসি মো. খালিদ মনসুর রাতে ভোরের কাগজকে বলেন, অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে স্থানীয়দের সঙ্গে ধারওয়া-পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ কিছুই করেনি।
ভোরের কাগজের চট্টগ্রাম অফিস জানিয়েছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস যিনি চিন্ময় প্রভু নামে পরিচিত তিনি চট্টগ্রামে হাটহাজারি উপজেলায় অবস্থিত ইসকন মন্দির পুন্ডরিকধামেরও অধ্যক্ষ বা সেটির প্রধান ধর্মগুরু হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাকে গ্রেপ্তারের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন সারা দেশের বিভিন্ন এলাকার সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিক্ষুব্ধ সনাতনী ও বিভিন্ন মঠ মন্দিরের সাধু সন্তরাও মিছিল নিয়ে নগরীর চেড়াগী পাহাড় এলাকায় জড়ো হয়ে চিন্ময়কে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। পাশাপাশি অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানাতে থাকেন। মিছিল ও সমাবেশ থেকে ম্লোগান ওঠে-‘হর হর মহাদেব, চিন্ময় প্রভুর মুক্তি চাই দিতে হবে, অবিলম্বে চিন্ময় প্রভুর মুক্তি দাও, চিন্ময় প্রভুর কিছু হলে জ্বলবে আগুন সারাদেশে, জেগেছে রে জেগেছে সনাতনী জেগেছে,’ ইত্যাদি শ্লোগান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, বিক্ষোভ মিছিল নগরীর চেড়াগি পাহাড় মোড়ে আসার সময় মোমিন রোডে পুলিশ ও সেনাবাহিনী বাধা দিলেও সে বাধা উপেক্ষা করে মিছিল চেড়াগির মোড়ে সমবেত হয়। এ সময় মোমিন রোডে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চেড়াগী পাহাড়ের মোড়ে সমবেত হচ্ছিল। তবে অভিযোগ পাওয়া গেছে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষুব্ধ হিন্দুদেরকে চেড়াগি পাহাড় মোড়ে আসতে বাঁধা দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২২ নভেম্বরও চিন্ময় দাস রংপুরে সনাতনীদের ৮ দফা দাবি নিয়ে এক বিশাল সমাবেশে দেশের বিভিন্ন এলাকার সাধু সন্তসহ বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এর আগেও তিনি গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদিঘী ময়দানে স্মরনকালের বৃহৎ সমাবেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী বক্তব্য রাখেন। সেখানে সনাতনীদের আট দফা দাবি দাওয়া নিয়ে জোরালো বক্তব্য রেখেছিলেন।
এরপর গত ৩০ অক্টোবর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জন সনাতনী ধর্মাবলম্বীর বিরুদ্ধে নগরীর কোতোয়ালী থানায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ফিরোজ খান নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এই মামলাটির পর রাজেশ চৌধুরী ও হৃদয় দাশ নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা এখনো কারাগারে। এদিকে ফিরোজ খান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের স্থানীয় এক নেতা, তাকে পরবর্তীতে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।