আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে হিন্দু নারীকে ধর্ষণ নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৪ পিএম

আওয়ামী লীগের ডাকা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ছড়িয়ে পড়া নানা অপতথ্য। ছবি: সংগৃহীত
শহিদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে সম্প্রতি রাজধানীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ডাক দিয়ে বিক্ষোভ ডেকেছিল আওয়ামী লীগ। তবে একই দিনে পাল্টা গণজমায়েত কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে ওইদিন কয়েকজন নারী-পুরুষ মারধরেরও শিকার হন।
তবে সম্প্রতি ভারতের একাধিক এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে দেয়া পোস্টে দাবি করা হয়, গত ১০ নভেম্বর আওয়ামী লীগের ডাকা ওই কর্মসূচি ঘিরে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার মধ্যেই এক নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। পোস্টগুলোয় রক্তাক্ত এক নারীর ছবি দিয়ে আরো বলা হয়, ওই নারী হিন্দু এবং তিনি মুসলিমদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তবে কিছু পোস্টে ওই নারীকে হিন্দু বলে দাবি না করা হলেও ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়।
আবার কিছু পোস্টে ধর্ষণের বিষয়টি উল্লেখ করে এ বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এক্স অ্যাকাউন্টকে ট্যাগ করে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। ইতোমধ্যে ৯ লাখের বেশি মানুষ এসব পোস্ট দেখেছেন। এমনকি নেটিজেনদের বড় একটি অংশ এমন দাবিকে সত্য মনে করে এর সমালোচনাও করেছেন।
তবে রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভিন্ন তথ্য। অনুসন্ধানে জানা যায়, পোস্টগুলোয় থাকা রক্তাক্ত ওই নারী হিন্দু নয়। এমনকি তিনি ধর্ষণের শিকারও হননি।
আরো পড়ুন: ঘরে আগুন লাগলে কেউ রক্ষা পাবে না : ড. ইউনূস
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, কোহিনুর আক্তার নামের ওই নারী আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের নেত্রী। তিনি ইসলাম ধর্মের অনুসারী। গত ১০ নভেম্বর শহিদ নূর হোসেন দিবসে আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে বিরোধীপক্ষের হামলায় আহত হন। পরে তাকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।
অনুসন্ধানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কৃষক লীগের ডায়েরি নামের একটি পেজে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। যার ক্যাপশন থেকে জানা যায়, কোহিনুর আক্তার কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় জাতীয় কমিটির সদস্য ও পটুয়াখালী জেলা কৃষক লীগের সদস্য। ঘটনার দিন আওয়ামী লীগের ডাকা কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে তিনি বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের মবজাস্টিসের শিকার হন। পরবর্তীতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ফেসবুকে দেয়া ওই পোস্টের ক্যাপশনে কৃষক লীগের এই নেত্রীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টও মেনশন করা হয়। পরে সেই অ্যাকাউন্টে গেলে সেখানে থাকা ছবির সঙ্গে ভিডিওর নারীর ছবির মিলও পাওয়া যায়। এমনকি সেই অ্যাকাউন্ট থেকে দেয়া পোস্টগুলো থেকেও নিশ্চিত হওয়া যায়, মুসলিম এই নারী কৃষক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
গত ১০ নভেম্বরের ওই কর্মসূচি ঘিরে ইতোমধ্যে এক বিজ্ঞপ্তিতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের ৩৩ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের কথা জানালেও তাদের বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ করেনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদসহ বিশ্বস্ত সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, ওইদিন কর্মসূচিতে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। সুতরাং, কৃষক লীগের মুসলিম এই নারীকে হিন্দু দাবি ছাড়াও তাকে ধর্ষণের দাবিতে ইন্টারনেটে যে তথ্য প্রচার করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।