বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে প্রাণঘাতী অস্ত্র থেকে গুলিবর্ষণকারী পুলিশ সদস্যদের তালিকা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অন্তত ৭৪৭ সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে কনস্টেবল থেকে শুরু করে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন। 

এসব পুলিশ সদস্যকে আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে দমাতে গুলির নির্দেশদাতা শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার নামও উঠে এসেছে। এদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিসি) থেকে শুরু করে অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার কর্মকর্তাও রয়েছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের গ্রেপ্তারে কোনো উদ্যোগ নেই। যা নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

একাধিক সূত্র জানায়, আন্দোলনের সময় পুলিশের হাতে প্রাণঘাতী গুলির ঘটনা ঘটে। সেসময় ৩৫৭ পুলিশ সদস্যই প্রায় ৮ হাজার গুলি ছোড়েন। ফলে অনেক বিক্ষোভকারী নিহত ও আহত হন। আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় ১৮ জুলাই সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করা হয়। 

চিহ্নিত ৭৪৭ পুলিশ সদস্যের মধ্যে ৪৬৭ জন কনস্টেবল, ১০৬ জন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই), ১৫৭ জন উপ-পরিদর্শক (এসআই), দুইজন পরিদর্শক এবং একজন এএসপি রয়েছেন। অন্য সদস্যরা পুলিশ বিভাগের অন্যান্য পদমর্যাদার। আন্দোলন দমাতে ২৬ হাজার ২৩টি গুলি ব্যবহার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৯১২টি প্রাণঘাতী ছিল। অধিকাংশ গুলির ঘটনায় ‘এইম ফায়ার’ বা লক্ষ্যবস্তু করে গুলি করার অভিযোগ উঠেছে।

কনস্টেবল থেকে সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা গত ১৮ থেকে ২১ জুলাই গুলি করেন। তালিকাটি যাচাই-বাছাই করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। সূত্র জানায়, ওই ৪ দিনে হতাহতের ঘটনায় পুলিশের করা মামলাগুলোর এজাহার থেকেই গুলিবর্ষণকারী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা গুলি করার ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানেননি।

গুলি করার নির্দেশদাতা বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ বলেন, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কতজন গ্রেপ্তার, আর কতজন পলাতক বা আত্মগোপনে আছে তা তদন্ত করে জানাতে বলা হয়েছে। দেশ থেকে পলাতক হলে সেটাও ট্রাইব্যুনালকে জানাতে হবে। সে অনুযায়ী পলাতকদের ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করবে পুলিশ। এজন্য যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, বিভিন্ন মামলার আসামিদের অবস্থান শনাক্ত এবং তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ চলছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু আইনি প্রক্রিয়া আছে। এগুলো প্রতিপালন সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় পলাতক পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের গ্রেপ্তারে সবাই সক্রিয় রয়েছে।