নিজ জেলায় বদলি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৩ পিএম

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) আবু কাউছার
রাজবাড়ী থেকে নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যোগ দিয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবু কাউছার। গত ৪ নভেম্বর তিনি যোগদান করেন। আগামী মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) তিনি দায়িত্ব বুঝে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করার কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বেশকিছু কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, আবু কাউছারের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মেহারি ইউনিয়নের বামুটিয়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবু হাসানের ছেলে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংস্থা প্রশাসন-১ শাখার উপসচিব মো. আবুল আমিন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে আবু কাউছারকে জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত), রাজবাড়ী থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বদলির আদেশের কথা জানানো হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ৩ নভেম্বর প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়। জনস্বার্থে জারিকৃত আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
ওই আদেশ জারির পরদিনই আবু কাউছার যোগদান করেন। অফিস অফ দ্য রেজিস্ট্রার জেনারেল, বার্থ অ্যান্ড ডেথ রেজিস্ট্রেশনের রেকর্ডে উল্লেখ আছে, আবু কাউছারের জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। ১৯৭৪ সালের ১১ জুন তার জন্ম। ২০২২ সালের ১৫ মার্চ মেহারি ইউনিয়ন পরিষদে এ সংক্রান্ত তথ্য রেকর্ড হয় বলে এতে উল্লেখ আছে।
একই তারিখে আবু কাউছারের মেয়ে কাশফিয়া সুলতানা রাকার জন্মসনদ নিবন্ধন করা হয় কসবা উপজেলার ঠিকানা ব্যবহার করে।
আরো পড়ুন: নতুন উপদেষ্টা হচ্ছেন ডা. সায়েদুর, শেখ বশির, ফারুকী ও মাহফুজ
আবু কাউছারের আরেক মেয়ে তাসফিয়া সুলতানা রাইছার নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক তথা বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁনের কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধা নাতনির একটি প্রত্যায়ন পত্র নেওয়া হয়। সেখানে তাসফিয়া সুলতানার দাদা তথা আবু কাউছারের পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবু হাসানের ঠিকানাও কসবা উপজেলার বামুটিয়া গ্রাম উল্লেখ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ওয়েব সাইটেও আবু হাসানের ঠিকানা কসবা উল্লেখ করা হয়।
এদিকে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় আবু কাউছারের জন্ম নিবন্ধন সনদে জন্মস্থান বামুটিয়া, কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া উল্লেখ আছে।
তবে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ঢাকার কোতয়ালি আব্দুল হাদী লেনের বাড়ি নম্বর-৭ উল্লেখ করা হয়। ২০০৭ সালের ১৪ নভেম্বর জন্ম সনদটি ইস্যু হয়।
তিনি সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের এলাকার হওয়ায় তার সুপারিশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন উপজেলা/স্থাপনায় চাকরি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার পরিবার আওয়ামীপন্থী হবার পরও কীভাবে তিনি নীতিমালা ভঙ্গ করে মেয়াদপূর্তির আগেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় পদায়িত হয়েছেন এ নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
এছাড়া তিনি এর আগেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কর্মরত ছিলেন। তখনও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। তারপরও সেই একই জেলায় কেন তাকে বারবার পদায়িত করা হচ্ছে এ নিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন?
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, আশুগঞ্জের মিলারদের সঙ্গেও ছিল তার ব্যাবসায়িক সম্পর্ক। যা একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়ে কিছুতেই তিনি করতে পারেন না।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব শাহাবুদ্দিন আহমেদের ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের বদলি/পদায়ন নীতিমালা-২০১৯ এর ১ এ গ তে উল্লেখ আছে, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বা সমমানের পদ এবং ৯ম গ্রেডভুক্ত ক্যাডার বা নন-ক্যাডার পদে, সিএডি এর সহকারী ব্যবস্থাপক/ ব্যবস্থাপক এবং এলএসডি এর সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা/ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদে নিজ জেলায় নিয়োগ/পদায়ন করা যাবে না। এছাড়াও ১০ম থেকে ১৬তম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা/ কর্মচারীকে নিয়োগ/বদলি করা যাবে না। তবে ৯ম গ্রেডভুক্ত পদে কর্মরত কোনো কর্মকর্তা ৫৮ বছর বয়সে নিজ উপজেলা ব্যতীত জেলায় বদলি হতে পারবেন।
এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, অফিসিয়ালি একই জেলার কেউ তার নিজ জেলায় কাজ করতে পারে না। কারণ এতে অফিসের চেয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থেই জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তিনি বলেন, রেকর্ড থেকে জানা গেছে তার বাড়ি ঢাকায়। তবে বিষয়টি আমরা আমলে নিয়েছি। প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিষয়ের সত্যতা জানতে মোবাইল ফোনে আবু কাউছার ভোরের কাগজকে বলেন, জন্মনিবন্ধনে তার জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উল্লেখ আছে স্বীকার করলেও চাকরিতে নিয়োগের কাগজপত্রে নিজ জেলা ঢাকায় উল্লেখ আছে বলে জানান। যদিও ঢাকায় এখনো বাড়ি করা হয়নি। দীর্ঘদিন ঢাকায় থাকার কারণে স্থায়ী ঠিকানা সেখানকারই দেওয়া হয়েছে। তবে মিলারদের সাথে তার ব্যাবসায়িক সম্পর্কের কথাটি তিনি অস্বীকার করেন।
তবে তার নিজ, বাবা কিংবা সন্তানের বিভিন্ন কাগজপত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ঠিকানা ব্যবহার করার বিষয়ে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।