শেখ হাসিনা কি দুর্নীতিবাজদের বেশি পছন্দ করতেন? উত্তর দিলেন প্রেস সচিব

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৫ পিএম

শেখ হাসিনা ও শফিকুল আলম
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিকুল আলম বলেছেন, আমার মনে হয়, শেখ হাসিনা নিজে বড় রকমের দুর্নীতিবাজ। আবার তিনি দুর্নীতিবাজদের দিয়ে সারাউন্ডেড ছিলেন। এই লোকগুলো তো তার ব্লেসিংয়েই ব্যাংকগুলোকে লুটপাট করেছে। পুরো সময়টা ছিল লুটপাটতন্ত্র। এই লুটপাটতন্ত্রের একদম উপরে ছিলেন তিনি (শেখ হাসিনা)। তিনি নিজেই তো স্বীকার করেছেন, তাকে সামনে রেখে একটা পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। চিন্তা করা যায়? আমি এতে বছর চাকরি করেও তো এক-দুই কোটি টাকা সঞ্চয় করতে পারিনি। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শফিকুল আলম এ কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, শেখ হাসিনা কোনো ডিক্টেটর সমালোচনা সহ্য করতে পারতেন না। মনে হতো যে, উনি এই দেশকে ওউন করেন না। উনি নিজেকেও দেশের অন্য কোনো নাগরিকের মতো মনে করেননি। উনার সময় যতগুলো প্রতিষ্ঠান হয়েছে, প্রায় সবই কোনোটা বাবার নামে, কোনোটা তিন ভাইয়ের নামে, নিজের নামে বা তার বোনের নামে। তার পরিবারের বাইরে কেউ নাই। কিন্তু হঠাৎ করে তো বাংলাদেশের জন্ম হয়নি। তাজউদ্দিন আহমদের ভূমিকা ছিল, সৈয়দ নজরুল ইসলামের রোল ছিল, মাওলানা ভাসানি তো ছিলেন টাওয়ারিং ফিগার। তারও আগে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, যোগেন মণ্ডল বা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তাঁদের ভূমিকা তো অস্বীকার করা যাবে না। বাংলাদেশ গ্র্যাজুয়ালি একটা প্রসেসের মাধ্যমে এসেছে। কিন্তু শেখ হাসিনার ইতিহাসে এদের কোনো কথা নেই। তার সমস্ত কিছুই আমার আাব্বা করেছেন, এর বাইরে আর কিছু নেই।
তিনি বলেন, স্বজন হারানোর বেদনা বুঝতেন না শেখ হাসিনা। বুঝলে এত ভয়ানক হত্যাকাণ্ড চালাতেন না। তিনি যদি সমব্যথী হতেন, তাহলে কি এত বড় ধরণৈর নারকীয় কর্মকাণ্ড চালাতে পারতেন? তাঁর (শেখ হাসিনা) ১৫ বছরের পুরোটাই ছিল একে মারো, তাকে ধরো, তাদের মিটিং করতে দিও না–এ জাতীয়। সমাবেশ করার কারণে একদিনেই ২৫ হাজার মানুষকে তিনি অ্যারেস্ট করেছেন, ভাবা যায়?
শেখ হাসিনা এমন সব প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন, যেগুলো এখন জনগণের জন্য বোঝা। এসব প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী? এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, এটা থেকে বের হওয়ার তরিকা একটাই, সেটা হচ্ছে গুড গভর্নেন্স। আমাদের প্রত্যেকটা প্রজেক্ট নেয়ার আগে ভাবতে হবে প্রজেক্টটা আমাদের দরকার আছে কি না। চুরি করার চিন্তা করলে হবে না। এখানে জনগণের ট্যাক্সের টাকা ব্যয় হচ্ছে। সেজন্য দেখতে হবে জনগণের কাজে লাগে কি না। অনেক প্রজেক্ট পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতিকে কেমন রেখে গেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, খুবই ভঙ্গুর। এর চেয়ে খারাপ অবস্থা আর হয় না। লুটপাটে ব্যাংকগুলো থেকে দুই লাখ কোটি টাকা চলে গেছে। আপনি যে মানুষজনকে ঋণ দিবেন, একটা বড় ফ্যাক্টরি বানাবেন সেই টাকা তো তিনি ব্যাংকে রেখে যাননি। বাইরের দেশের সঙ্গে ট্রেড করবেন, সেটারও কোনো অবস্থা রেখে যাননি। যিনি শেখ হাসিনার প্রতি লয়্যালিটি শো করেছে, তাকে পদে বসিয়েছেন। উনি কে? আওয়ামী লীগের লোক? তাকে ওখানে দিতে হবে। উনি কে? ছাত্রলীগ করেন? তাকে পদে বসাতে হবে। সেই মানুষটা যোগ্য বা কমপিটেন্ট কি না, সেটা মুখ্য বিষয় ছিল না। মুখ্য বিষয় ছিল, তার ব্লাডে ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগ জিনিসটা আছে কি না। এ কারণেই প্রতিষ্ঠানগুলো মরে গেছে।