পেঁয়াজের ঝাঁজে ক্রেতার চোখে পানি

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১৯ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
সপ্তাহ ব্যবধানে বাজারগুলোতে আবারো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে । গত দুই-তিন মাস আগেও পেঁয়াজ দাম ৪০ টাকায় ছিল। এখন খুচরায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১৩০-১৩৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়। এছাড়া মিশরীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। পেঁয়াজের বাজার কেন হঠাৎ এত অস্থির হয়ে পড়লো- তার কোনো সদুত্তর নেই খুচরা বিক্রেতাদের কাছে।
তবে ক্রেতারা বলছেন, মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা মানুষের পকেট কাটতেই সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছে পেঁয়াজের দাম। পেঁয়াজের ঝাঁজে এখন ক্রেতার চোখে পানি আসার মতো অবস্থা। ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা খেয়ালখুশি মতো পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করে। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরেও বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। বাজার নিয়ন্ত্রণে দরকার কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা। ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশি পেঁয়াজের মৌসুম প্রায় শেষের দিকে। নতুন পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত বাজার একটু চড়াই থাকবে।
ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিতে ন্যূনতম বিক্রয়মূল্য প্রত্যাহার ও শুল্ক কমানো এবং বাংলাদেশে আমদানি শুল্ক হ্রাসের সিদ্ধান্তে গেলো মাসে দেশের বাজারে কিছুটা নিম্নমুখী ছিল পেঁয়াজের দাম। বর্তমানে আবারো ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের দাম। লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে কোনো পণ্যেই যেন স্বস্তি নেই। আজ দাম কমে তো কাল আবার বাড়ে। একই অবস্থা পেঁয়াজের বাজারেও। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ৫ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানায়, পেঁয়াজ আমদানিতে বিদ্যমান ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে, যা বহাল থাকবে আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর বেঁধে দেয়া ন্যূনতম শুল্ক প্রত্যাহার করেছে ভারত। এ সিদ্ধান্তের ফলে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে নির্ধারিত মূল্য পরিশোধের শর্ত আর নেই। একইসঙ্গে কমানো হয়েছে রপ্তানি শুল্কও। রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করে দেশটি। প্রতি টন পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে এতদিন সর্বনিম্ন ৫৫০ ডলার মূল্যের যে শর্ত ছিল, সেটিও দেশটির সরকার প্রত্যাহার করে। এরপর পরই শুরু হয় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি। পাশাপাশি পাকিস্তান ও মিশর থেকেও আসতে থাকে পেঁয়াজ। এতে সামান্য কমে দাম। তবে বর্তমানে আবারো বাড়তে শুরু করেছে দাম।
পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজে ৪-৮ টাকা বেড়ে গেছে জানিয়ে কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রাকিবুল জানান, পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৬-৯৮ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি থাকলে দাম কিছুটা নাগালে থাকতে পারে। আর খুচরা ব্যবসায়ী সাজ্জাদ জানান, কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে খুচরায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১৩০-১৩৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়। এছাড়া মিশরীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়।
তবে আড়ত পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম আগের মতোই আছে উল্লেখ করে আমদানিকারক এবং রাজধানীর শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মাজেদ বলেন, আড়তে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১০৫-১১০, ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাজারে কমে আসছে। এতে কিছুটা সরবরাহ সংকট তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এখনই তেমন দাম বাড়ার কথা না। এটা খুচরা পর্যায়ের কারসাজি।
বাজারে সব ধরনের পেঁয়াজের সরবরাহ থাকলে দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকায় দামও বেশি বলে জানান আবদুল মাজেদ। তিনি বলেন, ‘মানুষ বাজারে গিয়ে দেশি জিনিসটাই খোঁজে। আমি নিজেও ঘরে দেশি পেঁয়াজ খাবার জন্য আনি। এতে চাহিদা বেশি হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের দাম সব সময়ই অন্য পেঁয়াজের তুলনায় বেশি থাকে। তাছাড়া, দেশি পেঁয়াজের মৌসুমও প্রায় শেষের দিকে। আগামী দুই মাস পর বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসা শুরু হলে দাম কমতে শুরু করবে।’
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুরমুখি কেজিতে ২০ টাকা কমে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন কেজিতে ৪০ টাকা কমে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকায়, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দুল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙ্গা ১০০ টাকা শসা ৫০ থেকে ৮০ টাকা এবং কাঁচামরিচ কেজিতে ২০০ টাকা কমে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শীতকালীন সবজি শিম ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৪০ থেকে ৬০ টাকা পিস, বাঁধাকপি ছোট সাইজের ৬০ টাকা পিস, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা এবং জলপাই ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতা কেজিতে ২০০ টাকা কমে ৪০০ টাকা কেজি, কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, চাল কুমড়া ৬০ টাকা পিস এবং মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
লাল শাক ২০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ২০ টাকা, কলমি শাক ১৫ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা এবং ডাঁটা শাক ৩০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। ১৫ টাকা বেড়ে বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজেও দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা। আদা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা, রসুন ২২০ টাকা, নতুন আলু ১২০ টাকা, বগুড়ার আলু ১০০ টাকা এবং পুরান আলুর কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে শুল্ক কমলেও উল্টো ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে চিনির দাম। দোকানভেদে এক কেজি খোলা ও প্যাকেট চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে পণ্যটির সরবরাহ বাড়েনি।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী, খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম প্রতি লিটারে ১ থেকে ২ টাকা বেড়েছে এক সপ্তাহে। এ অনুযায়ী বাজারে খোলা সয়াবিন বিক্রি হওয়ার কথা ১৫৬ থেকে ১৬০ টাকা। তবে বাজারে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৭০ থেকে ১৭২ টাকা ও পাম অয়েল ১৬৫ থেকে ১৬৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত তেল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫ লিটারের সয়াবিন ৮০০ থেকে ৮১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, ডিমের (লাল) জন্য উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা। খুচরায় ১১ টাকা ৮৭ পয়সায় ডিম বিক্রির সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। সে হিসেবে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ডজন কিনতে খরচ হবে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা। তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে বাজারে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও ৮ থেকে ১২ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে ডিম। অন্যদিকে মোটা চাল ব্রি-২৮ প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬২ টাকায় এবং মিনিকেট মানভেদে ৭৪ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১১৫০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে গত সপ্তাহের মতো চলতি সপ্তাহেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ। এক কেজি চাষের শিং মাছ আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকার ভেদে) ৩৮০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা, মৃগেল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ১৪০০ টাকা, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পোয়া মাছ ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫৫০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকা, রূপচাঁদা ১২০০ টাকা, বাইম মাছ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দেশি কই ১২০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, আইড় মাছ ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা এবং কাইকলা বা কাইক্ক্যা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।