সংযুক্ত আরব আমিরাতে আরো ৩০০ বাড়ির সন্ধান সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:১৪ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। দেশটির লন্ডনে ১৪ মিলিয়ন ডলারের বিলাসবহুল বাড়িতে আয়েশে বসবাস করছেন তিনি। সম্প্রতি তাকে লন্ডনের সেই বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছেন কেউ একজন।
সোমবার (২১ অক্টোবর) বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রীর অবস্থান ও সম্পদ নিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার অনুসন্ধান শাখা (আই-ইউনিট)। তারা বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে নতুন করে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর আরো ৩০০টি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে।
আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান ও উল থর্নের করা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। আই-ইউনিটের অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা জানান, ওই এলাকায় তার ৯০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ছয়টি সম্পত্তি রয়েছে। যুক্তরাজ্যে তার গড়ে তোলা সম্পদের সাম্রাজ্যের যা ছোট একটি অংশ।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর আলজাজিরার দ্য মিনিস্টারস মিলিয়নস শিরোনামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে ২৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে ৩৬০টি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন। বাংলাদেশি অর্থে যা প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সমান।
ব্রিটেন ছাড়া নিজের রিয়েল এস্টেট ব্যবসাকে সম্প্রসারণ করেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া পর্যন্ত। তার স্ত্রীর নামেও রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট। সবমিলিয়ে তিনি ৭ শতাধিক বাড়ি কিনেছেন। যেগুলোর মূল্য ৮৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। যা বাংলাদেশি ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
সবশেষ আলজাজিরার আই-ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্রিটেনে কোটি কোটি ডলার পাচারের অভিযোগের তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। এতসবের মধ্যেই সাবেক মন্ত্রী এখন লন্ডনের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করছেন। ইতোমধ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রীর সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
দ্য মিনিস্টারস মিলিয়নস প্রতিবেদনে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গড়ে তোলা সম্পদের সাম্রাজ্যের ফিরিস্তি তুলে ধরে আলজাজিরা। যার বাজারমূল্য ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ছদ্মবেশী সাংবাদিকদের কাছে নিজের রিয়েল এস্টেট ব্যবসাকে দুবাই, নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত করেছেন বলে জানান সাবেক মন্ত্রী। ২০১৬ সাল থেকে তিনি শুধু যুক্তরাজ্যেই ৩৬০টির বেশি বাড়ি কিনেছেন।
দুবাইয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তির সংখ্যা প্রাথমিকভাবে যা ধারণা করা হয়েছিল, তার চেয়েও বেশি বলে আলজাজিরার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। নতুন করে ফাঁস হওয়া ২০২৩ সালের সম্পত্তির তথ্যে দেখা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৫০টিরও বেশি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের তালিকাভুক্ত মালিক তিনি। যার মূল্য ১৪০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
আই-ইউনিটের তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্ত্রী রুখমিলা জামান দুবাইয়ে ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের আরো ৫০টি বাড়ির তালিকাভুক্ত মালিক। অর্থপাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে।
২০২০ ও ২০২২ সালে দুবাইয়ে থাকা সম্পত্তির ফাঁস হওয়া ডাটায় এই দম্পতির তালিকাভুক্ত অন্য ৫৪টি সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া যায়। আলজাজিরার আন্ডারকভার ফুটেজে মর্যাদাপূর্ণ অপেরা জেলায় একটি পেন্টহাউসের মালিক হওয়ার বিষয়ে গর্ব করতে দেখা যায় পলাতক মন্ত্রীকে।
জমির রেকর্ডেও নিশ্চিত হওয়া গেছে, সেখানে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের তালিকাভুক্ত মালিক সাইফুজ্জামান চৌধুরী। যার মূল্য ৫০ লাখ ডলারের বেশি।
ফাঁস হওয়া নতুন তথ্য অনুযায়ী, সাবেক মন্ত্রী ও তার স্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩০০টিরও বেশি অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে প্রায় ১৭০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন। সামগ্রিকভাবে এই দম্পতি বিশ্বজুড়ে ৬০০টিরও বেশি সম্পত্তি-বাড়ির তালিকাভুক্ত মালিক।