গনঅভ্যুথানের মুখে দেশত্যাগের আগে শেখ হাসিনা পদত্যাগপত্র দিয়ে যাননি বলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে মক্তব্য করেছেন তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

সোমবার (২১ অক্টোবর) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের অফিসে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

আসিফ নজরুল বলেন, রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করেছেন। শপথ ভঙ্গ করেছেন। তার পদে থাকার যোগ্যতা আছে কিনা? তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। রাষ্ট্রপতি যদি তার বক্তব্যে অটল থাকেন তাহলে বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে যাবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

গত ১৯ অক্টোবর সাপ্তাহিক রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’ ও দৈনিক মানব জমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে লেখেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে হাসিনার পদত্যাগপত্র নেই বলে জানান। তবে শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর ৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি তিন বাহিনীর প্রধানদের সামনে রেখে বলেছিলেন- ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং তা গ্রহণ করেছি’। রাষ্ট্রপ্রধানের এই দ্বিমুখী বক্তব্যে সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। 

এ প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন-উনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্র পাননি। এটা মিথ্যাচার। ওনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল। কারণ উনি নিজেই ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০মিনিটে পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী উনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং উনি তা গ্রহণ করেছেন।

আইন উপদেষ্টা আরো বলেন, এরপর সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উপদেশমূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে আপিল বিভাগ জানতে চায়- এই পরিস্থিতিতে করণীয় কী আছে? তার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টের যিনি প্রধান বিচারপতি ছিলেন এবং অন্য সব বিচারপতিরা মিলে ১০৬ এর অধীনে একটা মতামত দেন  রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সের ভিত্তিতে। সেটার প্রথম লাইনটি হচ্ছে, দেশের বর্তমান অদ্ভুত  পরিস্থিতিতে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন...। তারপর অন্যান্য কথা।

আসিফ নজরুল জানান, রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সটিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের সব বিচারপতির স্বাক্ষর আছে’।  এর পরিপ্রেক্ষিতে যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যায়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে একটি নোট আমরা মন্ত্রণালয়ের দফতর থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাই। এই অভিমত রাষ্ট্রপতি দেখেছেন এবং গ্রহণ করেছেন। এরপর উনি নিজে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছেন, যুক্ত করেন আসিফ নজরুল।

মো. সাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রপতি পদে থাকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে মন্তব্য করে আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে, আপনার যদি মানসিক এবং শারীরিক সক্ষমতা না থাকে বা আপনি যদি গুরুতর অসাদচরণ করেন, তখন রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারেন কিনা সেটা নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আমাদের সংবিধানে আছে।

তিনি আরো বলেন, একজন সর্বোচ্চ পদে থাকা মানুষ পুরো জাতির সামনে ভাষণ দিয়ে পদত্যাগের বিষয়ে জানিয়ে, দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে অভিমত নেওয়ার পরও উনি কীভাবে এটা বলতে পারেন এটি আমার বোধগম্য না। এখন উনার স্ববিরোধী কথাবার্তা বলার কোনো সুযোগ নেই। যদি তিনি তার বক্তব্যে অটল থাকেন তাহলে উনি নিজ পদে থাকার যোগ্য আছেন কিনা সেটি আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ভেবে দেখতে হবে।

হাসিনার পদত্যাগপত্র সরকারের কাছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, পদত্যাগ উনি করার কথা রাষ্ট্রপতির কাছে। রাষ্ট্রপতির দফতরে পদত্যাগপত্র থাকার কথা এবং বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী এটি নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলারও সুযোগ নাই। এখন উনি যদি বলেন পদত্যাগপত্র নাই, তাহলে পদত্যাগপত্র উনি কী করেছেন আপনারা সেটা উনাকেই জিজ্ঞেস করবেন।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলন ও গণবিক্ষোভের মুখে দেশত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবিধানের ৫৭ (ক) ধারা অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, তার কাছে শেখ হাসিনার কোনো পদত্যাগপত্র বা সংশ্লিষ্ট কোনো প্রমাণ পৌঁছায়নি।

রাষ্ট্রপতির ভাষ্যে, আমি বহুবার পদত্যাগপত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেছি, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। হয়তো তার সময় হয়নি।