নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য কী সংশয় তৈরি করছে

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৬ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন কবে হবে, এ নিয়ে সরকারের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য জনমনে সংশয় সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের মন্তব্য ঘিরে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং অন্যান্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাতে একটি টেলিভিশন আলোচনায় আসিফ নজরুল বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে, তবে পরবর্তীতে শনিবার (১৯ অক্টোবর) তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, এটি একান্তই প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তের বিষয়।
এ ধরনের ভিন্নমুখী বক্তব্যের কারণে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিএনপি মনে করছে, এ ধরনের অস্পষ্টতা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। তারেক রহমান বলেছেন, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য জনগণের মনে সংশয়ের সৃষ্টি করছে।
সেনাবাহিনীর প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান গত মাসে রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই হওয়া উচিত। কিন্তু পরে প্রধান উপদেষ্টার অফিস থেকে এ মন্তব্যকে ‘ব্যক্তিগত মত’ বলে উড়িয়ে দেয়া হয়। সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচনের সময় নির্ভর করবে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর এবং তা নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনার ফলাফলের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে ব্যক্তিগত মত হিসেবে উল্লেখ করার পরপরই আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আবারো মন্তব্য করেন, নির্বাচন সম্ভবত আগামী বছরের মধ্যে হতে পারে। তবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে অনেকগুলো ফ্যাক্টর বিবেচনা করতে হবে, যেগুলো পুরোপুরি ব্যাখ্যা করার সুযোগ তিনি টিভি আলোচনায় পাননি।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, সরকারের যে কোনো রোডম্যাপ নেই, সেটিই উঠে এসেছে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যে। জনমনে সংশয় তৈরি হচ্ছে, কারণ সরকার এখনো স্পষ্টভাবে নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করতে পারেনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, সরকারের উচিত ছিলো একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা প্রকাশ করে নির্বাচন নিয়ে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা। তবে মনে হচ্ছে সরকার সংস্কারকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, অথচ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংস্কার হওয়া উচিত।
বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার নির্বাচন নিয়ে সরকারের কাছ থেকে একটি রোডম্যাপ দাবি করলেও, এখনো পর্যন্ত সরকার এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা দেয়নি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন আমাদের এক নম্বর প্রায়োরিটি, তবে আমরা সরকারের কাছে কোনো নির্দিষ্ট মাস বা তারিখ নিয়ে কথা বলিনি।
তারেক রহমান বলেন, নির্বাচনের আগে যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, তা গুরুত্বপূর্ণ। তবে জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সংস্কার কার্যকর হয় না।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ৩ দিন পর গত ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে। এরপর জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তিনি নির্বাচনের আগে সংস্কারের জন্য কয়েকটি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। সে কমিশনগুলো ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
তবে বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো শুরু থেকেই একটি রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন পূর্ববর্তী সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে জোর দিয়ে আসছে।
আরো পড়ুন: নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে শিগগিরই সার্চ কমিটি গঠন
এ পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যদি নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা করত, তাহলে রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হওয়া সন্দেহ এবং বিভ্রান্তি এড়ানো যেত।