সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও বন্ধু ক্লিনটনকে তিন গল্প শোনালেন ড. ইউনূস

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৯ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের তরুণেরাই নতুন বাংলাদেশ গড়বেন বলে আশা ব্যক্ত করেছেন। গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ’-এর আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিল ক্লিনটনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও সম্পর্কের প্রথম দিনের গল্প, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কাহিনি এবং বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নানা বিষয় তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের মঞ্চে ড. ইউনূস দীর্ঘদিনের বন্ধু সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলার ফাঁকে তাঁর সফরসঙ্গীদের দুইজনকে পরিচয় করিয়ে দেন। প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ সহকারী মো. মাহফুজ আলমকে সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরে সরকার পতনের আন্দোলনের মূল কারিগর হিসেবে তুলে ধরেন।
একপর্যায়ে মাহফুজকে সামনে এগিয়ে দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পেছনের মূল কারিগর মাহফুজ। যদিও সে সব সময় বলে, ও একা নয়, আরো অনেকে ছিল। তবে সে গণ-অভ্যুত্থানের পেছনের কারিগর হিসেবে পরিচিত।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন অধ্যাপক ইউনূসকে বাংলাদেশের তরুণদের ডাকে সাড়া দিয়ে দায়িত্ব নেয়া নেতা বলে পরিচয় করিয়ে দেন। এ সময় পুরো হল করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। দুই নেতা পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন।
বিল ক্লিনটন বলেন, আমার জানা মতে, আপনিই (ড. ইউনূস) একমাত্র প্রবীণ, যাঁকে দেশের তরুণরা তাঁর নিজের অনন্যসাধারণ অর্জনের জন্য ক্ষমতায় বসিয়েছে।
ড. ইউনূস বিল ক্লিনটনের সঙ্গে তাঁর প্রথম যোগাযোগের ঘটনা উল্লেখ করে বক্তব্য শুরু করেন। দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ড. ইউনূস তাঁদের কথাও বলেন। পুরো হল আবার করতালিতে মুখরিত হয়। তিনি তাঁদের মঞ্চে ডেকে নিয়ে আনেন।
এসময় ড. ইউনূস বলেন, আমি বুঝতে পারছিলাম না, বাংলাদেশে কী ঘটছে। হঠাৎ বাংলাদেশের সব তরুণ একত্রিত হয়েছেন এবং বলছেন, যথেষ্ট হয়েছে। আমরা আর এসব (অন্যায়, বৈষম্য) সহ্য করব না। তাঁরা সহ্য করেননি, সরকারের (ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের) ছোড়া গুলির সামনে বুক পেতে নিজেদের জীবন দিয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তাঁদের দেখতে অন্য তরুণদের মতোই মনে হয়। তাঁদের আলাদা করে মনে রাখতে পারবেন না। কিন্তু যখন ওদের কথা শুনবেন, তাঁদের কাজ দেখবেন, শিহরিত হবেন। তাঁরা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, তরুণেরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমি কিছু ভিডিও দেখেছি। তাঁরা সেখানে এমনভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন, বলছিলেন, আমাদের কতজনকে আপনারা হত্যা করতে পারবেন? আমরা এখানে আছি, আমাদের হত্যা করুন। কিন্তু আমরা বিশ্বকে বদলে দিয়েই ছাড়ব, আমরা বাংলাদেশকে বদলে দেব। এটাই তাঁদের প্রতিজ্ঞা ছিল, তাঁরা নতুন একটি বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে তরুণদের বাংলাদেশ। তাঁরা এই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। আগের সরকার চলে যাওয়ার পর আমাকে দেশের নেতৃত্ব নিতে আমন্ত্রণ জানান। আমি সেটাই করার চেষ্টা করছি। তরুণেরা জাতিকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সেটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তাঁরা যেভাবে (আন্দোলন) করেছেন, তাতে পুরো জাতি এক হয়েছে। পুরো দেশের মানুষ এবার তরুণদের সমর্থন দিয়েছেন। আমরা আরো এগিয়ে যেতে চাই। নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। তাঁরা (তরুণেরা) বলেছেন আমরা ‘রিসেট বাটন’ চেপেছি। সব পুরোনো শেষ। এখন আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ব।
তিনি বলেন, দেশ গড়তে, নিজেদের গড়তে যে শব্দমালায়, যে ভাষায় তাঁরা (আন্দোলনকারীরা) কথা বলেছেন, তা অসাধারণ। আমি আগে কখনো এভাবে কাউকে কথা বলতে শুনিনি। তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ করতে প্রস্তুত। তাঁরা যেভাবে কথা বলেছেন, তা সারা বিশ্বের তরুণদের অনুপ্রেরণা জোগাবে।
ড. ইউনূস তরুণদের স্বপ্ন সত্য করতে তাদের সাহায্য ও সমর্থন কামনা করে বলেন, আমরা একসঙ্গে এ দায়িত্ব নিতে পারি।
অনুষ্ঠানে বিল ক্লিনটন বলেন, আমি মনে করি, আমাদের সবার বাংলাদশের মঙ্গল কামনা ও তাদের সহায়তার জন্য যা করা দরকার, তা করা উচিত। এরপর ড. ইউনূসকে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় নিতে গেলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলতে চান। তরুণরা সব সময় তরুণদের নিয়ে কথা বলতে চান। তরুণদেরই নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। আমাদের মতো বুড়োদের নয়।