আট মাসে ৮১ কন্যাশিশুকে হত্যা, ধর্ষণের শিকার ২২৪

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি : ভোরের কাগজ
সমাজে নারী ও কন্যাশিশুরা প্রতিনিয়ত সহিংসতার শিকার হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট পর্যন্ত) সারাদেশে হত্যার শিকার হয়েছে ৮১ জন কন্যাশিশু। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২২৪ জন। একই সময়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ১৩৩ জন।
জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের ‘কন্যাশিশুর প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতার চিত্র পর্যবেক্ষণ-২০২৪’ এ এমন তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ফোরামের সভাপতি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। বক্তব্য রাখেন ফোরামের সহসভাপতি শাহীন আক্তার ডলি, গুড নেইবারস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাঈনুদ্দিন মাইনুল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের ন্যাশনাল কোঅর্ডিনেটর সৈয়দা আহসানা জামান (এ্যানী)।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বর্তমানে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এর পরেও ধর্ষণ যেন প্রতিযোগিতা করে বেড়েই চলেছে। গত ৮ মাসে মোট ২২৪ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এছাড়া, ৩২ জন কন্যাশিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী ভেদে এই জঘন্যতম বর্বরতা থেকে কেউ বাদ যায়নি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ডিএমপির পরিচালিত গবেষণায় অংশ নেয়া শিশুদের মধ্যে প্রায় ২৪ শতাংশ কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। গত ৮ মাসে ৮১ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এর অন্যতম কারণ ছিল পারিবারিক দ্ব›দ্ব, আগে থেকে পারিবারিক শত্রæতার জের, ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন। পাশাপাশি ২০ জন কন্যাশিশুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কেন মৃত্যু হয়েছে, এ সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো কারণ বা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
আত্মহত্যার তথ্য তুলে ধরে ফোরামের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৮ মাসে ১৩৩ জন কন্যাশিশু আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এর পেছনে মূলত যে কারণগুলো কাজ করেছে তা হলো হতাশা, পারিবারিক মতানৈক্য বা দ্ব›দ্ব, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়া এবং শারীরিকভাবে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ- যা নির্ভয়ে প্রকাশ করার মতো কোনো আশ্রয়স্থল না থাকা। অন্যান্য নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, প্রথম আট মাসে যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২৮ জন কন্যাশিশু। অপহরণ ও পাচার হয়েছে ১৯ জন, পানিতে ডুবে ১৮৭ জন কন্যাশিশুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ১০ জন গৃহশ্রমিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ জন শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে, ১ জনকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ৪ জন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। পরিবর্তিত ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ গড়তে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের পক্ষ থেকে ১১টি প্রত্যাশা ও দাবি সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কন্যাশিশুদের প্রতি যথাযথ বিনিয়োগের অভাবে তারা অপুষ্টির শিকার হচ্ছে এবং তাদের অনেকেই মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মূলত বাল্যবিয়ের কারণে আমাদের কন্যাশিশুদের অনেকেই অল্প বয়সে মা হয়ে যান। এর ফলে তারা অপুষ্ট শিশুর জন্ম দেন, যার মাশুল দিতে হচ্ছে জাতিকে।
অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ঘরে-বাইরে-স্কুলে কোথাও আমাদের নারী ও কন্যাশিশুরা নিরাপদ নয়। তারা নানাভাবে নির্যাতন ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। অথচ যৌন হয়রানি রোধের বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আইনের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। বাল্যবিয়ের বিশেষ ধারার ব্যবহার করে অল্প বয়সে বিয়ে দেয়ার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন অভিভাবকরা। তাই আইনে কতগুলো বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে, যাতে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে না পারে।