পল্লী বিদ্যুতের সংকট নিরসনে চেয়ারম্যানকে ৮০ সমিতির মহাব্যবস্থাপকদের চিঠি

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪১ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যমান সংকট নিরসনে ও সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন সারাদেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপকরা। গত রবি ও সোমবার দুই দিন সারাদেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নির্বাহী প্রধানের স্বাক্ষরিত এসব চিঠি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বিদ্যুৎ বিভাগে পৌঁছে দেয়া হয়।
এই প্রতিবেদকের হাতে আসা কয়েকটি চিঠি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আরইবি-পবিস একীভূতকরণ ও অভিন্ন চাকুরিবিধি বাস্তবায়নসহ প্রায় একই ধরনের বক্তব্য তুলে ধরেছেন জিএমরা। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দুই দফা দাবিতে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে আন্দোলন চলমান। দাবি আদায়ে বিভিন্ন মেয়াদে কর্মবিরতিসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালনের পর গত ২৪-০৮-২০২৪ তারিখে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে গণছুটির ঘোষণা দেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা। গত ২৬ আগস্ট পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে মেজর জেনারেল এস এম জিয়া-উল-আজিম যোগদানের পর দাবি বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তাঁর প্রতি আস্থা রেখে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে ফিরে যায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা। অন্যদিকে বিদ্যমান সংকট নিরসনে আরইবি’র সিস্টেম রিফর্মসহ অন্যান্য সমস্যার যৌক্তিক সমাধানের জন্য ০৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে বিদ্যুৎ বিভাগ। কিন্তু সিস্টেম রিফর্মসহ দাবির ব্যাপারে কমিটিকে শুরু থেকেই অসহযোগিতা করে আসছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। একাধিকবার সভা আহ্বান করা হলেও আরইবি‘র প্রতিনিধি প্রথম সভায় অংশ নেয়নি এবং অন্যান্য সভায়ও উদাসীনতা দেখায়। এমনকি আরইবি সংস্কারে তারা কেউ সম্মত নন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন।
এছাড়াও রিফর্ম কমিটির সুপারিশ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের পূর্বে কার্যক্রম গতিশীল রাখতে আরইবি এবং পবিসের সমন্বয়ে বিভিন্ন কমিটি গঠন, কমিটিতে উভয় পক্ষের সমান সংখ্যক সদস্য অনর্ভুক্তির কথা থাকলেও আরইবি তা বাস্তবায়ন না করে একের পর এক অফিস আদেশ জারির মাধ্যমে হয়রানী ও দমন-পীড়ন মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ করে যাচ্ছে। যা চেয়ারম্যানের কথার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যে কারণে সারাদেশের ৮০ভাগ অঞ্চলের ১৪ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজে নিয়োজিত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী সংক্ষুব্ধ হয়ে আছেন মর্মে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপকদের প্রেরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, সমিতিগুলোতে সরকারি, এক্সটার্নাল ও আরইবির ৮ টি অডিটসহ মোট ১০ ধরণের অডিট কার্যক্রম চলে। গত ২৯ আগস্ট এক সভায় অডিট সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত সরকারি ও এক্সটার্নাল অডিট চালু রেখে আরইবি কতৃক হয়রানি মুলক কোন অডিট না করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে অডিট কার্যক্রম চালু করা হয়। যা ঘোষিত প্রতিশ্রুতির পরিপন্থী। এছাড়া গত ৯ সেপ্টেম্বর সেনাসদরে পাঠানো এক পত্রে যার (স্মারক নং ১০৮) পল্লী বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ফোকাল পার্সন হিসেবে বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সহকারি প্রকৌশলীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ বাস্তবে এসব উপকেন্দ্রের কারিগরি প্রধানের ভুমিকা পালন করে থাকে সংস্লিষ্ট জিএম/ডিজিএম‘রা। আর নির্বাহী প্রকৌশলী ও সহকারি প্রকৌশলীরা বছরে এক বারও উপকেন্দ্রে যান না।
চিঠিতে আরো বলা হয়, বিদ্যমান সমস্যা নিরসন এবং বিদ্যুৎ বিভাগের কোন নির্দেশনাই মানছেনা পল্লী বিদ্যুাতায়ন বোর্ড। সরকারের সংস্কার উদ্যোগে কোন সহযোগিতা না করে বরং একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীদের আরো বিক্ষুব্ধ করে তুলছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর সমিতির ঠিকাদারদের অস্থায়ী কর্মীকে উপকেন্দ্র নির্মান এবং রক্ষণাবেক্ষন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে বাপবিবোর্ড। যা নজির বিহীন ও অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্ত। বোর্ডের এসব কর্মকাণ্ড পরিস্থিতিকে আরো অস্থিতিশীল করতে পারে বলে আশংকা করেন সমিতির ব্যবস্থাপকরা।
এমতাবস্থায় কালক্ষেপণ না করে বাস্তবতার নিরিখে দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ভুত পরিস্থিতির সুষ্ঠু সমাধানের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা বলেন, দীর্ঘদিন যাবত ন্যায্য দাবীতে আন্দোলন করে আসছি আমরা। বিপরীতে শুধু আশ্বাস এবং কমিটি গঠনের কাগজই পাচ্ছি আমরা। বাস্তবে দাবি পূরণের দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। বিদ্যুৎ বিভাগের কমিটিকেও আরইবি সহযোগিতা করছে না। বর্তমানে আরইবি এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে আরইবির প্রতি যে পরিমাণ ক্ষোভ ও ঘৃণা বিরাজ করছে তাতে বিদ্যমান সংকট আশু সমাধান না হলে বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারে বলেও দাবি করেন তারা।