ভোরের কাগজকে ড. ইফতেখারুজ্জামান
দুদক সংস্কার চ্যালেঞ্জিং হলেও আমি আশাবাদী

এন রায় রাজা :
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান। ছবি : সংগৃহীত
দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিকভাবে দুর্বল করে রাখা হয়েছে। এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কমিশন কাজ করবে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান। টেলিফোনে ভোরের কাগজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদক শক্তিশালী করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কয়টি পদক্ষেপ নিতে হবে তার মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ হলো- দুদকে যারা দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া। দুদক সঠিকভাবে কাজ না করার অন্যতম কারণ রাজনৈতিক বা দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ। এটা কীভাবে মুক্ত করা যায় সে বিষয়ে আমরা দেখব। এর পাশাপাশি দুদক আমলাতন্ত্রের হাতে জিম্মি। এ কারণে কোণঠাসা। এর পরিপ্রেক্ষিতে কর্মকর্তারা বা যারা নৈতিকভাবে সঠিক থাকেন তারাও অনেক সময় কোণঠাসা হয়ে যান। স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না।
তিনি বলেন, দুদক আইনের কিছু পরিবর্তন দরকার। রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য আগেই বেশ কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে, দুদকের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এ কারণে দুদক সব সময় নিজের মতো কাজ করতে পারে না। যেমন কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এভাবে দুদকের পরিবেশটাকে নষ্ট করা হয়েছে। এর বাইরে সম্পূরক আইন আছে, সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে আগে অনুমতি নেয়ার মতো বিধান রাখা হয়েছে। এটা বন্ধ করা দরকার। মানিলন্ডারিং আইনও দুর্বল করা হয়েছে। এসবের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদকের কিছু সম্পূরক সংস্থা আছে। যেমন অর্থ পাচার, আর্থিক দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ- এসব বিষয়ে দুদকের সঙ্গে একত্রে কাজ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিএফআইইউ, সিআইবিসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা। এসবও দলীয়করণ করা হয়েছে। উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতি বন্ধে এসব সংস্থাকে একত্রে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং, ঋণখেলাপি, জালিয়াতি, প্রতারণা- এসব নিরসনে সামষ্টিকভাবে কাজ করার কথা থাকলেও রাজনৈতিক বা আমলাতান্ত্রিক দলীয়করণের ফলে সংস্থাগুলো ঠিকমতো কাজ করেনি। এগুলো কীভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে তা দেখতে হবে। প্রয়োজনে আইন বা অন্যভাবে সংস্কারও করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের কমিটি বসে একটি সুপারিশমালা করবে। তার ওপর ভিত্তি করে আমরা যদি একটা আদর্শ দুদক পেয়েও যাই, এরপরও দুদক শক্তিশালী বা যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারবে না, যতদিন পর্যন্ত না আমাদের রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আসছে। আমলাতন্ত্রে যতদিন দলীয়করণ থাকবে, তার সঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের যে জোগসাজশ থাকে, সেটিই দুদককে অকার্যকর করে বা সঠিকভাবে কাজ করতে বাধা দেয়। সেটি রাজনৈতিক ব্যক্তি বা ব্যবসায়িক হোক, আমলাতান্ত্রিক হোক- তারা উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতিতে জড়িয়ে দুদককে অকার্যকর করে ফেলে। এসব জায়গায় হাত না দিলে সঠিক দুদক পাওয়া যাবে না। তাই এটি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। এসব সংস্কার যদি করতে না পারি তাহলে দুদক সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে না।
তিনি বলেন, কাজটা চ্যালেঞ্জিং, খুবই কঠিন। তবে অবশ্যই সাফল্যের সঙ্গে শেষ করার মতো। আমরা সঠিক কাজগুলো করব। তা যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে দুর্নীতি নিশ্চয় কমবে। আমাদের দায়িত্ব হবে সংস্কারের সুপারিশ করা। তবে এ কাজে তাড়াহুড়া করলে হবে না। আমি আশাবাদী হতে চাই। এখানে চ্যালেঞ্জ আছে। চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করলে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়, সেটি করতে চাই। দুদকের ভেতরের দুর্নীতি বা ক্ষমতার অপব্যবহার, অনৈতিক নিয়োগ- এসব নিয়ে যে অনিয়ম রয়েছে তা বন্ধ করতে হবে। এগুলো কার্যকর করতে পারলেই দুদক শক্তিশালী হবে, নিশ্চয়ই দুর্নীতি কমবে।
দুদক সংস্কার কমিটির প্রধান বলেন, সবেমাত্র ঘোষণা হয়েছে। যদিও এখনো পরিকল্পনা করিনি, তবে বেশ কিছু মেম্বার থাকবে এ কমিশনে। ছাত্রসহ যারা অংশীজন হবে তারাসহ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাদের ওপর ভিত্তি করে আমাদের এগোতে হবে। তবে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা তো আছেই। দুদকের জন্মলগ্ন থেকেই এর সঙ্গে আমরা জড়িত। শুরুতে যে কমিশন ছিল তার ওপর আমি একটা গবেষণাও করেছি। দুদকের জন্মই তো টিআইবির কাজের অংশ হিসেবে হয়েছিল। তাই আমি আশাবাদী একটা শক্তিশালী দুদক সৃষ্টি করতে পারব।