ত্রাণের টাকা সমন্বয়কদের ব্যাংকে কেন?

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৯ এএম

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে গত আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা গণত্রাণ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। হাজার হাজার মানুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। কেউ নগদ অর্থ, কেউ বা নিজের জমানো টাকাভর্তি মাটির ব্যাংক হাতে টিএসসিতে এসে হাজির হয়েছিল। তখন সবাই একমত ছিল, বন্যার্তদের সহায়তা করা সবার মানবিক দায়িত্ব।
কিন্তু সম্প্রতি ত্রাণ তহবিল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচনার কেন্দ্রে রয়েছে সংগৃহীত অর্থের বেশিরভাগই অব্যবহৃত অবস্থায় ব্যাংকে পড়ে থাকা নিয়ে।
বিতর্কের সূত্রপাত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে এই বিতর্কের জন্ম। তিনি জানান, ত্রাণ তহবিলের অর্থের একটি বড় অংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাংক শাখায় রাখা হয়েছে। পোস্টটি সামনে আসতেই মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, কেন ত্রাণের অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে বন্যার্তদের সহায়তায় ব্যয় করা হলো না?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিলয় মাহফুজ বললেন, ‘আমরা সবাই চেষ্টা করেছি বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে। কিন্তু এই টাকা কি ব্যাংকে ফেলে রাখার জন্য তোলা হয়েছিল?
তহবিলে কত টাকা জমা?
বন্যার্তদের সহায়তায় গত ২২ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া তহবিলে প্রায় ১১ কোটি ১০ লাখ টাকা জমা পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ইতোমধ্যে বন্যার্তদের সহায়তায় ব্যয় করা হয়েছে, আর অবশিষ্ট ৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যাংকে রাখা হয়েছে। ত্রাণের পণ্যও বিতরণ করা হয়েছে ১৯১টি ট্রাকে করে দুর্গত এলাকায়।
কিন্তু এত টাকা ব্যাংকে পড়ে থাকা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। অনেকেই মনে করছেন, এই অর্থ দ্রুত বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণ করা উচিত ছিল, কারণ এখনো বহু মানুষ অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে এবং পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে।
সমন্বয়কদের জবাব
এই বিতর্কের মধ্যে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, ত্রাণ তহবিলের অর্থের প্রতিটি পয়সার হিসাব তাদের কাছে আছে এবং অর্থের স্বচ্ছতা রক্ষায় নিরীক্ষা (অডিট) করা হচ্ছে। তারা বলেন, প্রাথমিক সহায়তা শেষে ভবিষ্যৎ পুনর্বাসন ও গৃহ নির্মাণের জন্য এই অর্থ পরিকল্পিতভাবে জমা রাখা হয়েছে।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, আমরা সিএ ফার্মের মাধ্যমে অডিট করছি এবং খুব শিগগিরই এর রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে।
পরিকল্পিত ব্যয়
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তহবিল সংগ্রহের শুরুতেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, পুরো অর্থ একবারে খরচ না করে কিছুটা সংরক্ষণ করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে পুনর্বাসন কার্যক্রমে সহায়তা করা যায়। বন্যার পানি নামার পর যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, তাদের পুনর্বাসনের কাজেই মূলত অর্থ ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ জানান, আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর নির্মাণসহ অন্যান্য কাজে অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনা করছি।
সমালোচনা ও সমর্থন
ত্রাণের টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না এমন অভিযোগ উঠলেও, সমন্বয়করা জোর দিয়ে বলছেন যে, কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি এবং জনস্বার্থেই তারা কাজ করছেন।
অন্যদিকে, কিছু সমালোচক ত্রাণের অর্থ অন্য খাতে ব্যবহারের সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তবে সমন্বয়করা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তারা পূর্ণ স্বচ্ছতার মাধ্যমে সব অর্থ ব্যয়ের হিসাব জনসমক্ষে তুলে ধরবেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পুনর্বাসন কার্যক্রমে অর্থব্যয় করবেন।
আরো পড়ুন: শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার
ত্রাণ তহবিলের স্বচ্ছতা নিয়ে মানুষের উদ্বেগ স্বাভাবিক। সমন্বয়কদের দাবি, তারা সঠিক সময় ও পরিকল্পনার সঙ্গে অর্থ ব্যবহার করছেন। তবে মানুষ আশা করছে, দ্রুতই বন্যার্তদের সহায়তায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে এবং ত্রাণের টাকার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।