ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের আদালত তার এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে আছাদুজ্জামান মিয়াকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এসময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খিলগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক গোলাপ মাহমুদ সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আদালতে সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আশ্রাফ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাত সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভার এলাকা থেকে আছাদুজ্জামান মিয়াকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাবের একটি দল।

২০১৫ সালে খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান জনিকে পুলিশি হেফাজতে ‘ক্রসফায়ারের নামে হত্যা’র অভিযোগে আছাদুজ্জামান মিয়া, পুলিশের বর্তমান ও সাবেক ১৩ কর্মকর্তাসহ ৬২ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর খিলগাঁও থানায় জনির বাবা ইয়াকুব আলী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। 

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক ৮টা ১৫ মিনিটে নূরুজ্জামান জনি ও তার সহপাঠী মইন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট ভাই মনিরুজ্জামান হীরাকে দেখতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে আসামিরা জনি ও মইনকে ডিবি পরিচয়ে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে নির্যাতন চালান। পরে তাদের ডিবি ঢাকা মেট্রোপলিটন-দক্ষিণ কার্যালয়ে নিয়েও নির্যাতন করা হয়।

সেসময় নুরুজ্জামান জনির ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুনিয়া পারভিনসহ স্বজনরা খিলগাঁও থানা, ডিবি দক্ষিণ অফিস, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিসসহ বিভিন্ন থানায় খুঁজে বেড়ান। ২ দিন ধরে খোঁজাখুঁজির পরও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

পরে ২০ জানুয়ারি রাত প্রায় সাড়ে ৩টার দিকে খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর খেলার মাঠের আশপাশের মানুষজন চিৎকার করা কণ্ঠে কান্নার শব্দ শুনতে পায়। নির্যাতিত ব্যক্তিটি পানি-পানি বলে চিৎকার ও মা-মা বলে আর্তনাদ করতে থাকেন।

ঘটনাস্থলের পাশে সি-ব্লকের বাসিন্দা লাভলী বেগম রাতের কান্নার শব্দ শুনেছে বলে জানান। এ-ব্লকের বাসিন্দা সাইফুদ্দিনের স্ত্রী সানজিদা আক্তার সেতু জানান, রাত ৩টার দিকে ‘ও মাগো, মা, মা.. বাঁচাও’ বলে কয়েকবার চিৎকার শুনেছেন।

সেসময় আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা গুলির শব্দ শুনতে পান। ভোর রাতে বাদীসহ সাক্ষীরা ও প্রতিবেশীরা খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর মাঠের দিকে গিয়ে পুলিশদের দেখতে পান। আসামিরা বলেন, নুরুজ্জামান জনি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। তার মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে।

বাদী ঢাকা মেডিকেল মর্গে গিয়ে দেখতে পান নুরুজ্জামানের বুকের বামে, ডান দিকে, দুই হাতের তালুতে ১৬টি গুলির চিহ্ন রয়েছে। তার সব শরীর ঝাঁঝরা করে ফেলেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসা করলে তারা কর্কশ ভাষায় গালিগালাজ করেন। লাশ গ্রহণ না করলে মামলা দেয়ার হুমকিও দেন তারা।