×

জাতীয়

স্পিকার শিরীন শারমিনের পদত্যাগে সাংবিধানিক অনিশ্চয়তা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

স্পিকার শিরীন শারমিনের পদত্যাগে সাংবিধানিক অনিশ্চয়তা

ছবি: ভোরের কাগজ

   

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার ২৭ দিনের মাথায় পদত্যাগ করলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। গতকাল সোমবার তিনি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে বঙ্গভবন সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে। তার এ পদত্যাগে দেশে এক সাংবিধানিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দেয়া হলেও স্পিকারের পদ তাৎক্ষণিভাবে শূন্য হয় না। পরবর্তী স্পিকারের শপথ পড়ানো পর্যন্ত তিনি দায়িত্বে থেকে যান। তবে সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে পদত্যাগ করছেন শিরীন শারমিন চৌধুরী। এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিনের পদত্যাগ করায় স্পিকার পদে শূন্যতা তৈরি হলো কিনা, সে প্রশ্ন উঠেছে। সেই সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ পাঠ কে করাবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এটা দেশে নজির বিহীন ঘটনা বলে মনে করেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রের তৃতীয় সর্বোচ্চ পদ জাতীয় সংসদের স্পিকার।

এ বিষয়ে সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, স্পিকারের পদত্যাগ একটা নজিরবিহীন ঘটনা। তবে শূন্যতা মানেই শূন্যতা, অর্থাৎ তার পদত্যাগে দেশে সংসদের স্পিকার বলে আর কেউ নেই। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এমন ঘটনা আমরা দেখেনি। তাই এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে কি হবে তা যারা দেশের ক্ষমতায় বা সরকারে আসবেন তারাই ভালো বলতে পারেন। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর অনেক কিছুই সংবিধান সম্মতভাবে হচ্ছে কি? সেভাবেই পরবর্তী সময়ে তারাই বুঝবেন কাকে দিয়ে স্পিকার বা এমপিদের শপথ বাক্য পাঠ করানো হবে। শাহদীন মালিক বলেন, এটা আমি কেন- কোনো বিশেষজ্ঞ বলতে পারবেন বলে আমি মনে করি না; কেননা, এটা দেশের ইতিহাসে এই প্রথম একটি সাংবিধানিক শূন্যতা বলেন আর অনিশ্চয়তা বলেন সেটা সৃষ্টি হয়েছে। এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, স্পিকার পদত্যাগ করেছেন, ডেপুটি স্পিকার বন্দি, তাতে সংবিধান মেনে চলতে হলে দেখা যায়, এতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তবে যারা সরকারে আছেন বা পরবর্তী সময়ে সরকারে আসবেন তারাই ভালো বলতে পারবেন, কীভাবে এ অনিশ্চয়তা ঠেকানো সম্ভব।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের-(টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, স্পিকারের পদত্যাগের ফলে একটি সাংবিধানিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে- এটা ঠিকই। তবে সংবিধানের ৭৪ ধারায় তো বলাই আছে স্পিকার পদত্যাগ করলেও পরবর্তী সংসদের স্পিকার নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান স্পিকারই বহাল থাকবেন বলে গণ্য করা হবে, অর্থাৎ বর্তমানে পরিস্থিতি এমন সৃষ্টি হয়েছে; তাতে স্পিকার না থেকেও আছেন। সংবিধান তাই বলছে। এতে অনিশ্চয়তা আছে বলে প্রশ্ন তো থেকেই যায়। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এমন অনেক কিছু করতে হচ্ছে- যা সুস্পষ্টভাবে সংবিধানে নেই। এখানে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ কাজ করে। যদি সেটা প্রয়োজনীয় হয় তাহলে স্পিকার না থেকেও পরবর্তী শপথ কে পড়াবেন সেখানেও ডকট্রিন অব নেসাসিটির মতো বিষয়টি এসে পড়ে, সেভাবেই এ অনিশ্চয়তা বা শূন্যতাকে সেভাবে পূরণ করতে হবে।

আবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের বলেছেন, এটা সংকট কিনা আমি ঠিক জানি না। তবে সংসদীয় গণতন্ত্রে বলা আছে, পরবর্তী সংসদের স্পিকার না আসা পর্যন্ত বর্তমান স্পিকার বহাল থাকবেন বা পরিচালনা করবেন। তবে এখন তো সংবিধানের অনেক কিছু পরিবর্তন করা হচ্ছে, এটাও পরিবর্তন করে নিলেই হবে। নতুন কাউকে দিয়ে নতুন স্পিকারের শপথ বাক্য পাঠ করালেই হবে। এখন তো কাঠামোগত অনেক কিছুই পরিবর্তন হচ্ছে, এরপর নির্বাচন হলে তখন হয়তো ডেপুটি স্পিকার বা অন্য কোনো ব্যক্তিকে দিয়ে নতুন স্পিকারকে শপথ বাক্য পড়ানো হবে। তিনি মনে করেন, এখন তো অনেক কিছু হচ্ছে- যা সংবিধান পারমিট করছে না; তখন রাজনৈতিক দলগুলো বসে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্য কাউকে দিয়ে এ শপথের কাজটা করলেই হবে, তখনকার সরকার বা নির্বাচিত এমপিরা সে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এদিকে গতকাল সংসদ সচিবালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্পিকারের পদত্যাগপত্রটি আমাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠানো হয়নি। স্পিকার নিজেই রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিয়েছেন। তবে সেটা সরাসরি নাকি ই-মেইলে পাঠানো হয়েছে তা বলতে পারবো না। গতকাল (সোমবার) এ পদত্যাগপত্র দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

গত ৫ জুন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেয়ার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার সদস্য ও সংসদ সদস্যপদ শূন্য হয়েছে। তবে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের পদ দুটি এখনো বহাল থাকছে বলে সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে। সংবিধানের ৭৪(২) ধারা অনুযায়ী, সংসদ সদস্য না থাকলে; সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য হলে, সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যরা অপসারণে সম্মত হলে, রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিলে, নির্বাচনের পর অন্য কোনো সদস্য তার কার্যভার নিলে, ডেপুটি স্পিকারের ক্ষেত্রে, তিনি স্পিকারের পদে যোগদান করলে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের পদ শূন্য হবে। তবে পরবর্তী স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত এ পদ দুটি ‘শূন্য হবে না’ বলে সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। তবে সংবিধানের ৭৪(৬) অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে- ‘এই অনুচ্ছেদের (২) দফার বিধানাবলি সত্ত্বেও ক্ষেত্রমতো স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার তার উত্তরাধিকারী কার্যভার না নেয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল আছেন বলে গণ্য হবে’। সংবিধানে এও বলা আছে, রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে ক্ষেত্রমতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যদিকে, সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘স্পিকারের উদ্দেশে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন’।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য হিসেবে জাতীয় সংসদে আসেন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তাকে দেয়া হয় মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। নবম সংসদের শেষ দিকে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর সেই জায়গায় আসেন তখনকার স্পিকার আবদুল হামিদ। এরপর ২০১৩ সালে ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম নারী স্পিকার নির্বাচিত হন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তারপর থেকে তিন মেয়াদে তিনিই টানা স্পিকারের দ্বায়িত্বে ছিলেন।

এদিকে গত ২৭ আগস্ট স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। রংপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে স্বর্ণশ্রমিক মুসলিম উদ্দিন (৩৮) নিহত হওয়ার ঘটনায় ২৭ আগস্ট শিরীন শারমিন চৌধুরী, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। আবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হককে (টুকু) ১৫ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয়। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় শামসুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App