পল্লী বিদ্যুৎকর্মীদের গণপদত্যাগ ও গণছুটির কর্মসূচি প্রত্যাহার
দুই দফা দাবি বাস্তবায়নে সরকারের আশ্বাস

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গণপদত্যাগ ও গণছুটি কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আহ্বানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গণপদত্যাগ ও গণছুটি কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আন্দোলনরতদের পক্ষ থেকে দেয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এদিকে নাশকতার আশঙ্কায় সরকার দেশের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির স্টেশনগুলোর নিরাপত্তা জোরদারের ঘোষণা দিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারাদেশের ৮০ ভাগ অঞ্চলের প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর পক্ষ থেকে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দ্বৈতশাসন ও ৪৭ বছর ধরে চলমান শোষণ, বৈষম্য ও নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য আরইবি-পবিস একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকরি বিধি বাস্তবায়ন এবং সব চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের ২ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বন্যাদুর্গত মানুষের কথা বিবেচনায়, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে, ছাত্র সমন্বয়ক এবং দেশের সুশীল সমাজের আহ্বানে এবং সর্বোপরি আপামর জনসাধারণের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পূর্বঘোষিত গণপদত্যাগ ও গণছুটি কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলো।
বাপবি বোর্ডের নব যোগদানকৃত চেয়ারম্যান এবং বিদ্যুৎ বিভাগ দায়িত্ব নিয়ে আরইবি এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রিফর্ম কার্যক্রম ও সব চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের দাবি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করবেন এবং অনতিবিলম্বে কার্যকরী পদক্ষেপ দৃশ্যমান হবে মর্মে প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা আন্দোলন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্তে একমত হয়েছেন।
জানা গেছে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা অনেকদিন ধরেই দুই দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করে আসছিলেন। কিন্তু এই দাবি বাস্তবায়ন এবং মন্ত্রণালয়ের দেয়া প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নে অগ্রগতি না হওয়ায় ৪০ হাজারের বেশি কর্মী গণছুটির আবেদন করেন। তারা একসঙ্গে ছুটিতে গেলে দেশের বড় অংশে ব্ল্যাকআউটের আশঙ্কা দেখা দেয়।
এর আগেও দাবি আদায়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল ও গ্রাহক সেবা চালু রেখে গত ৫ মে থেকে সারাদেশে একযোগে টানা ৫ দিন কর্মবিরতি হয়। এরপর বিদ্যুৎ বিভাগের মধ্যস্থতায় সমঝোতা সভার পর কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩৮ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বাক্ষরসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে দাবি পেশ করা হয়। কিন্তু এরপরও কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় গত ১ জুলাই থেকে টানা ১০ দিন কর্মবিরতির ঘোষণা আসে। তখন বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব, তিনজন অতিরিক্ত সচিব, আরইবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে সভায় এবং আরইবি-পবিস একীভূতকরণ/রিফর্মের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ আরইবি-পবিস একীভূতকরণ/রিফর্ম এখন সময়ের দাবি হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং গত ১ আগস্ট আরইবি, সমিতি এবং মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে ৯ সদস্যের অপর একটি কমিটি গঠন করা হয়। একই তারিখে আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় সমিতির দুজন জিএম এবং ৪ জন ডিজিএমকে শাস্তিমূলক বদলির আদেশ দেয় আরইবি।
আন্দোলনের সমন্বয়ক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রকৌশলী রাজন কুমার দাস বলেন, দাবি নিয়ে বেশ কয়েকবার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত ৮ আগস্ট পল্লী বিদ্যুৎ, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে সভায় যে সিদ্ধান্ত হয় তা অফিস অর্ডার আকারে প্রকাশ করা হয়নি। পল্লী বিদ্যুৎ এবং বিদ্যুৎ বিভাগ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। অথচ আমাদের দুই দফা দাবি ন্যায্য ও যুক্তিসংগত বলেও কর্মকর্তারা সভায় বলেছেন। তাই এবার আমরা ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি। বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয়ার পর আমরা সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
দেশে ৬টি বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি। গ্রামাঞ্চলের ৮০ শতাংশ এলাকার ৩ কোটি ৬০ লাখের বেশি গ্রাহককে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে।