স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে দেশের ১০টি জেলা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
ত্রিপুরার উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের প্রবল চাপ ও অবিরাম বৃষ্টিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছেন অন্তত ১০টি জেলার মানুষ। দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এ জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক অবস্থা ফেনীর। ক্রমশ অবনতি ঘটছে বন্যা পরিস্থিতির। কয়েকটি শহরসহ নিম্নাঞ্চলের জনপদ প্লাবিত। বানের প্রবল স্রোতে ভেসে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, গবাদিপশু। ভাসছে মানুষও। আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন দুর্গতরা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ৪০ লাখ মানুষ।
ডুবে গেছে বিভিন্ন সড়ক, বন্ধ রয়েছে সড়ক যোগাযোগ; নেই বিদ্যুৎ সংযোগও। ফেনীসহ বেশির ভাগ এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ফেনীসহ বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে বানভাসি মানুষের বাঁচার আকুতি প্রবল হয়ে উঠেছে। বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবীরাও উদ্ধার তৎপরতায় যোগ দিয়েছেন। সেনাবাহিনীর ২৪টি বোট এবং ছাত্র আন্দোলনের ৫০টি বোট উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। বিতরণ করা হচ্ছে ত্রাণও।
তবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় এবং পানির প্রবল স্রোতের কারণে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খোলা হয়েছে ১৫৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র। রাত ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৭ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তাতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন, কিছুক্ষণ পরপর সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট রুটের রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল বিকালে এক অনুষ্ঠানে জানান, ১০ জেলায় ৩৬ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত। নিহত হয়েছেন দুজন আর নিখোঁজের খবর নেই। প্রধান উপদেষ্টা বন্যা পরিস্থিতির সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন। বন্যাকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করবেন উপদেষ্টারা।
এর আগে বিকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৫০ উপজেলার ৩৫৭টি ইউনিয়ন বন্যার কবলে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে চার লাখ ৪০ হাজার ৮৪০টি পরিবার। ২৯ লাখ ৪ হাজার ৯৬৪ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৫৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে ৭৫ হাজার ৬৬৮ জন লোক এবং ৭ হাজার ৪৫৯টি গবাদিপশুকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য মোট ৪৪৪টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি : ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিতে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলার নি¤œাঞ্চলে বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। বিভিন্ন আবহাওয়া সংস্থার বরাতে সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ৭টি নদীর ১৪ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও কাছাকাছি উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসতে পারে। এ সময় এ অঞ্চলের ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের মুহুরী, গোমতী, হালদা নদীর নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে স্থিতিশীল থেকে পরবর্তী সময়ে উন্নতি হতে পারে।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা নদনদীর পানি কমছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এসব নদনদীর পানি কমে যেতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ফেনী জেলায় বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রণালয় জানায়, সেনাবাহিনী থেকে ১৬০ জন সদস্য ৪০টি উদ্ধারকারী যান ফেনী জেলায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। নৌবাহিনীর ৭১ জন সদস্য ও আটটি উদ্ধারকারী যান কাজ করছে।
ছয়জনের মৃত্যু : কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বুধবার মধ্যরাতে মাছ ধরতে গিয়ে স্থানীয় একটি ব্রিজের নিচে পড়ে বন্যার পানির তোড়ে তলিয়ে যান দাউদপুরের কেরামত আলী (৪৫)। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলের অদূরে তার মরদেহ ভেসে ওঠে। পরে তাকে উদ্ধার করে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে বলে জানান নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেবদাস দেব। রাতেই পরিবারের সদস্যরা তার মরদেহ নিয়ে যান।
বুধবার বিকালে বৃষ্টির মধ্যে বৈদ্যুতিক পিলারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নগরীতে রাফি (১৫) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক যোবায়ের হোসেন তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রাফি নাঙ্গলকোটের ছোটরার বাসিন্দা। বুধবার সকালে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সোনাকাটিয়া (আদর্শ গ্রাম) পূর্বপাড়া এলাকায় বন্যার পানিতে মাছ ধরার সময় মাথায় গাছ পড়ে শাহাদাত হোসেনের (৩৪) মৃত্যু হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। তার বাবার নাম কানু মিয়া।
এদিকে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজালা পারভীন রুহি জানান, বুধবার দুপুরে উপজেলার বীরচন্দ্রপুর গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে সুবর্ণা আক্তার নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়েছে। ঘরে পানি ঢুকে পড়লে সুবর্ণা বের হতে গিয়ে পা পিছলে একটি গর্তে পড়ে যান। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া বানের পানিতে ডুবে ফেনীর ফুলগাজীতে একজন ও রামুতে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ফেনী প্রতিনিধি শুক দেবনাথ তপন জানান, বন্যাকবলিতরা বলছেন, ফেনীতে এমন ভয়াবহ বন্যা আগে দেখেনি কেউ। প্রতিনিয়ত পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ফুলগাজী, পরশুরাম এবং ছাগলনাইয়া উপজেলার প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকা ডুবে গেছে। বৃহস্পতিবার সকালে বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল ফেনীর মুহুরী নদীর পানি। ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়ন, আনন্দপুর, মুন্সীরহাট, আমজাদহাট ইউনিয়নের ৫০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পরশুরামের মির্জানগর, চিথলিয়া, বক্সমাহমুদ এবং পৌরশহরসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ছাগলনাইয়ার পাঠান নগর, রাধানগর, শুভপুর ইউনিয়নেরও বেশ কয়েকটি গ্রাম বন্যাকবলিত। এসব এলাকায় তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, পুকুর ও ফসলি জমি। কিছু কিছু এলাকায় বানের পানি মানুষের ঘরের ছাদ ও টিনের চাল ছুঁয়েছে।
ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রায়হান মেহেবুব বলেন, তিন উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ, বেশির ভাগ এলাকায় পানির নিচে। এছাড়া ফেনী সদর, সোনাগাজী ও দাগনভূঁইয়া উপজেলার অনেক এলাকাও বন্যাকবলিত।
তিন উপজেলায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পানিবন্দি লোকজনকে উদ্ধারে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, স্থানীয় লোকজন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা কাজ করছে। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ৩০ হাজারের মতো মানুষ উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার কথা জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। এছাড়া ফেনীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উঁচু ভবনকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, ফেনী শহরেও পানি জমেছে। বেশির ভাগ উপজেলায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ নেই।
পরশুরামের মির্জানগর এলাকা থেকে পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে আশ্রয়ের সন্ধানে ফেনী শহরের স্টেশন রোডের একটি হোটেলে এসে উঠেছেন ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, রাতভর আতঙ্ক, মানুষের আর্তি আর বন্যার প্রবল বিধ্বংসী রূপ দেখেছি। প্রাণ বাঁচাতে ভিটেমাটি ছেড়ে সামান্য কয়েকটি কাপড়চোপড় সম্বল করে বাড়ি থেকে বের হতে বাধ্য হয়েছি।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, পাহাড়ি ঢল ও বন্যার কবল থেকে লোকালয় রক্ষা করতে সোনাগাজী উপজেলার বড় ফেনী নদীর উপর নির্মিত মুহুরী রেগুলেটরের (জলকপাট) ৪০টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, জুলাই মাসের শুরুতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি বেড়ে ১৫ স্থানে ভাঙে। সেসব স্থানে জোড়াতালির মেরামতের পর চলতি মাসের শুরুতে বাঁধের আরো ১১ স্থানে ভেঙে গিয়ে প্লাবিত হয় ১০০টির বেশি গ্রাম। যেখানে অবকাঠামো, ধান, ফসল ও মাছের ক্ষতি ছাড়িয়ে যায় ৩০ কোটি টাকার বেশি। সেই ক্ষতি না পোষাতেই ১৫ দিনের মাথায় আবার বন্যা। গত বন্যায় ভেঙে যাওয়া ২৬টির সঙ্গে এবার নতুন করে আরো একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এবারের বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ কয়েশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ফেনীর জেলা প্রশাসক সেলিনা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, বন্যাকবলিতদের উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি কাজ করছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনও মাঠে আছে। তিনি জানান, এর মধ্যে ২ হাজারের বেশি পরিবারকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হচ্ছে। যেসব এলাকা বেশি প্লাবিত হয়েছে সেসব এলাকার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি রিয়াজ আহমেদ জানান, আখাউড়া স্থলবন্দরের পাশে বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে ভারত থেকে তীব্র বেগে পানি ঢুকছে। বন্দর ডুবে গেছে পানিতে। এতে বন্ধ হয়ে পড়েছে বন্দরের বাণিজ্য ও যাত্রী পারাপার। তাছাড়া উপজেলার বাউতলা, বীরচন্দ্রপুর, কালিকাপুর, বঙ্গেরচর, সাহেবনগরসহ অন্তত ৩৬টির বেশি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী (চ.দ.) মো. মনজুর হোসেন বলেন, এই মুহূর্তে আখাউড়ার হাওড়া নদী ও জাজীর খালসহ বিভিন্ন স্থানে পানি বিপৎসীমার উপরে আছে। এছাড়া কালন্দি খাল, কাটা খাল ও জাজিরা খালের পানি বাড়ায় বন্যা হয়েছে। বুধবারের তুলনায় বৃহস্পতিবার হাওড়া নদীর পানি ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর চেয়ে বেশি অতিক্রম করলে আরো এলাকা প্লাবিত হতে পারে। গত দুই দিনে সাত ইউনিয়নের ৩৬ গ্রামের ১ হাজার ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
আখাউড়া ইউএনও গাজালা পারভীন জানান, উপজেলার ৫৪টি প্রাইমারি বিদ্যালয় ও দুটি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে। দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্গতদের মধ্যে দেয়া হবে। এছাড়া যারা ঝুঁকি নিয়ে এখনো বাড়িতে অবস্থান করছেন- তাদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার চেষ্টা চলছে।
কুমিল্লা থেকে এম ফিরোজ মিয়া জানান, কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে জানিয়েছেন, ওই সময় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যা সকালের চেয়ে ২২ সেন্টিমিটার বেড়েছে। তিনি জানান, বাঁধ রক্ষায় সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা কাজ করছেন। বাঁধের বেশ কিছু ঝুঁঁকিপূর্ণ অংশ দিয়ে বুধবার রাত থেকে চুইয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে।
বানের পানিতে তলিয়ে গেছে নদীর পাড়ে থাকা ঘরবাড়ি। প্রতিনিয়ত প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। নদীতে তীব্র স্রোতের যে কোনো সময় গোমতীর শহর রক্ষা বাঁধ ধসে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে চুইয়ে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। বর্তমানে টানা বৃষ্টির কারণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
এদিকে বাঁধ ভাঙার ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন গোমতীর দুই তীরের বাসিন্দারা। এছাড়া টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ এরই মধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তলিয়ে গেছে শত শত মাছের ঘের, পুকুর, দিঘি, আউশ ধান ও আমনের বীজতলা। নদীর চর তীরবর্তী শাকসবজিসহ নিম্নাঞ্চলের ফসলও তলিয়েছে।
নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ ও চৌদ্দগ্রামের অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কুমিল্লা আদর্শ সদর, লাকসাম, বুড়িচং, বরুড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর ও দাউদকান্দির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় নিদারুণ কষ্টের মধ্যে পড়েছেন ওইসব এলাকার মানুষ। নাঙ্গলকোটের সাতবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সামছুল আলম বলেন, আমাদের পুরো গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বেশির ভাগ বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। বন্যা আগেও দেখেছি, তবে এমন বন্যা কখনো দেখিনি।
নাঙ্গলকোট ইউএনও সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, উপজেলার প্রায় শতভাগ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আমরা দুর্গতদের তালিকা করার চেষ্টা করছি। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো চালু করা হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
চৌদ্দগ্রাম ইউএনও মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, আকস্মিক এমন বড় বন্যায় মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছে। এলাকাগুলো থেকে বিচ্ছিন্নভাবে খবর পাচ্ছি। চেয়ারম্যানরা অধিকাংশ কাজে যোগ না দেয়ায় ইউপি সচিবদের থেকে তথ্য নিচ্ছি। তথ্য পেলে ত্রাণসহ অন্যান্য সহায়তা শুরু করব। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বুড়িচংয়ের বাজেবাহেরচর গ্রামের বাসিন্দা সুমন মিয়া বলেছেন, আমাদের গ্রামসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি নিচু গ্রাম গোমতীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ঘরে থাকতে ভয় পাচ্ছি। সাপ-বিচ্ছু ঘরে ঢুকে পড়তে পারে।
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ইউএনও রোমেন শর্মা বলেন, গোমতী নদীর পানি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। উপজেলার পাঁচথুবি ও আমড়াতলি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে। আমরা মাঠে রয়েছি।
বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় কুমিল্লায় বুধবার পর্যন্ত ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলী জানান। তিনি বলেন, পানি বাড়ায় বৃহস্পতিবার আরো কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হবে। বন্যাদুর্গতদের চাল ও শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের এসপি খায়রুল আলম জানান, বুধবার গভীর রাত থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পানিতে প্লাবিত হতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কুমিল্লার নবগ্রাম রাস্তার মাথা থেকে চৌদ্দগ্রাম বাজার পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়ক তলিয়েছে। একই সময়ে ফেনীর লালপুল এলাকায় অন্তত ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ডুবেছে। ওই অংশে যানবাহন চলাচলে চরম বেগ পেতে হচ্ছে। হাইওয়ে থানা পুলিশের পাশাপাশি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কুমিল্লা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার অন্তত ৫টি স্থানে পানি বেড়েই চলেছে। ধীরে ধীরে প্লাবিত এলাকা বাড়ছে। একই অবস্থা ফেনীর লালপুলের আশপাশ এলাকার। এসব স্থানে মহাসড়ক ডুবে যাওয়ায় যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী হানিফ এন্টারপ্রাইজের সুপারভাইজার সোহেল মিয়া বলেন, ভোরে যখন কক্সবাজার যাচ্ছিলাম, তখনই মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম ও ফেনীর বিভিন্ন এলাকায় পানি দেখেছি। মহাসড়ক প্লাবিত হওয়ায় গাড়ি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী একটি বাসের চালক আবদুল কাদের বলেন, মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম ও ফেনীর বিভিন্ন স্থানে হাঁটুপানি। ফলে গাড়ি চালানো অনেক কষ্টকর। ধীরগতি হওয়ায় সড়কে যানজট লেগেছে। প্রতিনিয়ত পানি বাড়ছে। এতে যাত্রীদের পাশাপাশি চালকরাও আতঙ্কে রয়েছে।
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি শংকর চৌধুরী জানান, বন্যায় চরম বির্পযয়ের মুখে খাগড়াছড়ি। রেকর্ড বৃষ্টিপাতের কারণে প্লাবিত হয়েছে গ্রাম থেকে শহর। সম্প্রতিকালে খাগড়াছড়ি শহর না ডুবলেও বৃহস্পতিবার সকালে থেকে তা-ও প্লাবিত হতে শুরু করেছে। পানি প্রবেশ করছে মেরুং ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রেও। প্লাবিত হয়েছে দীঘিনালার তিন ইউনিয়নের ৫০ গ্রাম। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মাইনী নদীর পানি বাড়তে থাকায় এর মধ্যেই ডুবে গেছে জেলার বিভিন্ন সড়ক, কৃষি জমি ও পুকুর। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বুধবার খাগড়াছড়ি জেলা সদরে পানি কমতে শুরু করায় আশ্রয়কেন্দ্র থাকা অনেক পরিবার বাড়ি ফিরতে শুরু করেছিল। তবে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে পানি বাড়তে শুরু করে। সকালেই শহরের ভেতরে প্রবেশ করে বন্যার পানি।
আদালত সড়ক, মাস্টারপাড়া, মিলনপুর, বায়তুশরফসহ খাগড়াছড়ি পৌর শহরের সাতটি সড়ক এখন পানির নিচে। জেলা সদরের বেশির ভাগ এলাকার মানুষ পানিবন্দি। পৌর শহরের বাসিন্দা আরাফুলত ইসলাম বলেন, এত পানি গত ১০ বছরেও দেখি নাই। শহরের মধ্যে সাধারণত পানি উঠে না। এবার শহরের প্রধান সড়কগুলোও ডুবে গেছে।
স্থানীয় বেলাল হোসেন বলেন, কেবল খাগড়াছড়ি সদরের তিন হাজারের মতো পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে অনেকেই ফের আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।
এদিকে ফেনী নদীর পানি বেড়ে ডুবে গেছে রামগড় পৌরসভাসহ নিচু এলাকা। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন সহস্রাধিক মানুষ। মঙ্গলবার বিকাল থেকে সাজেক সড়কের কবাখালি, বাঘাইহাট বাজার ও মাচালং বাজারসহ একাধিক অংশ পাঁচ থেকে ছয় ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে সড়কটিতে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাহাড়ি ঢলে হেডকোয়ার্টার এলাকায় দীঘিনালা-লংগদু সড়ক ডুবে যাওয়ার রাঙ্গামাটির লংগদুর সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে দীঘিনালার মেরুং, বোয়ালখালি ও কবাখালি ইউনিয়নের ৫০ গ্রাম। ডুবে গেছে মেরুং বাজার।
মেরুং ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ঘনশ্যাম ত্রিপুরা বলেন, বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। মাইনী নদীর পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এর মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রও ডোবা শুরু হয়েছে। মেরুং বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রের নিচতলা ডুবে গেছে। সেখানে আশ্রয় নেয়া ২৯টি পরিবারকে বিদ্যালয় ভবনে দ্বিতীয় তলায় তুলে দেয়া হয়েছে।
খাগড়াছড়ির প্রথম শ্রেণি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, খাগড়াছড়ি পৌরসভায় ১৮টিসহ পুরো জেলায় ৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। আশ্রিতদের জন্য শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম অফিস জানায়, ফেনী থেকে ফাজিলপুর পর্যন্ত রেললাইন পানিতে ডুবে যাওয়ায় এবং বন্যার পানিতে কুমিল্লায় রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার পর চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। আর দুপুর ১টায় সিলেটের পথে ট্রেন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয় ঢাকায়। এদিন সকালে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ও সিলেটের উদ্দেশে তিনটি ট্রেন ছেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু রেললাইনে পানির কারণে সিলেটগামী ট্রেনটি চট্টগ্রামে ফেরত আনা হয়।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ফেনীতে রেললাইন ও রেলসেতুর ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফেনী স্টেশনে বন্যার পানি জমে রয়েছে। কুমিল্লা ও সিলেটে কয়েকটি স্থানে রেললাইনে পানি আছে। এই অবস্থায় ট্রেন চালানো সম্ভব নয়। তাই আপাতত ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ট্রেন চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অধীনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, সিলেট, জামালপুর ও চাঁদপুরসহ বিভিন্ন গন্তব্যে দৈনিক ১১টি আন্তঃনগর ট্রেন চলে। এছাড়া কক্সবাজার, নাজিরহাট, চাঁদপুর, ঢাকা ও ময়মনসিংহ গন্তব্যে কয়েকটি লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল করে। বন্যার কারণে এসব ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
ঢাকা থেকে সিলেটের পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানান কমলাপুর স্টেশনের মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ১টা থেকে সিলেটের পথে ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছি। পথে রেললাইনে পানি উঠে গেছে। এছাড়া ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি নন্দন দেবনাথ জানান, টানা বর্ষণে রাঙ্গামাটি জেলায় অন্তত ২০টি স্পটে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। বৃহস্পতিবার সকালে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ঘাগড়ার কলাবাগান এলাকায় পাহাড় ধসে প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। পরবর্তী সময়ে সড়ক বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সড়ক থেকে মাটি সরিয়ে যান চলাচল সচল করে।
তবে মহালছড়ি এলাকায় সড়কের ওপর পানি থাকায় বন্ধ রয়েছে রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি আন্তঃজেলা যান চলাচল। জেলার কাউখালী উপজেলার ইছামতি খাল ও কাউখালী খালে পানি বেড়ে ডুবে গেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২০টি ঘর।
এদিকে জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে বেড়াতে আসা আড়াইশ পর্যটক সাজেক ত্যাগ করতে পারেননি। কাচালং নদীর পানি বেড়ে খাগড়াছড়ি-সাজেকের একাধিক স্থানে সড়ক ডুবে যাওয়ায় পর্যটকরা গতকাল থেকে আটকা পড়েছেন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার বলেন, আপাতত সাজেকে আটকা পড়া পর্যটকদের বিকল্প উপায়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি ঘটেছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হলেও রাতের বৃষ্টিতে আরো কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন জানান, জেলায় ছোট-বড় কয়েকটি পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটলেও কোথাও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বাঘাইছড়িতে বন্যা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় প্রায় দুই হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। এছাড়া রাঙ্গামাটি সদরে পাহাড় ধসে ঝুঁকিতে আছে ১৩৬৬ মানুষ। প্রাণহানি এড়াতে ৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ঝুঁকি এড়াতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে।
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি সালেহ এলাহী কুটি জানান, টানা বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে মৌলভীবাজার জেলার কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ও জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে। জেলা সদর, রাজনগর, কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি বাড়তে থাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে রাজনগর উপজেলার কদমহাটায় মনু নদীর বাঁধ ভেঙে নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েকটি ইউনিয়নে নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার ঝুঁকিতে থাকা পৌর শহরে মাইকিং করে সতর্ক করছে জেলা প্রশাসন। যে কোনো সময় ভাঙতে পারে শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ। তাই শহরের দোকানগুলোর পণ্যসামগ্রী নিরাপদ স্থানে নিতে বলা হচ্ছে। একই সঙ্গে যারা বাসাবাড়ির নিচতলায় অবস্থান করছেন তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে ওঠার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।
প্লাবিত হয়ে মৌলভীবাজার-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে বন্যা। এরই মধ্যে পানিবন্দি হয়ে আছে কয়েক লাখ মানুষ।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ভয়াবহভাবে পানি বাড়ছে। নদনদীর বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। আমরা জিও ব্যাগ ফেলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। নদনদীর বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও এলাকায় মনু নদে ভাঙন দেখা দিয়েছে। রাজনগর এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, নদনদীর বাঁধ উপচে পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে কতটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে তা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।