সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী-এমপিদের লাল পাসপোর্ট বাতিল হচ্ছে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৪, ১১:৫৫ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বা লাল পাসপোর্ট বাতিল হচ্ছে। এসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আর পদে না থাকায় তাদের লাল পাসপোর্ট বাতিল করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগ থেকে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বুধবার (২১ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিকিউরিটি সার্ভিস ডিভিশনের সিনিয়র সচিব মো. মশিউর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মো. মশিউর রহমান বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হয়েছে, স্বল্প সময়ের মধ্যে আদেশ জারি করা হবে। আমরা ইতিমধ্যেই অভিবাসন ও পাসপোর্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি। তারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে এবং আশা করছি শিগগির আদেশ জারি করা হবে।
সুরক্ষাসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগ) মো. আলী রেজা সিদ্দিকী বলেন, ‘ডিপ্লোম্যাটিক (কূটনৈতিক) পাসপোর্ট পাওয়ার যোগ্যতা যাদের আছে, তারা এখন যদি সেই পদে না থাকেন, বিলুপ্ত হওয়া মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার সদস্য, বিলুপ্ত সংসদের এমপি, প্রধানমন্ত্রীর যে উপদেষ্টারা ছিলেন যারা এখন নেই তাদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল হবে।
তিনি বলেন, চুক্তিভিত্তিক অনেকে ছিলেন যারা সচিব পদমর্যাদার এবং এমন মর্যাদায় যেখানে ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্টের প্রাপ্যতা আছে, তাদের চুক্তি বাতিল হয়েছে। এছাড়া অনেক সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে দেয়া হয়েছে। কেমন ক্যাটাগরির যারা ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট নিয়েছেন এবং বর্তমানে ওই পদ ধারণ করেন না, সেই কূটনৈতিক পাসপোর্টগুলো বাতিল করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, এগুলো আমাদের সিস্টেম থেকে মুছে ফেলতে হবে। যদি কেউ সারেন্ডার (আত্মসমর্পণ) করে তবে তো হলোই। যদি কেউ সারেন্ডার না করে সেজন্য আমরা এটা করছি। যাতে কেউ সারেন্ডার না করলেও তার পাসপোর্ট অ্যাকটিভ না থাকে। এটাকে সিস্টেম থেকে বাতিল করা হবে। বাতিলের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে পাসপোর্টের ডিজিকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। আমরা হয়তো অফিসিয়ালি বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিতে পারবো।
আলী রেজা সিদ্দিকী আরো বলেন, কিছু কিছু ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও ইস্যু করা হয়। আমরা যতটুকু জেনেছি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সেই উদ্যোগটা (বাতিলের) নিয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, লাল পাসপোর্ট বাতিল হয়ে গেলে সাবেক মন্ত্রী-এমপি যাদের নামে ফৌজদারি মামলা রয়েছে বা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের সাধারণ পাসপোর্ট পেতে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে আদালতের আদেশ পেলেই তারা সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ভারতে যান। তখন থেকে তিনি দেশটিতে অবস্থান করছেন। শেখ হাসিনা কোন মর্যাদায় ভারতে আছেন, সে বিষয়ে দেশটির সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। এ বিষয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তারা ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার যে পাসপোর্ট রয়েছে, সেটির সুবাদে তিনি অন্তত দেড় মাস কোনো ভিসা ছাড়া ভারতে অবস্থান করতে পারেন।
২০১৮ সালের ১৫ জুলাই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ‘সংশোধিত ট্রাভেল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ নামে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। তাতে উল্লেখ আছে, উভয় দেশের ডিপ্লোমেটিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীদের ৪৫ দিনের মেয়াদে ভিসা ছাড়াই বসবাসের জন্য (ভিসা ফ্রি রেজিম) থাকতে দিতে দুই দেশ পারস্পরিকভাবে রাজি হয়েছে।
এই সমঝোতা স্মারকের কথা উল্লেখ করে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই পাসপোর্টের সুবাদে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিসা ছাড়া ভারতে অবস্থান করছেন। তিনি দেশ ছেড়েছেন ১৭ দিন আগে। আরো ২৮ দিন তিনি ভিসা ছাড়া সেখানে অবস্থান করতে পারবেন। তবে এ সময়ের আগে যদি তার লাল পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যায়, তাহলে তাকে বিকল্প চিন্তা করতে হবে। একইসঙ্গে ভারতকেও এ নিয়ে চিন্তা করতে হবে।