×

জাতীয়

প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা

প্রশাসনে গতি আনার তাগিদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রশাসনে গতি আনার তাগিদ

ছবি: সংগৃহীত

   

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে একে একে রাষ্ট্রের সংস্থাগুলো কাজে ফিরছে। পুলিশ, বিচার বিভাগের পর গতকাল প্রশাসনেও গতি ফেরাতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সরকারের এমন নির্দেশ পেয়ে পুরোদমে কাজও শুরু করেছেন প্রশাসনে থাকা কর্মকর্তারা। প্রসঙ্গত, প্রশাসনের অধিকাংশ দপ্তরই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনে। এজন্য গতকাল সোমবার তিনি নিজেই তার অধীনে থাকা ২৫টি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করে নানা নির্দেশনা দিলেন। বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়া এই বৈঠক শেষ হয় দুপুর সোয়া ১টার দিকে। দীর্ঘ এই বৈঠকে আগামী সাত দিনের মধ্যে কী কী কাজ করতে হবে তারও রূপরেখা তৈরি হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সচিবদের সঙ্গে বৈঠকের আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গত ৫ আগস্ট সরকার বদল হওয়ার তিন দিন পর গত ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন। এরপর কয়েকদিন ধরে অন্য সেক্টরের মতো প্রশাসনেও কাজের গতি স্তিমিত হয়ে পড়েছিল।

গতকাল প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশের পর সচিবরা কাজে গতি আনার কথা বলেন। এর আগে গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা তার আওতাধীন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোর সিনিয়র সচিব ও সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোকে যত দ্রুত সম্ভব কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। তরুণদের কাজে লাগিয়ে স্বচ্ছতা ও সংবেদনশীলতা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান তিনি। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে মন্ত্রণালয়গুলোর কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন সচিবরা। এ সময় জরুরি সরবরাহ নিশ্চিত করার কথাও বলেন প্রধান উপদেষ্টা। একইসঙ্গে বন্দর ও রেলপথ দ্রুত চালুর নির্দেশ দেন তিনি। এছাড়া কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে এবং সার, জ্বালানি ও বিদ্যুতের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান অধ্যাপক ইউনূস। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

সচিবদের সঙ্গে বৈঠক শুরুর আগে সকাল ১০টার দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সেনাপ্রধান। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের আইনশৃঙ্খলার উল্লেখযোগ্য উন্নতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখপাত্র গণমাধ্যমকে বলেন, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার সময় পরিস্থিতির উন্নতিতে সাহায্য করার জন্য সেনাবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকার প্রশংসা করেন। বৈঠকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে বিকালে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশিষ্ট ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ফিরে জনপ্রশাসন সচিব মেজবাহ উদ্দিন

চৌধুরী বলেন, তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) তারুণ্যের শক্তির ওপর আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেছেন- তারণ্যের শক্তির মাধ্যমে যে পরিবর্তন আসছে, এর মাধ্যমে একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা যেন এ সুযোগ কাজে লাগাই। সব মন্ত্রণালয়, বিভাগে যেভাবে আমরা কাজ করছিলাম তারচেয়েও ভালোভাবে ফাংশন (কাজ) করতে হবে। যেন আমরা প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে পারি। এ বিষয়ে তিনি সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছেন। এজন্য সাত দিন সময় দিয়ে এখন থেকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। জনপ্রশাসন সচিব বলেন, যেসব মন্ত্রণালয়ে আগে মন্ত্রী ছিল সেসব মন্ত্রণালয়ের কাজ যাতে স্থবির হয়ে না যায়, সচিবরা সেসব কাজ নিজ উদ্যোগে শুরু করেন তা নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সার, বিদ্যুৎ, কৃষি, জ্বালানি, বন্দর এবং খাদ্যসহ জরুরি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে সাত দিনের মধ্যে তালিকা করে কাজ শুরু করতে হবে এবং তালিকাগুলো প্রধান উপদেষ্টাকে দিতে হবে। মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগপ্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আছি। সরাসরি আমরা কীভাবে নথি উপস্থাপন করব, কীভাবে নির্দেশনাগুলো গ্রহণ করব, মূলত এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

পদোন্নতিবঞ্চিতদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র সচিব বলেন, এ বিষয়গুলো আমরাই প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করেছি। আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ১৫-১৬ বছরে যেসব বিসিএসের ব্যাচের পদোন্নতি হয়েছে, যারা পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন, তাদের বিষয়গুলো সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করছি। এরইমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়গুলো সামনে এগিয়ে নেব। যারা পিএসসি থেকে বিসিএসের সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন ২৮ থেকে ৪২ ব্যাচের, তাদের বিষয়গুলো আমরা উপস্থাপন করেছি প্রধান উপদেষ্টার কাছে। আমরা আশা করছি, আগামীকাল বা পরশুর মধ্যে এ বিষয়ে একটা প্রতিকার নিতে পারব। চলমান প্রকল্পগুলো নিয়ে কোনো কথা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, মূলত মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নিয়ে কাজ করা এবং দপ্তরগুলো নিয়ে কাজ করাটাই এখনকার মূল কাজ। যে কাজগুলো সচিবালয় পর্যায়ে বা দপ্তর পর্যায়ে নিষ্পত্তি করা যাবে, সেগুলো যেন নিষ্পত্তি করা হয়।

তিনি আরো বলেন, এছাড়া অন্য যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো নিয়ে সাত দিনের মধ্যে জরুরিভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব। যেগুলোর বিষয়ে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না সেগুলো নিয়ে তার (প্রধান উপদেষ্টা) কাছে আমরা সিদ্ধান্ত চাইব। সামনে ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। সরকারি ছুটির দিন। সেক্ষেত্রে আপনারা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন- জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

কিন্তু মাত্র তো তিন দিন বাকি আছে। মাঠপর্যায়ে কোনো নির্দেশনা দেয়ার বিষয়ে আপনারা কিছু ভাবছেন কিনা; এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের এখানে আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। এমন কিছু যদি থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই সেটি আমরা জানতে পারব, কিন্তু আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বৈঠকের বিষয়ে বলেন, স্বচ্ছ জবাবদিহিতামূলক পরিবেশ যাতে থাকে, দেশের তরুণ সমাজ যে বিষয়গুলো সমনে নিয়ে এসেছে- বিশেষ করে স্বচ্ছতা এবং সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা। আর কাজগুলো যেন যতœ সহকারে করা হয় এ বিষয়গুলোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

এদিকে বৈঠক শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে পরিপত্র জারি করে বলা হয়েছে, স্বীকৃত বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের সাময়িক বরখাস্ত করে শুরু করা বিভাগীয় কার্যক্রম ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তা না হলে ১৮০ কার্যদিবস শেষে শিক্ষক-কর্মচারীরা স্বীয় পদে পুনর্বহাল হবেন এবং পূর্ণ বেতন ও অন্যান্য সুবিধা পাবেন বলেও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

আরো পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব হচ্ছেন শফিকুল আলম

প্রসঙ্গত, অধ্যাপক ড. ইউনূসের হাতে যেসব দপ্তর আছে সেগুলো হলো- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ; প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়; সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ; শিক্ষা মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়; খাদ্য মন্ত্রণালয়; গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়; ভূমি মন্ত্রণালয়; বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়; কৃষি মন্ত্রণালয়; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; রেলপথ মন্ত্রণালয়; জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়; নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়; পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়; মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়; তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়; প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; বাণিজ্য মন্ত্রণালয়; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়; বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়; মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App