শিক্ষার্থী হত্যার প্রতিবাদে শহীদ মিনারে চিকিৎসকদের প্রতিবাদ সমাবেশ

ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৪, ০২:৩৭ পিএম

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চিকিৎসকদের প্রতিবাদ সমাবেশ। ছবি : ভোরের কাগজ
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নির্বিচারে গুলি করে ৮ জন নিরপরাধ শিশুসহ সহস্রাধিক মানুষকে খুনের প্রতিবাদ ও ছাত্র-ছাত্রীদের ৯ দফা দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে চিকিৎসকেরা।
শুক্রবার (২ আগস্ট) সকাল ১০টায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘সর্বস্তরের চিকিৎসক ও মেডিকেল-ডেন্টাল শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এই প্রতিবাদ করেন তারা। রাজধানীর বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
এসময় ‘আমার ভাই মরলো কেন? জবাব চাই জবাব চাই'; ‘বিচার চাই বিচার চাই, আমার ভাই হত্যার বিচার চাই'; ‘দিয়েছিতো রক্ত আরো দেব রক্ত, রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়'; ‘তোর কোটা তুই নে, আমার ভাই ফিরিয়ে দে'; ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস'; ‘দালালি না রাজপথ?, রাজপথ রাজপথ'; ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না'; ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক'; ‘এক দুই তিন চার, শেখ হাসিনা স্বৈরাচার'- প্রভৃতি স্লোগান দেন তারা।
বক্তব্য প্রদানকালে তারা চিকিৎসক সজীবকে হত্যা করা, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের আক্রমণ ও গুলি চালানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। পাশাপাশি সব শ্রেণিপেশার মানুষের অধিকার আদায়, নিহতদের বিচারের দাবি ও অবৈধভাবে গ্রেপ্তারকৃতদের জামিনের দাবি করেন চিকিৎসকরা।
বক্তব্য প্রদানকালে চিকিৎসকেরা বলেন, কেবল লোকমুখেই জানি যে, আমরা এ দেশের মালিক, কিন্তু এর প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। কিন্তু বাস্তবে আমরা নাগরিক না, আমরা এ দেশের দাস, যেখানে জীবনের কোনো মূল্য নেই। আমাদের মেধাবী চিকিৎসক সজীবকে হত্যা করা হয়েছে, দেশের নানা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। তাদের বুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
সমাবেশে আব্দুল্লাহ চৌধুরী নামে এক চিকিৎসক বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যারা আন্দোলন করছে তারা কেউ সংবিধান সম্পর্কে অবগত নয়। তার উদ্দেশে একটা কথা বলতে চাই, আজকাল স্কুলের ছেলেমেয়েরা ১৪ থেকে ১৫টি বই নিয়ে স্কুলে যায়। অথচ সংবিধানের একটা ছোট অংশ কখনোই শেখানো হয়নি। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সবসময় চেয়েছে যাতে শিক্ষার্থীরা সংবিধান না শিখেই বড় হয়।
আরো পড়ুন : আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে যে মন্তব্য করলেন ওবায়দুর কাদের
চলমান আন্দোলনে আবু সাইদের মৃত্যুর ঘটনা প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, সরকারের উচিত ছিল আবু সাঈদের বাসায় যাওয়া, তা না করে মেট্রোরেলের জন্য মায়া কান্না করেছে। মৃত মানুষের জীবন ফিরে না আসে না কিন্তু সম্পদ আবারো গড়া যায়। দেশে যে বৈষম্য ও অরাজকতা চলছে তা রুখে দিতে ছাত্র সমাজ মাঠে নেমেছে। দেশের সব চিকিৎসক শিক্ষার্থীদের পাশে আছে।
তারা আরো বলেন, ২০১৮ সালে ভোট দিতে গিয়ে আমরা শুনি যে ভোট দেয়া হয়ে গেছে। আমার সঙ্গে রোহিঙ্গার তফাৎ কোথায় জানি না। দেশে বসবাস করেও যদিও আমরা নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে আমি আর রোহিঙ্গাদের মধ্যে পার্থক্য নেই।
প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে চিকিৎসকেরা একটি মিছিল নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল টাওয়ারের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে শহীদ মিনারের মোড়েই পুনরায় তাদের আটকে দেয়া হয়। কিছুক্ষণ সেখানে স্লোগান দিয়ে তারা চলে যান।