জামায়াত-শিবিরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কী পরিণতি হবে?

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ০৫:০৯ পিএম
যুদ্ধাপরাধী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অসংখ্য সম্পদ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে শত শত কোটি টাকা আয় হয়। যা তারা দলের শক্তি বাড়াতে কাজে লাগায়। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে গত ২৮ জুলাই সরকার জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছে জামায়াতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিণতি কী হবে? অর্থের উৎস এবং সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর সুযোগ বন্ধ না করে শুধু দল নিষিদ্ধ করলেই সুফল মিলবে কী! বরং এসব সম্পদ রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে আরো বেশিমাত্রায় ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। সরকার নির্বাহী আদেশে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় দলটির প্রকাশ্য রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেল।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, ক্যাডারভিত্তিক এ দলটির প্রকাশ্য কার্যক্রম না থাকলেও তারা একেবারে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে এমনটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। বরং নানা ছদ্মাবরণে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবে। আর সেক্ষেত্রে এই বিপুল অর্থসম্পদের উৎস কাজে লাগাবে তারা।
বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জামায়াতের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে আশির দশকে গড়ে উঠেছিল একের পর এক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা ট্রাস্ট, দিগন্ত মিডিয়া, কেয়ারি লিমিটেডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যতম।
এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ছিল। তবে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের ফলে জামায়াত ঘরানার এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আর যেগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সেগুলোর পরিধিও সীমিত হয়ে পড়েছে।
মূলত আশির দশকের শুরুর দিকে জামায়াত-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও পেশাজীবীদের উদ্যোগে গড়ে ওঠে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন মীর কাসেম আলী। তবে সারাদেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে জামায়াত নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। ফুড প্রসেসিং, কৃষি শিল্প, সুপারশপ, রিয়েল এস্টেট থেকে শুরু করে নেভিগেশন ব্যবসায়ও তাদের অর্থলগ্নি রয়েছে।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। কিন্তু সরকার কোন প্রেক্ষাপটে এমন প্রতিকূল অবস্থায় এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা নিয়ে চিন্তার বিষয় রয়েছে।
তিনি আরও জানান, জামায়াত নিষিদ্ধের ফলে প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটের তেমন কোনো পটপরিবর্তন হবে না। তবে জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার পর আরো শক্তিশালী ও জোটবদ্ধ হয়ে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করবে।
এছাড়া অর্থনৈতিকভাবেও তারা অনেক শক্তিশালী। এজন্য নিষিদ্ধ করার পর দলের নেতাকর্মীদের শক্তভাবে মোকাবিলা করতে না পারলে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি, হামলা, নাশকতাসহ আরো বহু ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সরকারকে এ বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।
মূলত গত এক দশকে জামায়াতের প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপ হয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। যেগুলো এখনো টিকে আছে, সেগুলোর অবস্থাও ভালো নেই। মীর কাসেম আলীর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত দিগন্ত মিডিয়া লিমিটেডের অবস্থাও বেহাল। এ গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা দিগন্ত টেলিভিশন ২০১৩ সালের ৬ মে থেকে বন্ধ। এছাড়া দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকাটি চালু থাকলেও অবস্থা ভালো নয় বলে জানা গেছে।