দেশবাসীর কাছে আমি বিচার চাই, অপরাধটা কী করেছি: প্রধানমন্ত্রী

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৪:৩১ পিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসার জন্য যা যা লাগবে করে দেব এবং করে দিচ্ছি। যাদের অঙ্গহানী হয়েছে, তাদের কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজনের ব্যবস্থা নেবে তার সরকার। যাতে তারা আবার সুস্থ মানুষের মত চলাফেরা করতে পারে। নিজেদের কাজ করতে পারে। আমাদের সাধ্যমত আমরা করে দেব, কিন্তু দেশবাসীর কাছে আমি বিচার চাই। অপরাধটা কি করেছি? এই ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ আর কেউ যেন এই দেশে চালাতে না পারে, সেই জন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই।
শনিবার (২৭ জুলাই) সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সন্ত্রাসী হামলায় আহতদের দেখতে শেরেবাংলা নগরের পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন (নিটোর) পরিদর্শন শেষে আবেগঘন কণ্ঠে এই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। আহতদের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবেগাপ্লুত হতে দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী আহত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।
নিটোর পরিচালক অধ্যাপক ড. কাজী শামীম উজ্জামান আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেন।
সরকার প্রধানের সঙ্গে এসময় অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মহাখালীতে অবস্থিত সেতু ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সংশ্লিষ্টরা এসময় উপস্থিত ছিলেন। সরকার প্রধান একইসঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজার ধ্বংসযজ্ঞও পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’র ফল আজকের এই অবস্থা। জালিয়ে পুড়িয়ে সব একদিকে ছারখার। আর কত মানুষ প্রাণ হারাল, কতগুলো মানুষ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সমস্ত দাবি মেনে নেয়ার পরেও তাদের সেই শাটডাউন কেন শেষ হচ্ছে না তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
২০০১ সালেও বিএনপি-জামায়াত এই রকম তান্ডবলীলা চালিয়েছিল। আওয়ামী লীগের প্রায় ২১ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়। কত মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছে, হাত-পা কেটে দিয়েছে, চোখ তুলে নিয়েছে, অত্যাচার-নির্যাতন ও নারীদের পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবার ২০১৩, ‘১৪ ও ‘১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস। চারিদিকে আগুন লাগানো, গাড়ির মধ্যে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা। আবার ২০২৩ সালে পিটিয়ে পুলিশ হত্যা। নেতা-কর্মী মেরে গাছে ঝুলিয়ে রাখা, বার বার পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা-এটা কোন ধরনের রাজনীতি আমি জানি না।
তিনি নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে আহতদের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও শেখ হাসিনা বলেন, যেখানে আমি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি, মানুষের জীবন মান উন্নয়ন করেছি। ২০০৮ সালের আর আজকে ২০২৪ সালের বাংলাদেশএক নয়, আমাদের অর্থনীতি কত উপরে উঠে গিয়েছিল, সেই অর্থনীতিটাকে পঙ্গু করে বাংলাদেশকে আবার ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করার ষডযন্ত্র করে বিএনপি-জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডাররা। এটাই বোধ হয় এর পেছনের ষড়যন্ত্র।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাংলাদেশকে যখন একটা জায়গায় নিয়ে আসলাম, তখন জ্বালাও পোড়াও চারিদিকে। যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষকে সেবা দেয়, সেইগুলোর উপর বেশি তান্ডবলীলা চালানো হয়। মেট্রোরেলে চড়ে কত অল্প সময়ের মধ্যে মানুষ গন্তব্যে পৌঁছাতে এবং ফিরতে পারতো। সেখানে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, সাধারণ মানুষ সকলেই যেতে পারতেন। সেই স্টেশনগুলো ধ্বংস করে এখন আবার ট্রাফিক জ্যাম আর মানুষের কষ্ট। কোভিড-১৯ চলাকালে যে হাসপাতালে মানুষ চিকিৎসা পেয়েছে সেখানেও আগুন দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা এভাবে আগুনে পুড়িয়ে মানুষকে আবারও কষ্টের মধ্যে ফেলে দিল তাদের বিচার এদেশের মানুষকেই করতে হবে। আমি শুধু সকলের সহযোগিতা চাই। আর কোন মায়ের কোল খালি হোক, তা আমি চাই না। আমিতো বাবা-মা সব হারিয়েছি। আমিতো জানি হারাবার কত কষ্ট। সেই কষ্ট বুকে নিয়েই ’৭৫ এর পর রিফিউজি হিসেবে প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলে এক রকম জোর করেই ’৮১ সালে বাংলার মানুষের জন্য দেশে ফিরে আসেন।
নিজের ছোট ছোট সন্তানদের রেখে দেশে ফিরে আসার স্মৃতি রোমন্থন করে বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে জাতির পিতার কন্যা বলেন, আমি আমার সন্তানদের জন্য কতটুকুই বা করতে পেরেছি, নিজেরা চাকরি-বাকরি করে নিজেদের লেখাপড়া করেছে। কিন্তু বাংলার মানুষের জন্য করেছি। আজ অন্তত বাংলার মানুষের ভাত কাপড়, চিকিৎসা, কাজের ব্যবস্থা সবইতো করে দিচ্ছিলাম। যখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেলাম, তখন আবার এই তান্ডব করে। ঠিক যে জায়গাগুলো মানুষকে সেবা প্রদান করে সেই জায়গাগুলোতেই আঘাত।