কোটা সংস্কার
আন্দোলনকে সংঘাতে ঠেলে গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩৯ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি-জামায়াত চক্র সংঘাত ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি প্রভুদের সহযোগিতায় ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। বিভিন্ন সময়ে ছাত্র ও জনতার বিভিন্ন ন্যায়সঙ্গত ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনে তারা অনুপ্রবেশ করে সেগুলোকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে ’৭১-এ পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানাতে চাইছে।
বুধবার (১৭ জুলাই) বিকেলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র প্রতিনিধিদের এক জরুরি সভায় এসব কথা বলেন নির্মূল কমিটির নেতারা। কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জামায়াত-বিএনপি চক্রের অনুপ্রবেশ, রাজাকারদের পক্ষে স্লোগান এবং উদ্ভূত সংঘাতময় পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য সংগঠনের এই যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নির্মূল কমিটির সভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদসন্তান আসিফ মুনীর।
সভায় কোটা সংস্কারের ন্যায্যতা, সংক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীদের আবেগ ও অনুভূতিকে পুঁজি করে তাদের আন্দোলনে স্বাধীনতারিবোধী মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তির অনুপ্রবেশ, মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কটুক্তি করে ’৭১-এ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী গণহত্যাকারী, নারীধর্ষণকারী রাজাকারদের মহিমান্বিত করে স্লোগান দেয়া, গতকাল (১৬ জুলাই) ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষে ৬ জনের মৃত্যু এবং শত শত আহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় ।
গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়, সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের জন্য ছাত্রছাত্রীদের চলমান আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে আরম্ভ হলেও সুযোগ বুঝে বিএনপি-জামায়াত চক্র বাইরে থেকে সমর্থনের কথা বলে তরুণদের একটি ন্যায়সঙ্গত ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণতি করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এতে অনুপ্রবেশ করে। জামায়াত-বিএনপির ছাত্রকর্মীরা দলনিরপেক্ষ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুযোগে বিভিন্ন সময়ে সড়ক অবরোধ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিরোধ ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। জামায়াত-বিএনপির ছাত্রকর্মীরা মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাস থেকে বেরিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাদীপ্ত একটি ঐতিহাসিক স্লোগানকে বিকৃত করে ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেয়। মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয় এবং উভয় পক্ষের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এ দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রয়োজন। আমরা কখনো ছাত্রদের হাতে অস্ত্র দেখতে চাই না।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে যাতে কোনোভাবে দেশের অর্থনীতি ও জনজীবন বিপর্যস্ত করে সরকার পতনের উদ্দেশে যেন ব্যবহার করতে না পারে, এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান নির্মূল কমিটির নেতারা।
নেতারা বলেন, একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক কোন অবস্থায় যাঁদের কারণে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে, সেই মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করতে পারেন না। সর্বস্তরের নাগরিকদের সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কোটার প্রয়োজন হয়। দেশ যত উন্নত হবে, কোটার প্রয়োজন তত কমতে থাকবে।
সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের ভেতর উপস্থিত ছিলেন- অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, শহীদসন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী, লেখক ব্লগার মারুফ রসূল, চারুশিল্পী ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী, চলচ্চিত্রনির্মাতা ইসমাত জাহান, সংস্কৃতিকর্মী শাহীন উদ্দিন আহমেদ, সমাজকর্মী কেশব রঞ্জন সরকার, সমাজকর্মী এ বি এম মাকসুদুল আনাম, সমাজকর্মী কামরুজ্জামান অপু, ছাত্রনেতা হারুণ অর রশিদ, চলচ্চিত্রনির্মাতা লুবনা শারমিন, চারুশিল্পী শেখ শাহনেওয়াজ আলী পরাগ, চলচ্চিত্রনির্মাতা সাইফ উদ্দিন রুবেল, ড. তপন পালিত, সমাজকর্মী হাসান আব্দুল্লাহ বিপ্লব, অ্যাডভোকেট রত্নদীপ দাস রাজু, সাংবাদিক সাইফ রায়হান, আবৃত্তিশিল্পী মো. শওকত আলী, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবু, সমাজকর্মী পূর্ণিমা রানী শীল, ড. তানজীর মান্নান রূপন, অনলাইন এক্টিভিস্ট এ এস এম শরিফুল হাসান, চারুশিল্পী ইফতেখার খান বনি, সমাজকর্মী আলমগীর কবির, সমাজকর্মী মো. হেলালউদ্দিন, সংস্কৃতিকর্মী শামস রশীদ জয়, আবৃত্তিশিল্পী আরেফিন অমল, মানবাধিকারকর্মী ফয়সাল হাসান তানভীর, সমাজকর্মী প্রাণতোষ তালুকদার, সমাজকর্মী আবদুল হালিম বিপ্লব, সমাজকর্মী কাজী রেহান সোবহান ও সমাজকর্মী মো. আবদুল্লাহ।
এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন খোরশেদ আলম, এস এম লুৎফর রহমান, সান্দ্রা নন্দিনী, রাসেল খান নিলয়, নির্মূল কমিটির ঢাকা মহানগরের সদস্য মো. আলমগীর হোসেন ও দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ সায়মন।