হাজার টাকার রাউটারে লাখ টাকার জালিয়াতি, পল্লী বিদ্যুতে দুর্নীতির আখড়া

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৪, ০১:২০ পিএম
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে কেনাকাটায় বিশাল দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি ৩০ হাজার টাকার একেকটি রাউটার ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকায়, ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার প্রিন্টার ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকায় এবং ৬০ হাজার টাকার কম্পিউটার ৫ লাখ ৭২ হাজার ৮৬২ টাকায় কিনেছে। একইভাবে ল্যাপটপ, স্লিপ প্রিন্টার, এসিসহ বিভিন্ন পণ্য বাজার দরের চেয়ে কেনা হয়েছে অনেক বেশি দামে। এসব মালপত্র বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে সরবরাহ এবং স্থাপন করেছে বিদ্যুৎ বিতরণকারী এই রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি।
জানা গেছে, একটি প্রকল্পের আওতায় ১১টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জন্য এসব মালপত্র কিনেছে আরইবি। এর মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডব্লিউজিএল ৫টি এবং এইচইএল ৬টি সমিতিতে মালপত্র সরবরাহ করেছে। একই প্রকল্পের আওতায় একই কাজের জন্য দুই ধাপে এসব মালপত্র কেনা হলেও প্রতিষ্ঠান দুটির দামের ক্ষেত্রে রয়েছে বিশাল পার্থক্য।
সম্প্রতি ১১টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে ছয়টি সমিতিতে মালপত্র সরবরাহের মূল্যতালিকা গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। এর মধ্যে তিনটি সমিতিতে ডব্লিউজিএল ৫০টি কম্পিউটার সরবরাহ করেছে। প্রতিটির দাম ৫ লাখ ৭২ হাজার ৮৬২ টাকা হিসাবে মোট ২ কোটি ৮৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অথচ বাজারে ওই মানের একটি কম্পিউটারের আসল দাম মাত্র ৬০-৬৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে একই প্রকল্পে এইচইএল ৩টি সমিতিতে ৪০টি একই ধরনের কম্পিউটার সরবরাহ করেছে মাত্র ৫৭ হাজার টাকা করে। যার মোট মূল্য ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
এদিকে, বিল পরিশোধের পর গ্রাহককে রসিদ দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি প্রিন্টার কিনেছে আরইবি। এর মধ্যে ডব্লিউজিএল তিনটি সমিতিতে ৬১টি প্রিন্টার সরবরাহ করেছে প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। প্রতিটি প্রিন্টারের দাম ধরেছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯০৯ টাকা। অথচ বাজারে মানভেদে এ ধরনের প্রিন্টারের দাম ১৫ হাজার থেকে ৩২ হাজার টাকা। অন্যদিকে তিনটি সমিতিতে ৪০টি প্রিন্টার সরবরাহ করেছে এইচইএল। তাদের প্রতিটি স্লিপ প্রিন্টারের দাম মাত্র ১৬ হাজার ৩৭০ টাকা।
২৫টি লেজার প্রিন্টার সরবরাহ করেছে ডব্লিউজিএল। প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। যার প্রতিটির সত্যিকারের বাজারমূল্য মানভেদে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অন্যদিকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা করে ২০টি লেজার প্রিন্টার সরবরাহ করেছে এইচইএল। ২৫টি নেটওয়ার্ক রাউটার সরবরাহ করে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা নিয়েছে ডব্লিউজিএল। প্রতিটি রাউটারের দাম নিয়েছে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। একই ধরনের ২০টি রাউটার সরবরাহ করেছে এইচইএল। প্রতিটির মূল্য নিয়েছে ৩৫ হাজার ৩৯৫ টাকা। অথচ এর বাজারমূল্য মানভেদে ৩০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা। একেকটি ল্যাপটপের দাম প্রায় ৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা নিয়েছে ডব্লিউজিএল। অথচ এই মানের ল্যাপটপের বাজারমূল্য ৯০-৯৫ হাজার টাকা। আর এইচইএল ৩৮টি ল্যাপটপ সরবরাহ করেছে ১ লাখ ১ হাজার ৭৬১ টাকা করে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে আরইবির চেয়ারম্যান অজয় কুমার চক্রবর্তী উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে দায় এড়ান।