কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের যে বার্তা দিলেন ওবায়দুল কাদের

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৫:১৫ পিএম

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের|| ছবি: সংগৃহীত
ছাত্রদের আন্দোলনের তোপে পরে সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালে পূর্বের সব কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে সরকার। কিন্তু ২০২১ সালে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে রিট করলে চলতি বছরের ৫ জুন এক রায়ের মাধ্যমে আবারো ফিরে আসে ২০১৮ সালে বাতিল করা সেই কোটা পদ্ধতি। এরপর কোটা বাতিলে ফের একাট্টা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আবারো সেই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে তরান্বিত করতে গত ১ জুলাই রাজপথে নামেন তারা। ইতোমধ্যে এই আন্দোলন দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে রাজধানী। উত্তাল সারাদেশ।
এমতাবস্থায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বর্তমানে কোটা বাতিলের বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। তাই চূড়ান্ত রায় পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করতে হবে। তিনি জনদুর্ভোগ যেন না হয় এমনভাবে আন্দোলন করার আহব্বান জানিয়েছেন আন্দোলনকারীদের । সোমবার (৮ জুলাই) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কাদের।
আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ উচ্চ আদালত বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করেই রায় প্রদান করবেন বলে আমরা মনে করি। শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে সংগ্রাম শুরু করেছেন, তার মূল চালিকা শক্তি হলো মেধাবী জনগোষ্ঠী। শিক্ষিত, দক্ষ, স্মার্ট প্রজন্ম গঠনের মধ্য দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের সংগ্রামকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে নিতে মেধাবী তরুণ প্রজন্ম আমাদের প্রধান প্রয়োজন।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে পরিপত্র জারি করে সব ধরনের কোটা বিলোপ করেছেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। দেশের উচ্চ আদালত কোটা বাতিলের পরিপত্র বাতিল করেছেন। সরকারপক্ষের আইনজীবী এই রায়ের বিপক্ষে আপিল করেছেন। সরকার কোটা বাতিলের দাবির প্রতি আন্তরিক বলেই অ্যাটর্নি জেনারেল আপিল করেছেন।
আরো পড়ুন:শেখ হাসিনা-শি জিনপিং বৈঠকে তীক্ষ্ণ নজর ভারতের
আরো পড়ুন: ৪ মন্ত্রীর সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের রুদ্ধদ্বার বৈঠক নিয়ে যা জানা গেল
আরো পড়ুন: সড়ক-মহাসড়কে শিক্ষার্থীদের 'বাংলা ব্লকেড', দুর্ভোগে মানুষ
উচ্চ আদালতে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করা আইনসিদ্ধ নয় বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আদালত উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে নিশ্চয়ই একটা চূড়ান্ত রায় প্রদান করবেন। উচ্চ আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত সবার অপেক্ষা করা উচিত। কোনো ধরনের উত্তেজনা, রাস্তাঘাট বন্ধ করে মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি পরিহার করা উচিত। বিশেষত এইচএসসি পরীক্ষার্থী-অভিভাবকদের অসুবিধা হয় যে কর্মসূচিতে, সে ধরনের কর্মসূচি পরিহার করা দরকার।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এর আগে যে কোটা আন্দোলন বাংলাদেশে হয়েছিল, সেখানকার প্রথম সারির ৩১ জন নেতা কিন্তু বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। এটার হিসাব সাংবাদিকেরা নিতে পারেন।
জনদুর্ভোগ কমাতে কোটাবিরোধী আন্দোলনে সরকারের কঠোর হওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, সরকারপক্ষ তো আপিল করছে। এখনো আদালত চূড়ান্ত রায় দেননি। এর মধ্যে তারা কীভাবে হস্তক্ষেপ করেন? তারা বলছেন, জনদুর্ভোগ হয়—এমন কর্মসূচি পরিহার করা উচিত। আদালতের রায়, হোক তারপর দেখা যাবে।
আন্দোলন স্থগিত বা প্রত্যাহারের অনুরোধ করছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি যা বক্তব্য দিয়েছি, এ থেকে বুঝে নিন। আমার যা বলার বলে দিয়েছি। ভাষাটা বুঝে নিন। তাহলে হবে।’
সম্প্রতি সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিরোধিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখানে ভুলবোঝাবুঝি থাকতে পারে। তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগও আছে। আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের এখনো বসা হয়নি। সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাস্তব পরিস্থিতির আলোকে। এখানে আমরা সুপিরিয়র, না শিক্ষক সুপিরিয়র—এ বিতর্কে যাব না। আমরা যাব যার পদমর্যাদার ভিত্তিতে, যেটা বাস্তবসম্মত, সেটায় যাব।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।