মেয়র তাপস
আগ্রাসন বন্ধ না হলে জলাবদ্ধতা পুরোপুরি যাবে না

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৪:৩৫ পিএম

ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস
ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা পুরোপুরি নিরসন করতে হলে খালগুলো পুনরুদ্ধার এবং দীর্ঘস্থায়ীভাবে দখলমুক্ত রাখার আর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু খালের জমিতে সরকারি-বেসরকারি দখলদারদের আগ্রাসন পুরোপুরি বন্ধ না হলে জলাবদ্ধতাও পুরোপুরি দূর করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
শনিবার (৬ জুলাই) ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত সংলাপে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ভূমিদস্যুদের আগ্রাসন, সেটা সরকারি সংস্থা হোক বা বেসরকারি সংস্থা হোক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।
মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকার পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করা ভালো সিদ্ধান্ত ছিলো। এতে কাজ করা সহজ হয়েছে। তিনি বলেন, দায়িত্ব নেয়ার সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। এতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার জলাবদ্ধতা ৭০ শতাংশ কমেছে। বাকী ত্রিশ শতাংশ দূর করতে কাজ করছেন।
আরো পড়ুন: নদী-খাল দখল করে ভবন বানিয়েছে, উদ্ধারে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে
তিনি আরো বলেন, “কারণ হলো আমরা খালগুলো, নর্দমাগুলো পেয়েছি। একটি জায়গায় আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছি, পরিকল্পনা করতে পারছি সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারছি। এর আগে যেভাবে ছিলো তাতে কোনোভাবেই সমন্বয় করা সম্ভব ছিলো না।”
শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ২০২১ সালে ডিএসসিসি এলাকায় ১৬১টি স্থান চিহ্নিত করে ১৩৬টি জায়গার জলাবদ্ধতা নিরসন করা হয়েছে। নতুন করে ৫০টি জায়গা চিহ্নিত করেছেন। ওয়াসা থেকে পাওয়া ১১টি খালের মধ্যে জিরানি, মান্ডা, শ্যামপুর এবং কালুনগর খাল গুরুত্বপূর্ণ। খালগুলো নিয়ে এরইমধ্যে একটি প্রকল্পের অনুমোদন পাওয়া গেছে। “পানি উন্নয়ন বোর্ডের যে খালগুলো রয়েছে সেগুলো আমরা এখনো বুঝে পায়নি। বিভিন্ন প্রকল্পের কারণে এই খালগুলো আমরা পায়নি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালগুলো পেলে সব খাল, জলাশয় নিয়ে আমরা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবো।”
সংলাপে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ঢাকা একটা শহর যেখানে ১৪টি সংস্থা কাজ করে। প্রতিটি সংস্থা নিজেকে স্বাধীন বলে দাবি করে কিন্তু তাদের কাজের কোনো জবাবদিহি নেই। “আজ সিটি করপোরেশন রাস্তা করে দিলে কাল আবার ওয়াসা রাস্তা কেটে রাখে। এ অবস্থায় নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করে কি লাভ হবে। দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকা সবার নিচে। এ জন্য টেকসই উন্নয়নের বিকল্প নেই।”
আরো পড়ুন: ভারত রাজনৈতিক আর চীন উন্নয়নের বন্ধু: কাদের
শ্যামল দত্ত বলেন, হাতিরঝিলের খালি জায়গা কিভাবে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আমি ওই ব্যাপারে আর না বলি। কিন্তু এই সব আগ্রাসন, ভূমিদস্যুদের আগ্রাসন…সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দিনদিন আমাদের সামনে আরো প্রতিকূলতা সৃষ্টি করছে। এ থেকে পরিত্রাণ না পাওয়া পর্যন্ত পূর্ণরূপে আমরা জলাবদ্ধতা নিরসন করতে পারবো এটা বলা যায় না।
শ্যামল দত্ত আরো বলেন, দখলদাররা রাজনৈতিক ভাবে খুবই শক্তিশালী। এজন্য তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। তিনি বলেন, হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবন ভেঙ্গে জলাশয় উদ্ধার করা হলেও সেখানে আবার ভরাট করা হয়েছে।
“হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা হয়েছে ওইটার অবস্থা কি জানেন? ওইটার অর্ধেক নাই এখন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য। তাইলে ভবনটা ভাঙলেন কেনো? পরিবেশবাদীরা যারা ওইটা নিয়ে আন্দোলন, বড় বড় মামলা করলেন তারা কই? সেই পরিবেশবাদীরা আবার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কনসালটেন্ট।”
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন ডুরার সভাপতি ওবায়দুর মাসুম, সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মোল্লা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান, ডুরার সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়শ্রী ভাদুড়ী, ডিএসসিসির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বাবুল, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নার্গিস মাহতাব বক্তব্য রাখেন।