×

জাতীয়

সাদিক অ্যাগ্রোতেও বেনজীরের বিশাল বিনিয়োগের সন্ধান

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ০৯:৩৩ পিএম

সাদিক অ্যাগ্রোতেও বেনজীরের বিশাল বিনিয়োগের সন্ধান

ছবি: সংগৃহীত

   

পশু আমদানিতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্তেও ওই আইনের তোয়াক্কা না করে সাদিক অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারীর পরিচয় দেয়া মো. ইমরান হোসেন দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে চারটি দেশ থেকে গরু আনছেন ইমরান। নির্ভিগ্নে এ কাজগুলো করতে একটি মাফিয়া সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন তিনি।

ওই সিন্ডিকেটে সদস্য হিসেবে রয়েছেন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা ছাড়াও বিতর্কিত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বড় অঙ্কের বিনিয়োগ রয়েছে বলে জানা গেছে।

এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশ থেকে ইমরান বিভিন্ন জাতের গরু দেশে এনে চড়া দামে বিক্রি করছিলেন। এসব গরু আনতে সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেননি তিনি।

আবার যেসব জাতের গরু দেশে আমদানি নিষিদ্ধ সেসব গরুও তিনি দেশে নিয়ে এসেছেন। এসংক্রান্ত বেশ কিছু ছবি এবং তথ্য-প্রমাণ ঘেঁটে এসব বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

২০০৮ সালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধসংলগ্ন ভাঙা মসজিদের গলিতে ২০ লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন ইমরান হোসেন। বর্তমানে তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক।

জানা গেছে, সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে গরু পাচার কারবারে সাদিক অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেনের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী বেশ কিছু ব্যক্তি। সম্প্রতি ইমরান মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে ১২টি গরুর একটি চালান দেশে নিয়ে আসেন। গরুগুলো থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে সংগ্রহের পর উখিয়া হয়ে নরসিংদীর শেখ ক্যাটল ফার্মে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গরুগুলো ট্রাকে করে ঢাকার মোহাম্মদপুরে সাদিক অ্যাগ্রোতে নিয়ে আসা হয়। এ কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেন তাঁরই ঘনিষ্ঠ শেখ জাফর ছোটন ও নজিবুল্লাহ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে গরুগুলো বাংলাদেশে প্রবেশের সময় সব ধরনের সহযোগিতা দেন কক্সবাজারের হলুদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস। গরুগুলো ঠিকভাবে বাংলাদেশে নিয়ে আসাকে সফল অভিযান আখ্যা দিয়ে ফেসবুক পেজে ধন্যবাদ দেওয়া হয়। ঢাকা ক্যাটল ক্লাব ফেসবুক পেজে দেওয়া ওই স্ট্যাটাসে কমেন্ট করেন শেখ জেআর নামে এক ব্যক্তি। তিনি লেখেন, ‘যে ঝুঁকি নিয়ে আমরা এ কাজ করেছি এটা আপনার কারণে সম্ভব হয়েছে। আমরা অনেকেই নতুন স্বপ্ন দেখছি।’

একদিকে অবৈধ পথে চোরাকারবারির মাধ্যমে দেশে পশু আনছেন ইমরান, অন্যদিকে সংবাদ সম্মেলন করে অবৈধ পথে পশু আমদানি না করতে নিষেধ করছেন। কোরবানির ঈদের আগে তিনি এমন প্রতারণার আশ্রয় নেন।

আবার সম্প্রতি চোরাই পথে সীমান্ত দিয়ে রাজস্থান থেকে আটটি গরু আনেন ইমরান। এসব গরুর প্রতিটি ১২ থেকে ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। অবৈধভাবে বিদেশ থেকে আনা এসব গরু চড়া দামে বিক্রি করছেন ইমরান।

প্রতিষ্ঠানটির সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ম্যানেজার মোহাম্মদ মহিদুল ইসলাম জানান, গরুগুলো রাজস্থান থেকে আনা হয়েছে। সৌন্দর্য এবং বাহ্যিক গঠনের কারণে এসব গরু চড়া দামে বিক্রি করা হয়েছে।

জানা গেছে, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের গোপালগঞ্জের গরুর খামারটি প্রস্তুত করে দেন ইমরান। অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে আনা বেশ কিছু গরু বেনজীরের খামারেও পাঠান ইমরান। সাদিক অ্যাগ্রোতে বেনজীরের নিয়মিত আসা-যাওয়া ছিল। জানা গেছে, বেনজীর আহমেদের বড় অঙ্কের আর্থিক বিনিয়োগ রয়েছে সাদিক অ্যাগ্রোতে। বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার যোগসাজশে গরু চোরাচালানের মাফিয়া হয়ে ওঠেন ইমরান। অভিযোগ রয়েছে, চোরাচালান বিষয়ে অন্য কোনো খামারের মালিক বা সংশ্লিষ্ট কেউ প্রতিবাদ করলে তাঁদের বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেন ইমরান। এ জন্য অনেকে মুখ বন্ধ রেখেছেন।

সাদিক অ্যাগ্রোতে কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মী অবৈধভাবে আনা গরুর বিষয়ে নানান তথ্য দিয়েছেন। তাঁরা জানান, বিদেশ থেকে যেসব গরু আনা হয়, তার বেশির ভাগই রাখা হয় আমিনবাজার ১৬ নামের এলাকায় সাদিক অ্যাগ্রোর আরেকটি খামারে। সেখান থেকে সুযোগ বুঝে নেওয়া হয় বিভিন্ন খামারে। যদিও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, থাইল্যান্ড থেকে কোনো গরু বাংলাদেশে আনার সুযোগ নেই।

গত পাঁচ বছরে থাইল্যান্ড থেকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর গরু আমদানির কোনো অনুমোদন দিয়েছে কি না জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক ডা. মো. মাহবুবুল আলম ভূঞা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার জানা মতে এ ধরনের কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তবে তাঁর কাছে প্রশ্ন করা হয়, সাদিক অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেন থাইল্যান্ডের আটটি গরু চোরাই পথে এনেছেন। এসব গরু আটটি গ্রুপ গ্রহণ করছে, এমন ভিডিও কালের কণ্ঠ’র কাছে আছে, এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এদিকে ডিএলএসের অনুমোদন ছাড়াই ২০২১ সালে ১৮টি আমেরিকান ব্রাহামা জাতের গরু দেশে এনে তোলপাড় সৃষ্টি করেন ইমরান। গরুগুলো প্রথমে ঢাকা কাস্টমস আটকের পর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাভারের কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে রাখা হয়। পরে রহস্যজনকভাবে গরুগুলো চলে যায় ইমরানের দখলে। গত ঈদুল আজহার আগে ব্রাহামা জাতের গরু বিক্রি করে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেন ইমরান। তবে এসব গরু বিক্রিতে যেমন কোনো অনুমোদন ছিল না, তেমনি দেশে ব্যক্তি পর্যায়ে ব্রাহামা জাতের পশু পালনেরও কোনো অনুমতি নেই। আইন ও নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ইমরান এসব গরুর ব্যবসা করেছেন।

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ব্রাহামা জাতের গরু পালন জাতীয় প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন নীতিমালায় অনুমোদন নেই। ফলে এই জাত পালনের কোনো অনুমোদন আমরা দিইনি। কিন্তু অবৈধভাবে আনা ব্রাহামা গরুগুলো ছিল প্রজনন অনুপযোগী। ফলে নিয়ম অনুসারে এসব প্রজনন অনুপযোগী গরু খামারিদের সংগঠনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কোনো ব্যক্তিকে দেয়া হয়নি। কিন্তু ইমরান কৌশলে এসব গরু নিজের নামে নিয়ে নিয়েছেন। আবার এসব গরু বাজারেও বিক্রির খবর এসেছে।’

এসব বিষয়ে কথা বলতে সাদিক অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেনের বেড়িবাঁধ অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মোবাইল ও হোয়াটসআপে ফোন করলেও ধরেননি তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App