ছাগলকাণ্ড
এবার গাজীপুরেও পাওয়া গেল মতিউরের ‘সাম্রাজ্য’

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ১২:৩৬ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
একের পর এক বেরিয়ে আসছে ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউর রহমানের অঢেল সম্পত্তির হিসাব। পদবির দাপটে টঙ্গীতে গড়ে তোলা শিল্প কারখানার খোঁজ পাওয়া গেল এবার। এছাড়া সেখানে দখল করে রাখা হয়েছে আরো ১৯ কোটি টাকার জমি।
কোরবানির ঈদে ছেলে ইফাতের ১৫ লাখ টাকার একটা ছাগলকাণ্ডেই সব অর্জন শেষ দুর্নীতির কারণে আলোচনার শীর্ষে থাকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ক্ষমতাধর কর্তাব্যক্তি মতিউর রহমানের। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়া অবিশ্বাস্য তথ্য বেরিয়ে আসছে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পদবির জোরে চেয়ারে বসে দুই হাতে আয় করেছেন অবৈধ অর্থ। বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, রিসোর্ট, প্লট-ফ্ল্যাটসহ বিপুল সম্পত্তি।
ঢাকা, নরসিংদী, বরিশালের পর গাজীপুরেও খোঁজ মিলছে মতিউরের সাম্রাজ্যের। টঙ্গী শহরের তিলারগাতি এলাকায় এস.কে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লি. নামের শিল্প প্রতিষ্ঠানটি মূলত মতিউর রহমানের। তবে কাগজপত্রে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও ব্যাগ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা দেখানো হয়েছে দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার এবং তার ভাই কাইয়ুম হাওলাদারের নামে। একসময় গার্মেন্টসকর্মী হিসেবে চাকরি করা কাইয়ুম রাতারাতি শিল্পপতি বনে গেছেন মতিউরের অবৈধ আয়ে। এসব বিষয়ে কথা বলতে প্রতিষ্ঠানটিতে গেলে জানা যায়, মতিউর রহমানকে নিয়ে গণ্যমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর থেকে মালিকপক্ষের কেউ আর ফ্যাক্টরিতে আসছেন না।
স্থানীয় কাউন্সিলর বলছেন, দু-এক বছরের মধ্যে এই ফ্যাক্টরিটি বহুতল ভবন করে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। পাশেই আরো প্রায় ১৯ কোটি টাকার জমি কিনে দেয়াল দিয়ে ঘিরে রেখেছেন মতিউরের ভাই।
আরো পড়ুন : এক ছাগলেই ধ্বংস করলো মতিউরের সাজানো বাগান
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫২ নং ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলর মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সময় সংবাদকে বলেন, একসময় এই ফ্যাক্টরি এবং তাদের ব্যবসা শূন্য অবস্থায় ছিল। হঠাৎ করেই তারা অর্থসম্পদে ফুলে-ফেঁপে ওঠেছেন। যে জমিটার ওপর ফ্যাক্টরি করেছেন, তার বাজারমূল্য আছে এখন ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা কাঠাপ্রতি।
এর বাইরেও গাজীপুরের পূবাইলসহ বেশ কয়েকটি স্থানে মতিউর রহমানের সম্পত্তি রয়েছে বলে জানা গেছে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসন সূত্র ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আপন ভুবন পিকনিক অ্যান্ড শুটিং স্পট নামে রিসোর্ট রয়েছে তার। এছাড়াও তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের নামে আরো জমি আছে এ এলাকায়। এলাকাটি খিলগাঁও মৌজা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। এখানেই আছে মতিউরের পরিবারের আপন ভুবন পিকনিক অ্যান্ড শুটিং স্পট নামের রিসোর্ট। স্থানীয় সূত্র জানায়, ৬০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা এই রিসোর্টের ৩৫ বিঘার মালিক তিনি ও তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ।
আপন ভুবনের নামে ৫ একর ৭৭৭ শতাংশ জমি নামজারি ও জমাভাগ করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানান, মতিউর রহমান ও লায়লা কানিজের অনেক আগে থেকে টঙ্গীতে যাতায়াত ছিল। পুবাইলের খিলগাঁওয়ের আমিনুল ইসলামের সঙ্গে তাদের সখ্য হয়। সেই সূত্রে আমিনুলের বাড়ির আশপাশে তাদের নামে ৩৫ বিঘা জমি কেনেন। পরে আরো কিছু জমি কেনা হয়। এর সঙ্গে স্থানীয়দের কাছ থেকে আরো জমি বার্ষিক ভিত্তিতে ভাড়া নিয়ে ‘আপন ভুবন’ করা হয়। সেখানে জনপ্রতি প্রবেশ ফি ১০০ টাকা।
আছে বিভিন্ন রাইডসহ অসংখ্য স্থাপনা, ১৮টি কটেজ। এক রাতের জন্য প্রতিটি কটেজের ভাড়া ৭ হাজার টাকা। রিসোর্টে সারা দিন কাটানো যায়। আছে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও। সেখানে শুটিংও হয়। পুবাইলেরই ভাদুন গ্রামটি নাটক-চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের জন্য বিখ্যাত।